আজাদ/ শাহজালাল শাহেদ : মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে মুসলমানদের অস্থিত্ব বিলীনে নুতন করে সংকট তৈরি করছে মগ প্রশাসন। এবার রাজধানী আকিয়াবের রোহিঙ্গা মুসলমান নিধনের পরিকল্পনার ছক তৈরি করছে তারা। আকস্মিকভাবে সেদেশের মগসেনা ও বিজিপি যৌথ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসার কর্তব্যরত খতিব, ইমাম, প্রবীণ শিক্ষকসহ ৩০জন আলেমকে আটক করেছে। আটককৃতদের মধ্য থেকে স্বজনদের কাছ থেকে পণের টাকা নিয়ে ২৭জনকে মুক্তি দিয়েছে সম্মিলিত ওই বাহিনী। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ৩ জনকে আটকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দিয়ে আকিয়াবে কিধনের পরিকল্পনায় এগুচ্ছে। এ ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়েছে স্বজনরা। একইভাবে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে আকিয়াবের সংশ্লিষ্ট এলাকার রোহিঙ্গা পল্লীর মুসলমান বাসিন্দাগণ।
তাদের ধারণা মতে- মংডু, বুথিদং ও রাথিদংয়ের মতো আকিয়াবেও নতুন করে মুসলমান নির্মূলের বড় ধরনের কোন পরিকল্পনা আটতে যাচ্ছে কিনা। সূত্রের দাবি, নাহলে একসাথে ৩০জন আলেমকে ধরপাকড় করে পণ নিয়ে ২৭জনকে ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র ৩জনকে কেনইবা রেখে দিলো। এমনও হতে পারে ওই ৩জন আলেমকে বেপরোয়া মারধরসহ জুলুম নির্যাতন চালিয়ে মুসলমান সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গাগ্রামগুলোর সুনির্দিষ্ট অবস্থান নিশ্চিত করতে আটকে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য সূত্রের।
সূত্রে প্রকাশ, আরাকানের রাজধানী আকিয়াবের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল মাম্ব্রা থেকে ৩০জন আলেম-ওলামাকে আটক করেছে মগ সেনা ও বিজিপি’র সম্মিলিত বাহিনী। বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ করেই এ ঘটনা ঘটে। ১৯অক্টোবর দুপুরে তিন প্লাটুন যৌথ বাহিনী মাম্ব্রার হত্তিপাড়ায় প্রবেশ করে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় ওই এলাকায় মসজিদ-মাদরাসার দায়িত্বে নিয়োজিত আলেম, কুরআনে হাফেজ এবং মাদরাসা পড়–য়া ছাত্রসহ ৩০জনকে ডেকে নেয়া হয়। পরে তাদেরকে আটক করে স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্র আরো জানিয়েছে, রাত সাড়ে আটটা থেকে রাত দশটার মধ্যে সাতাশ জনকে পণ দিয়ে মুক্ত করেছে স্বজনরা। তিন আলেমকে সেনা কর্তৃপক্ষ মুক্তি দেয়নি। মুক্তি পাওয়া একজন আলেম নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সংবাদকর্মীকে জানিয়েছেন, “তাদেরকে আটক করে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর কোন প্রকার জেরা করেনি সৈন্যরা। সন্ধ্যার পর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে ৩জনকে আলাদা কয়েদ খানায় নিয়ে যায়। বাকীদেরকে কিছুক্ষণ পর পর নাম ধরে ডেকে মুক্তি দেয়। মুক্তি দেয়ার সময় আমাদের স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিয়েছে।” যে তিনজনকে এখনো আটক করে রেখেছে তারা হলেন, মাহমুদুল হকের পুত্র মাওলানা মোহাম্মদ কাবিল (৩৫), মাওলানা ফয়সাল (৪৫), হাঁদায়পাড়ার মাদরাসা শিক্ষক হাফেজ কমরুদ্দিন (২৮)।
এদিকে হঠাৎ করে আটকের কারণ কি হতে পারে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেনা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, মংডু, বুথিদং এবং রাথিদংয়ের মতো আকিয়াবের রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকেও বিনাশ করার পরিকল্পনা করছে প্রশাসন। তাই প্রথমে বুদ্ধিজীবি ও আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার করছে সৈন্যরা। এ ঘটনায় আকিয়াবের রোহিঙ্গা পল্লীতে আতংক বিরাজ করছে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে ওই এলাকায় একটি স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা দিয়ে রোহিঙ্গাদের হয়রানি শুরু করে মগ সৈন্যরা। চলতি সপ্তাহে একজন মুসলমানকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে উগ্রপন্থী রাখাইনরা।