গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুর ও টঙ্গীতে রবিবার রাতে তিন বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। এসময় ডাকাতরা বাড়ির লোকদের অস্ত্রেও মুখে জিম্মি করে হাত-পা ও মুখ বেঁধে নগদ ছয় লাখ টাকা ও ৯০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। এসময় ডাকাতাদের বাধা দেয়ায় তাদের হামলায় ভাই-বোনসহ তিনজন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান ভূইয়ার ছেলে নাবিল (১৭), মেয়ে মাহদিয়া (১০) ও কাজের বুয়া নার্গিস (১৫)। তাদরেকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকার মনিরুজ্জামান ভূইয়া জানান, রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এক ব্যক্তি তার বড় ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন ভূইয়ার খোঁজ জানতে কৌশলে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় বাইরে অপেক্ষায় থাকা আরো ১৪/১৫জন সশস্ত্র একদল ডাকাত বাসায় ঢুকে যায়। পরে বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের জিম্মি করে মুখে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ও মারধর করে পাশের ঘরের ভেতর আটকে রাখে। এসময় ছেলে নাবিল ও ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন বাসায় ঢুকলে ডাকাতরা তাদেরও হাত-পা ও মুখ বেঁধে মারধর করে আটকে রাখে। পরে ঘরের আলমারীর তালা ভেঙ্গে নগদ সাড়ে ৩লাখ টাকা ও ৪৫ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং পরে তার ভাই মোয়াজ্জেম হোসেনের বাসার আলমারীর তালা ভেঙ্গে নগদ ২লাখ টাকা এবং ২৫ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিয়ে যায়।এক পর্যায়ে কৌশলে তার মেয়ে মুখের বাঁধন খুলে ডাকচিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশিরা এসে তাদের উদ্ধার করে।
টঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে ওই হামলা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। শনিবার ডলার খান নামের এক ব্যক্তি মনিরুজ্জামানের সিঙ্গাপুর প্রবাসী ছোট ভাই মফিজ উদ্দিনকে মোবাইল ফোনে দেশে থাকা তার অন্যান্য ভাইদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এর একদিন পরই ওই ঘটনা ঘটলো। স্থানীয় রেজাউল করিমের কাছ থেকে কিছু জমি কেনেন মনিরুল ভূইয়া ও তার অন্যান্য ভায়েরা। কিন্তু কেনা জমির দখল নিয়ে রেজাউলের সাথে মনিরুলদের বিরোধ চলে আসছে। আর ডলার খান হলো রেজাউলের আত্মীয়। খবর পেয়ে রাতেই গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ (এডিশনাল এসপি) সুপার রাসেল শেখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে রবিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে গাজীপুর মহানগরের ভুরুলিয়ায় রোটারিয়ান রাশেদুল ইসলামের বাড়িতে ঢুকে ডাকাতেরা নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। ডাকাতরা জানালার গ্রীল ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশের পর বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিভিন্ন কক্ষে মালামাল তছনছ করে এবং ধারালো অস্ত্র ধরে শিশু বাচ্ছাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে বলে জানান এলাকাবাসি।
জয়দেবপুর থানার পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৩টার দিকে ৬ থেকে ৮ জনের একদল ডাকাত রাশেদের বাড়ির ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে। এরপর তারা বাড়ির লোকজনকে বেধে ফেলে এবং আলমারি ভেঙে ৫০হাজার টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন ও বিশ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার লুটে নিয়ে যায়।
রাশেদুল ইসলামের বাবা অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, জানালার গ্রীল ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা খোলার শব্দ পেয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গে। এ সময় ডাকাতেরা ঘরে ঢুকেই তাঁকে ধারালো অস্ত্র ধরে বেধে ফেলে। এ সময় তাঁর স্ত্রী, প্রবাসি ছোট ছেলে স্ত্রীকেও বেধে রাখে। এরপর অন্য রুমে ঘুমিয়ে থাকা রাশেদকে ঘুম থেকে উঠতে ডাক দেয় ডাকাত দল। রাশেদ জানান, দরজা খুলেই ঘরের ভেতর ৬/৭ দেখতে পাই। পরে আমার শিশু সন্তানের ওপর ধারালো অস্ত্রধরে এবং আমাদের সকলকে এক রুমে আটকে রেখে মালামাল তছনছ করে ডাকাতরা নগদ ৫০ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন এবং বিশ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। সোমবার সকালে খবর পেয়ে প্রথমে জয়দেবপুর থানার উপ পরিদর্শক জামাল মিয়া ও উপ পরিদর্শক এনায়েত হোসেন-২ ঘটনাস্থল যান। পরে গাজীপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ রাসেল সহ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
জয়দেবপুর থানার উপ পরিদর্শক জামাল মিয়া জানান, ডাকাতরা জানালার গ্রীল কেটে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে কিছু টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে।
###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা।