মোঃ রিয়াজুল ইসলাম:নাটোর প্রতিনিধি:‘দশ কাঠা জমি, তিনডে গরু, একটা স্যালো মেশিন আর নগদ আয়ের উৎস হপার মেশিন (গমসহ চৈতালী ফসল সংগ্রহে ব্যবহৃত) বেইচে মেয়েডারে চিকিৎসা করাইছি, কিন্তু মেয়ে আমার এখনও সুস্থ হইলো না। প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার ওষুধই লাগে, সংসার খরচ আছে-এসব খরচ যোগাতে এখন আমি রাস্তায় রাস্তায় ভ্যান চালাই। তবু যদি মেয়েডা আমার সুস্থ হয়’। অশ্রু মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর বড়াইগ্রামের রেজুর মোড়ে দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া চাটমোহরের ছাইখোলা গ্রামের বিলকিস খাতুনের বাবা আজাহার আলী। শুক্রবার বিকালে (২০ অক্টোবর) বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রেসক্লাবে মেয়েকে সহ এসে তিনি তার দুর্দশার কথা জানিয়ে মেয়ের চিকিৎসার জন্য সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন মহলের কাছে আর্থিক সাহায্য কামনা করেন। জানা যায়, সেদিন বড় বোন আঞ্জুয়ারা খাতুনকে ডাক্তার দেখিয়ে বনপাড়া থেকে অথৈ পরিবহণে বাড়ি ফেরার পথে রেজুর মোড়ের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। পরে সেখান থেকে তাকে প্রথমে বনপাড়ায় ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তার মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে দীর্ঘ ৪৩ দিন তার জ্ঞান ছিলো না, প্রায় তিন মাসের বেশি সময় স্মৃতিশক্তি হারানো অবস্থায় ছিলো সে। এছাড়া বাম পা ভেঙ্গে যাওয়াসহ শরীরের অসংখ্য স্থানে বাসের জানালার ভাঙ্গা কাঁচ ঢুকেছিল। দফায় দফায় অপারেশন আর ঔষধের ব্যায় মেটাতে ইতোঃমধ্যে একমাত্র ভিটেবাড়ি ছাড়া সব কিছু বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা খরচ করেছে বিলকিসের বাবা। কিন্তুএখনও পুরোপুরি সুস্থ নয় বিলকিস খাতুন। এ অবস্থায়ই একে একে ২০১৫ সালে এসএসসি ও ২০১৭ সালে এইচএসসি পাশ করেছে সে। বর্তমানে বিলকিস রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হাড়জোড় বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ আহমেদ বাবুর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছে। তার পায়ের হাড় জোড়া লাগানোর জন্য প্রায় সাড়ে চার কেজি ওজনের লোহার পাত পায়ের সঙ্গে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। দিনের অধিকাংশ সময় তাকে বিছানায় শুয়েই কাটাতে হয়। একটু হাঁটাচলা করলে পা ফুলে গিয়ে রক্ত পড়ে। প্রতি সপ্তাহে ঔষধ বাবদ তার ১২শ টাকা করে খরচ পড়ে। অসুস্থ বিলকিস খাতুন কান্না চাপতে চাপতে জানায়, আমি আরো লেখাপড়া শিখতে চাই। কিন্তু অর্থাভাবে আমার চিকিৎসা করানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারীভাবে বা কোন সহৃদয়বান ব্যাক্তি আমাকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করলে সুস্থ হয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে আমি দেশ ও দশের সেবা করতে চাই। দেশের বিত্তবান ও দানশীল ব্যাক্তিরা তাকে সহযোগিতা করতে চাইলে ০১৭৪৩-২২৯২৪০ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
নাটোরে বৈরী আবহাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত
নাটোর প্রতিনিধি
সমুদ্রে সৃষ্ট নি¤œ চাপের কারণে বৈরী আবহওয়ায় নাটোরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা দুই দিনের বর্ষণে সাধারণ মানুষের প্রায় সকল স্বাভাবিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। নাটোর জেলার সবক’টি উপজেলাতেই ঝড়ো হাওয়ার সাথে বর্ষণ একইভাবে প্রভাব ফেলেছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাড়ি থেকে বের হননি। আবহাওয়া খারাপের কারণে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ক্লাস হয়নি। শহরে অটো এবং রিক্স্রা সহ সব ধরণের যান চলাচলের সংখ্যাও ছিল খুব কম। অনেক পাকা সড়ক তলিয়ে গেছে এবং আধাপাকা ও কাঁচা রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। নীচু এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ছোট-বড় গাছও উপড়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার রাত থেকে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে। টানা বর্ষণ ও ঠান্ডা ঝড়ো হাওয়ায় নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সমসখলসীর পাখির গ্রামটি খুব বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, পাখির গ্রামের গাছে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির পাখির শত শত ছোট বাচ্চা অতিরিক্ত বর্ষণ আর ঠান্ডা বাতাসের কারণে মাটিতে পড়ে গেছে। বেশ কিছুর পাখির বাচ্চা মারা গেলেও স্থানীয় প্রশাসন ও গ্রামবাসী মাটিতে পরে থাকা অন্য পখির বাচ্চাগুলো বাঁচানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। টানা বর্ষণে অনেক আবাদী জমির ফসল তলিয়ে গেছে এবং বেশকিছু পুকুরও ভেসে গেছে।