খানা-খন্দকে ভরা সাতক্ষীরার প্রধান সড়ক

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: তিন দিনের টানা বৃষ্টি, ঠিকাদারের গড়িমসি, সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহেলা ও রাজনৈতিক নেতাদের কমিশনের কারণে সাতক্ষীরার বেশির ভাগ সড়কের অবস্থা এখন বেহাল দর্শা। প্রধান সড়কগুলো 32খানাখন্দে ভরা। মহাসড়কগুলো এখন জনদুর্ভোগের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক, সাতক্ষীরা-যশোর সড়ক, সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক ও সাতক্ষীরা শহরের অধিকাংশ সড়কের পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। খানা-খন্দে চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এ দুর্ভোগের জন্য জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা ও অপরিনামদর্শিতাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলার সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা গত আট বছরে কোন ভূমিকাই রাখেননি। এর মধ্যে সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হক পাঁচবছর মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের বড় অংশ বয়ে গেছে তার সংসদীয় এলাকা দিয়ে। কিন্তু চলাচলের অযোগ্য সড়ক উন্নয়নে তার কোন ভূমিকা আজও চোখে পড়েনি জেলাবাসীর। যদিও তার প্রচেষ্টাতেই সাতক্ষীরা পেয়েছে একটি মেডিকেল কলেজ।
সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবিও রাখতে পারেননি কোন উজ্জল দৃষ্টান্ত। শহরের প্রধান সড়ক সহ সাতক্ষীরা খুলনা সড়ক যেন মরণ ফাঁদ।
আর কালিগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসনের উপর দিয়ে বয়ে চলা কালিগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কের করুণ অবস্থাই বলে দেয় স্থানীয় সংসদ সদস্য স ম জগলুল হায়দারের ভূমিকা। জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের মতে, সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের ৬৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৮-৯ কিলোমিটার, সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের ২৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৭-৮ কিলোমিটার চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
আর সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার এই বেহাল দশার কারণেই বিকশিত হতে পারছে না সাতক্ষীরার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প। যদিও একমাত্র সাতক্ষীরা দিয়েই সড়কপথে সুন্দরবন দেখা যায়।
স্থানীয় একাধিক পর্যটক গাইড নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাই যারাই আসে, সবার মুখে একই কথা, রাস্তা ভাল না। আসলেই তো, সড়কের উন্নয়নে গত এক দশকে কোন পদক্ষেপই চোখে পড়ে নি। মাঝে-মধ্যে ইট-পাথর দিয়ে দায়সারাভাবে পট্টি দেওয়া হয়, কিন্তু তা থাকে এক সপ্তাহ।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবুল বলেন, সাতক্ষীরার একটি সড়কও চলাচলের উপযোগী নেই। এখানকার সংসদ সদস্যরা বিষয়টি দেখেন ওনা, শোনেন ওনা। সরকার জেলায় অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও একমাত্র সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাই সব উন্নয়ন খেয়ে ফেলছে।
সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মুনজুরুল করিম বলেন, ভালভাবে সংস্কারে যে পরিমান বরাদ্দ প্রয়োজন, তা নেই।
সূত্র জানায়, শহরের মেডিকেল কলেজ থেকে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত সড়কের জন্য টেন্ডারের পরে কাজ পান মেসার্স মহিউদ্দীন বাঁশির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সড়কের কার্যাদেশ দেওয়া হয় চলতি বছরের মে মাসে। কিন্তু ঠিকাদারের গড়িমসি, সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহেলায় কাজ শুরু হয়নি।
অন্যদিকে সাতক্ষীরা বিজিবি ক্যাম্পের দুই গেটের মাঝখানের রাস্তার অংশটুকু মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন কয়েকটি গাড়ি, ভ্যান উল্টে যাচ্ছে। রাস্তার উপর বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার উপর কাদা উঠে গেছে। এটা দেখে বুঝার উপায় নেই এটা পিচ রাস্তা না কাচা রাস্তা।
সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, আমাদের শহরের এই রাস্তাটি দিয়ে সাতক্ষীরার ২০ লক্ষ মনুষ যাতায়াত করে থাকে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাস্তায় সাধারণ জনগণ যেভাবে কষ্ট পাচ্ছে আমি নিজে তা অবলোকন করেছি। প্রধান সড়ক সংস্কার শুরু হয়েছে। আশা করি আবহাওয়া ঠিক হয়ে গেলে পুনরায় কাজ শুরু হবে। এছাড়াও অন্যান্য চলাচলের অনুপযোগি রাস্তাগুলোর টেন্ডার হয়ে গেছে। বর্ষার পরেই কাজ শুরু হবে।
শুধুমাত্র সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে সার্কিট হাউজ মোড় পর্যন্ত সাড়ে ৫ কি. মি. রাস্তা ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ ধরা হয়েছে। কাজ ও শুরু হয়েছে।

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।