ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার স্ত্রী সুষমা সিনহাও অষ্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন। এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ১৩ অক্টোবর রাতে অষ্ট্রেলিয়া যান।
মঙ্গলবার রাত এগারোটা ৫৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ-৪৪৭ নম্বর ফ্লাইটে করে অষ্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন সুষমা সিনহা। সংশ্লিষ্ট সুত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ১৩ অক্টোবর রাতে অষ্ট্রেলিয়া যান। সেদিন রাতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিমান বন্দরে গিয়েছিলেন সুষমা সিনহা। প্রধান বিচারপতিকে বিদায় দিয়ে সুষমা সিনহা বাসায় ফেরেন। এরপর গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে সুষমা সিনহাকে বিদেশ যেতে দেওয়া হয়নি।
গত ৫ অক্টোবর অষ্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করেন প্রধান বিচারপতি। সেদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বাসা থেকে বেরিয়ে যান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ও তার স্ত্রী সুষমা সিনহা। তারা গুলশান-২ এ দেশটির ভিসা সেন্টারে যান। সেখানে বেলা সাড়ে ১২ টার মধ্যে তাদের বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এরপরই তারা বাসায় ফিরে আসেন। এরপর তারা দুজনই অষ্ট্রেলিয়ার ভিসা পান। হাতে ভিসা পাওয়ার পর প্রধান বিচারপতি দেশ ত্যাগ করলেও সুষমা সিনহা ছিলেন। এ অবস্থায় রাতে তিনিও দেশ ত্যাগ করলেন।
গত শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগে প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের বলেন, আমি অসুস্থ না। আমি পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরে আসব। আমি একটু বিব্রত। আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। বিচার বিভাগের স্বার্থে, বিচার বিভাগটা যাতে কলুষিত না হয়, এ কারণেই আমি সাময়িকভাবে যাচ্ছি। আমার কারও প্রতি কোনো বিরাগ নেই। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, সরকারকে ভুল বোঝানো হয়েছে।
এ সময় তিনি অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের হাতে বক্তব্যের কপি তুলে দিয়ে তিনি বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন।
সুপ্রিমকোর্টের ২৫ দিনের অবকাশ শেষে প্রথম কার্যদিবসেই (৩ অক্টোবর) অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ২ অক্টোবর এক মাসের (৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর) ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে চিঠি পাঠান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
রাষ্ট্রপতি ওই ছুটি মঞ্জুরও করেন। পরে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে সরকারি আদেশের (জিও) প্রসঙ্গ এলে মঙ্গলবার সুরেন্দ্র কুমার সিনহা রাষ্ট্রপতিকে জানান, তিনি ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে চান। বিষয়টি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর গত বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই দিন সাংবাদিকদের জানান, প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যেতে চান।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়া সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেয়ার পর থেকে বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের এক ধরনের টানাপোড়েন শুরু হয়, যা পর্যায়ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে প্রকাশ্যে আসে।