বিএনপি-জামায়াত জোট হলে সাতক্ষীরা-৪ আসন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে আ’লীগ

বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম সুন্দরবনঘেঁষা শ্যামনগর উপজেলা এবং কালীগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসন গঠিত। এই এলাকায় কোনো দলের একচ্ছত্র আধিপত্য নেই। বিভিন্ন সময় কমবেশি সব দলের প্রার্থীরাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের স্বাদ পেয়েছে। তবে এ আসনে জাতীয় পার্টির বড় একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। এর আগে শ্যামনগর উপজেলা নিয়েই আসনটি ছিল। ২০০৮ সালের সীমানা পুনঃনির্ধারণের সময় কালীগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন যুক্ত করা হয় সাতক্ষীরা-৪ আসনে। তবে নতুন করেও সীমানা নির্ধারণের একটা চেষ্টা চলছে কোনো কোনো মহল থেকে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গেছে।

 ১৯৭৩ সালে এ আসনে প্রথম জয় পায় আওয়ামী লীগ। এর পর ১৯৯৬ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের দশম সংসদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি তৃতীয় বারের মতো এ আসনে জয়লাভ করে। এর আগে ১৯৭৯ এবং ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে। এছাড়া ১৯৮৬, ১৯৮৮ এবং ২০০৮-এর নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জয়লাভ করে। ১৯৯১ এবং ২০০১-এ এই আসনটি লাভ করে জামায়াত। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন আওয়ামী লীগের এসএম জগলুল হায়দার। আসনটিতে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। চলছে নানা হিসাব-নিকাশও।

বর্তমান এমপি ও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম জগলুল হায়দার আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হতে চাইছেন। এরই মধ্যে তিনি মাঠে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। নির্বাচনে আগ্রহী শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলন এবং জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সদস্য শফিউল আজম লেনিন। নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে কথা হয় জগলুল হায়দারের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি সব সময় এলাকায় মানুষের সঙ্গে আছি, তাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আইলা উপদ্রুত এ উপজেলার আনাচে-কানাচে উন্নয়নের স্বাক্ষর রয়েছে আমার। দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, আগামীতেও দাঁড়াব। বলতে পারেন শ্যামনগরের উন্নয়নের রুপকার আমি। মনোনয়ন পেলে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী জয়ের আশা করতে পারবেন না।’

এলাকায় জাতীয় পার্টিরও একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাত্তার মোড়ল দলীয় সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যুগান্তরকে সাত্তার মোড়ল বলেন, ‘২০১৪ সালে আমিই জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জোটগত নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেই। এবার ফের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। মনোনয়ন পেলে জাতীয় পার্টির ভোটব্যাংক কাজে লাগাতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পেলে কিছু প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেই মাঠ থেকে সরে দাঁড়াবেন।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলন দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রয়েছেন। ১৯৭০-এ প্রাদেশিক সদস্য, ১৯৭২-এ গণপরিষদ সদস্য এবং ১৯৯৬ তে বিজয়ী সংসদ সদস্য একে ফজলুল হকের ছেলে তিনি। পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে এ প্রতিবেদককে  বলেন  ‘শ্যামনগর ও কালীগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আমার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারাও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। এজন্য মনোনয়নের প্রত্যাশা করছি। মনোনয়ন দিলে অন্য কোনো দলের প্রার্থী জিততে পারবেন না। ১৯৭০ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সুসময় এবং দুঃসময়ে আমার বাবা একে ফজলুল হক দলের নেতৃত্ব দিয়ে কাজ করেছেন। আমি তার ছেলে হিসেবে সে পথই ধরেছি। বাবার ইমেজ কাজে লাগাতে চাই। শ্যামনগরের সহিংসতা রোধে আমি দলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি।’ জোটগত নির্বাচন হলেও আমি আশাবাদী।

আসনটির আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আজম লেনিন বলেন, ‘এবার আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা হিসেবে আমি মনোনয়ন পাব বলে আশা করছি। আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতি সঙ্গে জড়িত। আমি বিভিন্ন সময়ে সরকারের দমন-পীড়নের শিকার হয়েছি। এই দিকটি বিবেচনায় এনে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আসনটি আওয়ামী লীগের কাছেই থাকবে।’

বিএনপির পক্ষ থেকে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য কাজী আলাউদ্দিন। কয়েকটি দলবদল করে তিনি এখন বিএনপিতে। কথা হয় কাজী আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার মনোনয়ন নিশ্চিত হয়ে আছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। ২০০১ সালে এমপি হওয়ার পর এলাকার যে উন্নয়ন করেছি তা জনগণ মনে রেখেছেন। দুর্নীতি করিনি, জেলেও যাইনি। প্রার্থী হলে বিএনপি ছাড়াও জামায়াতের নীরব ভোট পাব।’ কাজী আলাউদ্দিন আরও জানান, বিএনপি-জামায়াত জোট রাজনৈতিকভাবে এক মঞ্চে থাকলে অন্য কোনো দল বা প্রার্থী টিকতে পারবে না।

শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাস্টার আবদুল ওয়াহেদ প্রার্থী হতে চান। তিনিও এলাকায় কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছি। মনোনয়নের প্রত্যাশা করছি। আমাকে দল মনোনয়ন দিলে জয়লাভ করতে পারব।’

আসনটির বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিজয়ী জামায়াত প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলাম আগামী নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য ভেতরে ভেতরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। চলছে সাংগঠনিক তৎপরতাও। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি যদি প্রার্থী হন সেক্ষেত্রে বিএনপির কাজী আলাউদ্দিন কিছুটা বেকায়দায় পড়তে পারেন। জানতে চাইলে গাজী নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘সাতক্ষীরার চারটি আসনেই জোটগতভাবে আমার দল প্রার্থী দেবে। এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। তবে এজন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।’

ইতিমধ্যেই নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন কেন্দ্রীয় কৃষক জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জেলা জাসদের সহসভাপতি সাতক্ষীরার দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী। যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে প্রত্যাহার করি এই শর্তে যে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এই আসনে প্রার্থী দেবে না। এবার সেই প্রত্যাশায় মনোনয়নের অপেক্ষায় আছি। মনোনয়ন পেলে আমি জিতব।’

২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির টিকিটে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন এইচএম গোলাম রেজা। কিন্তু কিছুদিন পর সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় গোলাম রেজা দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর থেকে তিনি শ্যামনগরের রাজনৈতিক মাঠে অনুপস্থিত থাকলেও কিছুদিন ধরে পোস্টার-ব্যানার টানিয়ে এবং ইফতার পার্টি দিয়ে তিনি আবারও জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসছেন বলে জানান দিয়েছেন। তার নজর এখন প্রার্থিতার দিকে।

শ্যামনগরের ১২টি এবং কালীগঞ্জের ৮টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮১ হাজার ৫০০। এর মধ্যে হিন্দু ভোটার প্রায় ৬০ হাজার। জোটগতভাবে আওয়ামী লীগ আসনটি পাওয়ার জন্য জোর লড়াই করে যাচ্ছে। তবে জাতীয় পার্টিকে মাঠে কম দেখা গেলেও বিএনপি প্রচারে পিছিয়ে নেই। এছাড়া জামায়াতের নীরব ভোট কোনদিকে যাবে তাও স্পষ্ট নয়।jugantor.com

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।