দেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়া

লক্ষাধিক নেতা-কর্মীর অভ্যর্ত্থনায় সিক্ত হয়ে ৯৪ দিন পর দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

আজ বুধবার সন্ধ্যা ৫টা ৩৭ মিনিটে তাকে বহনকারী গাড়ি যখন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে মূল সড়কে এসে পৌঁছায়, তখন পিঁপড়ার মতো হাজার হাজার নেতা-কর্মী আনন্দে উদ্বেলে ফেটে পরে। চারিদিক উত্তাল হয়ে উঠে শ্লোগানে শ্লেগানে। বিমাবন্দরের গোল চত্ত্বর থেকে খিলক্ষেতের দিকে যতদূর চোখ যায়, শুধু দেখা যায় ব্যানার ফেস্টুন আর প্লাকার্ড। এসময় হাস্যেজ্জ্বল বিএনপি প্রধান হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন।

বেলা ২টার পর থেকে বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হওয়া অগনিত নেতা-কর্মীদের ভিড় ঠেলে গুলশানের বাসায় পৌঁছতে খালেদা জিয়ার দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। রাত ৮টার ৫ মিনিট আগে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রোডের বাসা ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান তিনি।

গত ১৫ জুলাই চিকিৎসা ও পরিবারের সাথে সময় কাটাতে লন্ডনে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। এটি তার একান্ত ব্যক্তিগত সফর হলেও লন্ডনে যাওয়ার পর দেশের অভ্যন্তরে নানা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন না, এমন বক্তব্যও আসে ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়না জারি করা হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ফলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। নেত্রীকে বরণ করে নিতে আজ শোডাউনে এর প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘জেল জুলুম হুলিয়া, নিতে হবে তুলিয়া’, ‘শেখ হাসিনার দিন শেষ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ’ এ ধরনের শ্লোগান উঠে নেতা-কর্মীদের কণ্ঠে।

লন্ডন থেকে দুবাই হয়ে অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বিকেল ৫টা ৭ মিনিটে বিমাবন্দরে অবতরণ করেন খালেদা জিয়া। বিমাবন্দরের প্রয়োজনীয় কাজ শেষে ৫টা ৫০ মিনিটে বেরিয়ে আসেন তিনি। এসময় তার সাথে ছিলেন একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্ত্বার।

ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ভিআইপি লাউঞ্জে পুলিশ সিনিয়র নেতাদের প্রবেশ করতে না দেয়ায় তারা বিমানবন্দর মসজিদের কাছে সড়কের এক পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান এবং খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি এলে ফুল দিয়ে নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমূখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দর মোড় থেকে বনানীর কাকলী পর্যন্ত সড়কের এক পাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমবেত হয়। বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সিনিয়র নেতা, ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীরা ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ ব্যানার হাতে নানা সাজে সজ্জিত হয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানায়। কারাবন্দী কিংবা মামলার কারণে দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য হওয়া নেতাদের কর্মীরা খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তাদের প্লাকার্ডও বহন করেন।

বিএনপি প্রধানের আগমন উপলক্ষে বিমান বন্দরের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জলকামানের দুটি গাড়ি, প্রিজন ভ্যানসহ পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ওই এলাকায় তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও বিমাবন্দরের সড়কে যাওয়ার এন্ট্রি পয়েন্টগুলোকে পুলিশি নজড়দারি ছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, তাদের নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িতে পুলিশ বাঁধার সৃষ্টি করেছে। আমাদের নেত্রী দেশে ফিরবেন বলে দলের নেতা-কর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে। অথচ আপনারা পুলিশ তাদেরকে বাঁধা দিচ্ছে। বিমানবন্দর সড়কে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাতে লোক সমাগম না হয়। তারপরও ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে জনগণ দেশনেত্রীর আগমনে উদ্বেলিত।

মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে সরকার রাজনৈতিক মনোভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। কিন্তু এই পরোয়ানাকে তিনি ভয় পান না। নেত্রী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তিনি আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পন করে ওইসব মামলায় জামিন নেবেন।

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক সমাগম ঘটিয়ে চেয়ারপারসনকে বরণ করা হয়েছে। বিএনপি, ঢাকা মহানগর, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, কৃষখ দল, তাঁতী দলসহ ঢাকার আশপাশের জেলা গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী থেকেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা অংশ নেয় শোডাউনে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল মান্নান, মীর মো: নাসির উদ্দিন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস কাদের চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, রুহুল আলম চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, মো: শাহজাদা মিয়া, লুৎফর রহমান খান আজাদ, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিলকিস জাহান শিরিন, সানাউল্লাহ মিয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আবু নাসের মো: রহমাতুল্লাহ প্রমুখ। অঙ্গসংগঠনগুলোর মধে যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করিব বাদরু, মাহবুবুল হাসান পিঙ্কু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ওলামা দলের মাওলানা এম এ মালেক, নেসারুল হক, জাসাসের আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, হেলাল খান, শায়রুল কবির খান, ঢাকা মহানগর বিএনপির কাজী আবুল বাসার, মুন্সী বজলুল বাসিত আঞ্জু, ইউনুস মৃধা, আলহাজ্ব এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন, আহসান উল্লাহ্ হাসান, চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন রতন, রবিউল আউয়াল, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, হাবিবুর রশিদ হাবিব, চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, আ.ন.ম সাইফুল ইসলাম, এ.জি.এম সামসুল হক, এম কফিল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান, তানভীর আহমেদ রবীন, আলী রেজাউল রহমান রিপন, সাঈদুর রহমান মিন্টু, এবিএম আব্দুর রাজ্জাক, সোহেল রহমান, চেয়ারম্যান বেল্লাল হোসেন, মোঃ ফরহাদ হোসেন, মোঃ ইকবাল হোসেন, হাজী দুলাল, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ অংশ নেন শোডাউনে।

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।