খালেদা জিয়াকে বরণ করতে বিমানবন্দর এলাকা জনসমুদ্র

টানা তিন মাসের বেশি সময় চিকিৎসার পর লন্ডন থেকে দেশে ফিরে লাখো নেতাকর্মীর ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিমানবন্দরে তার অবতরণের সময় ঘনিয়ে আসার ঠিক আগ মুহূর্তে জনসমুদ্রে পরিণত হয় বিমানবন্দর সড়ক ও আশেপাশের এলাকা। নেতাকর্মীদের পদচারণায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না ওই এলাকায়। নেতাকর্মীদের যেন ঢল নেমেছিল।

বেগম জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রখর রোদ উপেক্ষা করে হাজারো নেতাকর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিমানবন্দর সড়কে জমায়েত হতে থাকেন। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, ওলামা দল ও ঢাকা মহানগর ছাড়াও ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন বেশ কয়েকটি জেলার হাজার হাজার নেতাকর্মী তাদের দলের চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে আসেন। এসব নেতাকর্মীর মুহুর্মুহু স্লোগান আর করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ পিকআপ ভ্যান নিয়ে মাইকিং করেছে, যাতে রাস্তায় গাড়ি চলাচল আটকে না যায়।

আজ বিকেল সোয়া ৫টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের কিছুক্ষণ পর তিনি ভিআইপি টার্মিনাল হয়ে বের হন খালেদা জিয়া। এরপর তিনি সাড়ে পাঁচটার দিকে গাড়িতে ওঠে গুলশানে বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হন। নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় থাকায় গাড়ির গতিও শ্লথ হয়ে যায়।

জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা নিয়ে দলীয় কোনো কর্মসূচি ছিল না বিএনপির। কিন্তু নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে দুপুরের পর থেকেই বিমানবন্দর সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে শুরু করেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বিমানবন্দর গোলচত্বরে অবস্থান নেয়ায় বিকাল ৪টা থেকে সড়কে যান চলাচলও কিছুটা বিঘ্নিত হয়।
বিমানবন্দর সড়কের পূর্ব পাশে জমায়েত হওয়া বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা ফুটপাথে অবস্থান নিলেও বিকেল সাড়ে ৪টার পর তারা মূল রাস্তায় নেমে এসে মিছিল করতে থাকে এবং জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় থেকে আগত নেতারা তাদের কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট অবস্থান নেন।

শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমানের নেতৃত্বে সিরাজুল হক খান, মো: সালাম শেখ, মো: মহিউদ্দিন, শহীদুল্লাহসহ শতাধিক নেতাকর্মী অবস্থান নেন কাওলা এলাকায়।

ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন, দীর্ঘদিন পর আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরেছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত এবং ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে দূর থেকে ছুটে এসেছেন। আমরা মনে করি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলবে এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।

কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অবস্থান নেয় জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীয় মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিমানবন্দর গোল চত্ত্বরের সামনে অংশ নেন মালয়েশিয়া বিএনপির প্রচার সম্পাদক মামুন বিন আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে নান্দাইল (ময়মনসিংহ-৯) উপজেলা বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী। বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাতে আজ সকালে ঢাকায় আসেন মামুন।

তিনি অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, দেশনেত্রী দেশের জনগণের মাঝে ফিরেছেন। আজকে লাখ লাখ মানুষ ও দলের নেতাকর্মী তাকে স্বাগত জানাতে এসেছেন। আমিও ছুটে এসেছি। এর চেয়ে বেশি আনন্দ আর কি হতে পারে?

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে শুরু করে বিমানবন্দর সড়কে দেখা যায়, বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালের ফটকের সামনের রাস্তার দুইপাশে বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। মহাসড়ক থেকে বিমানবন্দরে প্রবেশের রাস্তায়ও জন-সাধারণের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে পুলিশ খালেদা জিয়ার ফেরা উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তার কথা আগেই জানিয়েছিল। বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সাদা টি-শার্ট পরিধান করে বেগম জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা বের করেন। কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অবস্থান নেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও রুপগঞ্জ, আড়াইহাজার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার নেতাকর্মীরা। একইস্থানে দলীয় ব্যানার নিয়ে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের বিভিন্ন শাখার হাজারো নেতাকর্মী।

বিমানবন্দর থেকে শুরু করে জিয়া কলোনির মোড় পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশে ঢাকার বাইরে ঠাকুরগাঁও, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, যশোর জেলা ও বিভিন্ন থানার কয়েক হাজার নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানায়।

কাওলা এলাকায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র নেতা নবীউল্লাহ নবী, মীর হোসেন মিরু এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন।

বিমানবন্দর সড়কে যানজট
খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে রাজধানীর বিমান থেকে বনানীর কাকলী পর্যন্ত সড়কে হাজার হাজার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়ায় ওই সড়কে যান চলাচলের গতি একেবারেই কমে যায়। ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে যান চলাচলও থমকে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পথচলা মানুষেরা।

বেলা তিনটার আগে থেকেই দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে বিমানবন্দর সড়কের আশেপাশে। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু সড়কে যানবাহন চলাচল একেবারেই থমকে যায়। বিমানবন্দরের সামনে গোলচত্বর থেকে কাওলা পর্যন্ত রাস্তায় মিছিল করেন দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী। এতে বনানীমুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উত্তরামুখী যানবাহনও স্থবির হয়ে ওই সড়কের পশ্চিম পাশও আটকে যায়। কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত গাড়ির দীর্ঘ জট চোখে পড়ে। তবে মাঝে মাঝে যানবাহন চললেও তার গতি খুব ধীর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ, শেওড়া, বনানীর কাকলী মোড় পর্যন্ত নেতাকর্মীরা রাস্তার ডান পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাতে ছিলো বিভিন্ন ধরণের ব্যানার, ফেস্টুন, ছোট ছোট পতাকা। কয়েকটি জায়গায় দেখা গেছে ব্যান্ড পার্টি। বিমানবন্দর সড়কের যান চলাচলের ধীর গতির চাপ গিয়ে পড়েছে টঙ্গী পর্যন্ত। দূরপাল্লার গাড়িগুলো চলেছে শ্লথ গতিতে। খালেদা জিয়ার আগমনকে কেন্দ্র করে দুপুর থেকেই বিমানবন্দরসহ এই সড়কে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাখা ছিল জলকামান, প্রিজন ভ্যান ও রায়ট কার এবং দাঙ্গা পুলিশ। পুলিশ সদস্যরা হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করে নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বারবার অনুরোধ করতে দেখা গেছে। বিমানবন্দরের ভেতরে পুলিশ ছাড়াও সোয়াট, ব্যাটালিয়ান পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। সিনিয়র নেতা ছাড়া কাউকে বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ফলে বিমানে যাত্রীদের প্রবেশ করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।