ক্রাইমবার্তা ডেস্কর্রিপোট:প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার কাজে আর ফিরতে পারবেন না বলে মনে করেন আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল মতিন খসরু।
তিনি বলেছেন, ‘বিচারক যদি কখনও বিতর্কিত হন, দুর্নীতির অভিযোগ থাকে, ওনার সাথে সাথে পদত্যাগ করতে হয়। অন্যান্য বিচারপতিদের কাছে মাননীয় বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন উনি রিজাইন করবেন। রিজাইন করার পরিবর্তে উনি একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে চলে গেলেন … আবার এসে চেয়ারে বসতে চাচ্ছেন। অন্য বিচারপতিরা বলেছেন, আমরা ওনার সাথে আর বসবো না। ওনার আসার আর সুযোগ নাই। আমার মনে হয় এটা সুদূরপরাহত।’
বেসরকারি টিভি চ্যানেল আই’তে প্রচারিত ‘বিবিসি প্রবাহ’ অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার রাতে আব্দুল মতিন খসরু এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির’ গুরুতর অভিযোগ তোলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি দাবি করেন, এস কে সিনহার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে।
খসরু বলেছেন, ‘কোটি কোটি, চার কোটি-পাঁচ কোটি পে-অর্ডার … ব্যাংকে পাঁচ কোটি দশ কোটি টাকার লেনদেন – এটা কোত্থেকে হলো?’
প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর গত ১৪ই অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে জানানো হয় যে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত কিছু তথ্য রয়েছে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে, যা তিনি হস্তান্তর করেছেন আপিল বিভাগের অন্য পাঁচজন বিচারপতির কাছে।
সুপ্রিম কোর্টের দেয়া বিবৃতির পর উত্থাপিত অভিযোগগুলো সম্পর্কে প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে এখনও কোন বক্তব্য দেওয়া হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা কিংবা অন্যদের উত্থাপন করা অভিযোগগুলো সম্পর্কেও তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
কিন্তু প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন? – এমন প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেছেন, ‘আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সময় চলে যায় নি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের সাথে মি. সিনহার ছুটির কোন সম্পর্ক নেই। কারণ ষোড়শ সংশোধনীর রায় প্রধান বিচারপতি একা দেননি।।’
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি নিজের শারীরিক সুস্থতা সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটির উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেছেন, ‘২ অক্টোবর আপনি বললেন অসুস্থ লিখিতভাবে, এখন মুখে বলতেছেন সুস্থ। মানুষ কোনটাকে বিশ্বাস করবে?’
চলতি বছর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী রায় বাতিল করে দেওয়ার পর থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার দ্বন্দ্ব জনসম্মুখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঐ রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে দলের অনেকেই প্রধান বিচারপতির কড়া সমালোচনা করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের অনুমতিসাপেক্ষে চলতি মাসের ২ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি। পরে তিনি মাসের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেন। আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত তার ছুটিতে থাকার কথা।
কিন্তু, বিএনপিসহ আওয়ামী লীগ বিরোধীরা দাবি করে আসছে যে ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিলের কারণে প্রধান বিচারপতির ওপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নাখোশ। তাই এস কে সিনহোকে জোর করে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তীতে তাকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
তবে এই অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখান করে আসছে আওয়ামী লীগ নেতারা।