ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ১৫ প্রশ্নফাঁস নিয়ে ধূম্রজাল -ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি

ক্রাইমবার্তা  র্রিপোট:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে ১৫ জনকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদের মধ্যে ১২ ভর্তিচ্ছুকে পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আটক করা হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির এক ছাত্রলীগ নেতাসহ জালিয়াত চক্রের তিন হোতাকে পরীক্ষার আগের রাতে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সিআইডির বিশেষ টিম। তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল থেকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটক ১২ ভর্তিচ্ছুকে এক মাস করে সাজা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া চক্রের তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আটককৃত ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ভর্তিচ্ছু ১২ জন হলেনÑ নূর মোহাম্মদ মাহবুব, ফরহাদুল আলম রানা, ইশরাক হোসেন রাফি, আবদুল্লাহ আল মুকিম, রিশাদ কবির, আসাদুজ্জামান মিনারুল, ইশতিয়াক আহমেদ, জয় কুমার সাহা, তারিকুল ইসলাম, নাসিরুল হক নাহিদ, রেজওয়ানা শেখ শোভা ও মাশুকা নাসরীন। বাকি তিনজনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী রয়েছেন। তারা জালিয়াত চক্রের হোতা। ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগ থেকে তাদের খুঁজছিল অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই হোতাদের অন্যতম হলেন ছাত্রলীগের নেতা মহিউদ্দিন রানা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক। মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পরীক্ষা জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে দেয়ার শর্তে তাদের সাথে ৩-৭ লাখ টাকার চুক্তি করে থাকেন। অবৈধ এ অর্থ দিয়ে আরামপ্রদ জীবনযাপন করছেন তিনি। চক্রের অন্য সদস্য হলেন ফলিত রসায়ন বিভাগের আবদুল্লাহ আল মামুন। অন্য একজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
অভিযুক্তদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, ‘গত রাতে জালিয়াত চক্রের তিনজন এবং আজ ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির সময় ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনে মামলা করা হবে।’
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এক হাজার ৬১০টি (বিজ্ঞানে-১১৪৭টি, বিজনেস স্টাডিজে-৪১০, মানবিকে-৫৩টি) আসনের বিপরীতে মোট ৯৮ হাজার ৫৪ জন ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রী আবেদন করেন। সেই হিসেবে প্রতি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছে ৬১ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের ৮৬টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পরীক্ষা চলাকালে ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, নবনিযুক্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো: এনামউজ্জামান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ক, কলা অনুষদভুক্ত খ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত গ ও চারুকলা অনুষদভুক্ত ‘চ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে।
প্রশ্নফাঁস নিয়ে ধূম্রজাল :
ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর ই-মেইলে প্রশ্নপত্রের ইংরেজি অংশের ২৪টি প্রশ্নের ছবি আসে। ওই প্রশ্নের সাথে অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের মিল রয়েছে। এ ছাড়া ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে রাতেই প্রশ্নের একটি কপি ভর্তিচ্ছুদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও এর কোনো সত্যতা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দাবি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। এ দিকে যে মেইল থেকে কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীকে প্রশ্নের ছবি পাঠানো হয়েছে, সেটি ছাড়া অন্য কারো থেকে প্রশ্নফাঁস হয়েছে এমন অভিযোগ পাননি বলে জানান ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন প্রিন্ট করা হয় সকালে। তাই আগের রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্য ও অভিযোগের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে এ প্রশ্নফাঁসের গুঞ্জন উঠেছে।
তবে এ ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। তিনি বলেন, যে মেইল থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ, তার উৎস কী? আর এত রাতে প্রশ্নফাঁস হলে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করল না কেন? পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এমন অভিযোগ করার কারণ কী? এর বেশি মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, এটি ভুয়া একটি খবর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন প্রিন্টই হয় সকালে সেখানে আগের রাতে প্রশ্নফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

Check Also

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।