ক্রাইমবার্তা ডেস্কর্রিপোট: দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে রাজধানীসহ সারা দেশে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিম্ন চাপের প্রভাবে সারা দেশেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভারি বর্ষণের সঙ্গে দিনভর টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে রাজধানীর অনেক সড়ক।
রাতভর বৃষ্টির পর শনিবার সকাল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেশ ব্যাপি
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মানুষ ঘর থেকে কম বের হলেও যারা বের হয়েছেন তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। সারা দেশে বৃষ্টি হলেও রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
এতে রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় কোথাও কোথাও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। রাস্তায় জলজটের মধ্যে গাড়ি চালাতে গিয়ে কোথাও কোথাও গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাজধানীর সদরঘাটসহ সারা দেশের ছোট লঞ্চ ছাড়তে নিষেধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
উপকূলীয় এলাকা হাতিয়া, বেতুয়া ও রাঙ্গাবালিতে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ।
আবহাওয়া অফিস বলছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় শুক্রবার সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়।
আবহাওয়া অফিস বলছে, গত ৩ দিন ধরে ঢাকাসহ সারা দেশেই এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শনিবার থেকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমলেও আগামী ৫ দিন বৈরী আবহাওয়া চলতে পারে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, শুক্রবার নিম্নচাপটি পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছিল। আজও ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে জোয়ারের পানিতে কিছু কিছু বাড়িঘর ভেসে গেছে। বাড়েরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলায় সিডর আক্রান্তদের জন্য তৈরি বেশ কিছু বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মো. আবু জাফর হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, সমুদ্রে তিন নম্বর ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে দুই নম্বর সংকেত থাকায় ৬৫ ফুটের কম দৈর্ঘ্যরে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ফেরি চলাচলও হুমকির মুখে। বাগেরহাটের প্রায় ৫ শতাধিক ঘের ভেসে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম জানিয়েছেন, শনিবার থেকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমলেও আগামী ৫ দিন পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
শুক্রবার নিম্নচাপটি কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শিমুলীয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোটসহ সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন। উভয় ঘাটে কয়েকশ’ যানবাহন আটকে পড়েছে।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার দুপুর থেকে বন্ধ হয়ে যায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটের লঞ্চ সার্ভিস। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও আরিচা নদী বন্দরের নৌ ট্রাফিক অফিসার ফরিদ হোসেন লঞ্চ চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে শনিবার সকাল নাগাদ লঞ্চ চলাচলের সম্ভবনা রয়েছে।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, উপকূলজুড়ে টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাট শহরসহ নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মোংলা বন্দরে অবস্থান করা জাহাজে পণ্য উঠা-নামার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বৈরী আবহাওয়ায় মাছ ধরা ট্রুলার নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। বন্দরে বর্তমানে সার, চাল, কনটেইনার, এলপিজি গ্যাসসহ ১০টি জাহাজ অবস্থান করছে।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, জেলার প্রধান দুটি নদী পায়রা ও বিষখালীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে একাধিক দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে জেলার সদর উপজেলার ডালভাঙ্গা, মোল্লার হোরা, কুমড়াখালী ও তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামসহ সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৭শ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এদিকে দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জাান খান কামালের সফর বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে জেলা শহরের বাংলাস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভা হওয়ার কথা ছিল।
আজ প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো. মোস্তাফিজুর রহমানের এক দিনের সফরে ভোলায় আসার কথা ছিল। ওই সফরও বাতিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জেলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলায় নব নির্মিত দুটি থানা ভবনের উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার কথা ছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ওই সব অনুষ্ঠানও স্থগিত করা হয়।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, টানা বর্ষণের কারণে পানি বেড়েছে নদীতে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
বরিশাল বিআইডব্লিউটির নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ৬৫ ফুটের নিচের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
মোংলা প্রতিনিধি জানান, মোংলাবন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য খালাস-বোঝাই ব্যাহত হচ্ছে।
মোংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক ট্রাফিক গোলাম মোস্তফা জানান, ঝড়-বৃষ্টির কারণে পণ্য উঠানো-নামানো ব্যাহত হচ্ছে, বন্ধ রাখা হয়েছে খাদ্যবাহী ৪টি জাহাজের কাজ। নিম্নচাপের প্রভাবে মোংলা বন্দরসহ আশপাশের উপকূলের ওপর দিয়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে এবং বৃষ্টিপাত হচ্ছে।