বিবিসি ও নিউ ইয়র্ক টাইমস;
সাবেক দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জর্জ ডব্লিউ বুশ যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা প্রচ্ছন্নভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বের সমালোচনা করেন। ‘বিভাজন’ ও ‘শঙ্কার’ রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করতে আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওবামা। অন্য দিকে জনজীবনে ‘গুণ্ডামি ও কুসংস্কারের’ সমালোচনা করেছেন বুশ।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে তারা আলাদাভাবে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলেছেন। সাবেক এই রাষ্ট্রনায়কেরা তাদের উত্তরাধিকারী ট্রাম্প সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। তবে ট্রাম্প তার দুই পূর্বসূরির সমালোচনা সম্পর্কে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। ওবামাকেয়ার বাতিলে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা ও প্যারিসের জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়া এবং বিতর্কিত ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’র পর থেকেই ওবামা তার নীরবতা ভাঙেন।
নিউ ইয়র্কের নিউ জার্সিতে ডেমোক্র্যাটদের একটি অনুষ্ঠানে ওবামা বলেন, বিশ্বের কাছে আমেরিকানদের বার্তা পাঠাতে হবে যে, আমরা একটি ‘বিভাজনের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা একটি শঙ্কার রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করছি’।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সেই একই বিভাজনের পুরনো রাজনীতি ভাগাভাগি করতে পারি না, যা আমরা বহুবার আগে দেখেছি।’ ওবামা বলেন, ‘বর্তমানে রাজনীতি দেখে মনে হচ্ছে আমরা বিছানায় পড়ে আছি। সেখানে শুয়ে লোকেরা ৫০ বছর আগের রাজনীতি দেখছে। এটা ২১ শতক নয়, ১৯ শতক নয়।’
নিউ ইয়র্কে আলাদা এক অনুষ্ঠানে বুশ বলেন, ‘গোঁড়ামিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আমাদের রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও পুরোদস্তুর মিথ্যার জন্য অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের পক্ষে সমর্থনের তীব্রতা হ্রাস পাওয়ার কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছেÑ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয়তাবাদকে নৃতাত্ত্বিকতায় বিকৃত করতে দেখেছি। অভিবাসন সর্বদা আমেরিকাতে গতিশীলতা নিয়ে এসেছে, তা ভুলে যাওয়া হচ্ছে।’
সাবেক এই প্রেসিডেন্টদ্বয় এখনো পর্যন্ত ট্রাম্পের নীতিগুলো সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য এড়িয়ে গেছেন।
গত বছর তার নির্বাচনের আগে ওবামা ও বুশ উভয়ের সমালোচনা করেছিলেন ট্রাম্প। তাদের প্রত্যেককে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সম্ভবত ‘সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে অবহিত করেছিলেন ট্রাম্প। এ জন্য গত বছরে মার্কিন নির্বাচনের সময় থেকেই ট্রাম্পের প্রতি বিরক্ত বুশ। তিনি নিজের রিপাবলিকান দলের প্রার্থী থাকলেও ট্রাম্পকে ভোট দেননি, যা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছিল।
বুশ বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সরকারের ওপরে মানুষের আস্থা কমেছে। প্রয়োজনের সময়ে প্রশাসন মুখ থুবড়ে পড়ছে। অর্থনৈতিক উন্নতিতে নানা বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। অসন্তোষ বাড়ছে, ফলে বিরোধের সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রের অবকাশ সৃষ্টি হচ্ছে, যা কাম্য নয়।
এই অনুষ্ঠানে বাকি অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বুশের সহধর্মিণী লরা বুশ, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস ও জাতিসঙ্ঘের বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি।
কাতার সঙ্কটের জন্য সৌদি জোটকে দুষলেন টিলারসন
আলজাজিরা
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে যে কূটনৈতিক সঙ্কট চলছে তা খুব শিগগিরই সমাধান হবে না বলে মনে করছেন তিনি। এই সঙ্কট সমাধানে কোনো ধরনের উন্নতি না হওয়ার পেছনে তিনি সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকেই দায়ী করেছেন।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন টিলারসন। দেশগুলোর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বা সঙ্ঘাত তৈরি হয়েছে তা সমাধানে মধ্যস্ততা করতে শুক্রবার সৌদি সফরে গেছেন টিলারসন। এই সফরের মাত্র এক দিন আগেই সৌদি জোটের বিপক্ষে সুর চড়ালেন তিনি।
ব্লুমবার্গকে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলে মনে করছি না আমি। কিছু দেশ এ বিষয়ে সত্যিকার অর্থেই অনিচ্ছুক। তারা এই সঙ্কট সমাধানে যুক্ত হতে চায় না।
গত ৫ জুন তারিখে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইন কাতারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। সে সময়ই কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ ও অর্থ সহায়তা এবং ইরানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ এনে দেশটির সাথে স্থল, আকাশপথ ও সাগরপথে নিষেধাজ্ঞা জারি করে চার আরব দেশ। তবে সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে দোহা।
গত ২২জুন আরব দেশগুলো কাতারের ওপর ১৩ দফা দাবি পেশ করে। আলজাজিরা বন্ধ, ইরানের সাথে সম্পর্ক সীমিত, তুর্কি সেনা ঘাঁটি প্রত্যাহারসহ বেশ কিছু দাবি জানানো হয়।
কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে দোহা। কাতারের সাথে আরব দেশগুলোর প্রায় চার মাস ধরে এই অচলাবস্থা চলছে। কুয়েত এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপের পরেও এই অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। টিলারসনও এ বিষয়ে কথা বলতে জুলাই মাসে সৌদি আরবে সফর করেছেন।
টিলারসন বলেন, এটা চার আরব দেশের নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে। তিনি আরো বলেন, তাদেরকে একত্র করতে আমরা যেকোনো ধরনের কাজ করতে প্রস্তুত, কিন্তু এই ক্ষেত্রে এটা নেতৃত্ব দেয়া আরব দেশগুলোর ওপরই বেশি নির্ভরশীল।