সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পর পর মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। ছুটে যাই বাঁশঝাড়ে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল মিয়ানমারের সেনাদের গুলিতে ঝাঝরা হয়ে গেছে হাত-পা, বক্ষ। রক্তে মাটি লাল বর্ণ ধারণ করেছে। বুঝতে পারলাম কেউ বেঁচে নেই। প্রাণ বাঁচাতে ছয় সন্তান নিয়ে প্রায় ৪ দিন পাহাড় দিয়ে হেঁটে বাংলাদেশে আসি।
প্রতিবেদকের কাছে স্বামী হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিচ্ছিলেন ৪৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী নূর বাহার। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমঘুম ইউনিয়নের কোনপাড়ার নোম্যান্সল্যান্ডের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছয় সন্তানসহ ঠাঁই হয়েছে নূর বাহারের।
কষ্টের বোঝা বইতে বইতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে নূর বাহারের। তার চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ছয় সন্তান নিয়ে তিনি এখন পড়েছেন বিপাকে। নূর বাহারের বাড়ি মিয়ানমারের মেদাই জেলার রাম্মাখালী গ্রামে। স্বামী জাকির আহম্মদ ছিলেন কাঠুরিয়া। পাহাড়ের বন থেকে লাকড়ি-কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন। কৃষি জমিতে দিনমজুর শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন নিজেও।
নূর বাহার যুগান্তরকে বলেন, তার স্বামীসহ মিয়ানমারের সেনাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে অনেক রোহিঙ্গা পুরুষ। তার স্বামীসহ অন্যদের কেউ হাত-পা বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নাফ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে লাশ।
ওই রোহিঙ্গা নারী জানান, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে, সেদিন হঠাৎ গ্রামে হামলা চালায় মিয়ানমারের সেনা আর মগেরা। গ্রামের পুরুষদের যাদের পেয়েছে সবাইকে হাত-পা বেঁধে গুলি করে হত্যা করেছে।
ওই রোহিঙ্গা নারী আরও জানান, রাম্মাখালী গ্রামে তিনি রেখে এসেছেন ক্ষেতভর্তি ফসল, পুকুরের মাছ, হাঁস, মুরগি। তাই নূর বাহরের একটাই কথা তোমরা জুলুম থামাও, আমি বাড়ি ফিরতে চাই।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট রাতে রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরএসএ)। ওই হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ সদস্যসহ ৮৯ জন মারা যান বলে মিয়ানমার সরকারের ভাষ্য। এর পরই রাজ্যটিতে শুরু হয় সেনা অভিযান।যুগান্তর