ক্রাইমবার্তা রির্পোট::সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ টানা বর্ষনে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল।রাস্তা-ঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি, কলারোয়া, তালা, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে।
এ সব অঞ্চলের হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। এর সাথে যোগ হয়েছে রাস্তার দুর্ভোগ। সগ¯্রাধিক হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ছোট-বড় অন্তত কয়েকশ মৎস্য ঘের। রাস্তা-ঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তবে ছুটির দিনে বৃষ্টিতে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। বৃষ্টির প্রচন্ডতায় ঘর থেকে বের হতে পারছে না মানুষজন। শুক্রবার হলেও বৃষ্টির কারণে বন্ধ ছিলো শহর-গ্রামের অধিকাংশ দোকানপাট। সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি, কলারোয়া, তালা, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের অনেক নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। অনেক ছোট ছোট রাস্তার উপর পানি উঠে গেছে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ অবস্থান করছে। এর প্রভাবে শনিবারও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
জেলার নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্কুল-কলেজে হাঁটু পানি জমেছে। পানিতে ডুবেছে শহরতলীর মাছের ঘের। শনিবার সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল, কামাননগর, মধুমল্লোার ডাঙ্গী, বকচরা, রসুলপুর, পুরাতন সাতক্ষীরা, রথখোলার বিল, ইটাগাছাসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে তা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেছে। বৃষ্টি যদি আরো কয়েকদিন চলে তাহলে জেলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাস্তায় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। পানি জমে গেনে অনেক স্থানে।
সূত্র আরো জানায়, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় জেলার সহ¯্রাধিক মৎস্য ঘের পানিতে ভেসে গেছে। একাকার হয়ে গেছে সবকিছু। বাড়ি-ঘরের পানি উঠে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপকিল্পিত বেড়িবাধ দিয়ে মৎস্য ঘের তৈরী করে পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করায় এই জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকজন প্রভাবশালী ঘের মালিকরা পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করে চিংড়ি ঘের করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘের মালিকরা পানি নিস্কাশনের কোন পথ রাখেননি। যার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই এসব এলাকার বাড়ি, ঘর ও রাস্তায় পানি উঠছে। তাই মাছের ঘের কেটে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা অতীব জর”রী। আর তা না হলে এলাকার হাজার হাজার মানুষ স্থায়ী ভাবে পানিবন্দি হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে, প্রবল বর্ষনের কারণে কলারোয়ায় প্রায় ৩০/৩৫ হেক্টর জমির আমন ধান পানির নিচে রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। টানা বর্ষনে প্রায় ২/৩ ফুট পানিতে ফসলি জমির ক্ষেত ডুবে থাকায় ফসলি জমির আমন ক্ষেতের পাকা ধান পানির নিচে।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাসীন আলী জানান, প্রবল বর্ষণের আমন ধানের ক্ষেত কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একই অবস্থা আশাশুনি, তালা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন।
সূত্র আরো জানায়, সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা, বল্লী, লাবসা, ফিংড়ি, ধুলিহর ও ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের বেত্রাবর্তী সংলগ্ন কিছু এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। জেলার সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশাশুনি ও শ্যামনগরের খোলপেটুয়া নদীর কয়েকটি স্থানে ভেড়িবাধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে এখন নিম্নচাপ অবস্থান করছে। এর প্রভাবে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। জেলায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শুক্রবার দিনভর বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। রাতেও ভারি থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়।শনিবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্ঠি হওয়া অব্যাহত আছে।
শহরের মাছখোলা গ্রামের বাসিন্দা আমিনুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা শহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। জেলার নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্কুল-কলেজে হাঁটু পানি জমেছে । বেশির স্কুলে শনিবার শিক্ষার্থি না আসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।