অতীতের মতো আগামী নির্বাচনের আগেও রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। গত বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনসের বাংলাদেশবিষয়ক এক ‘ব্রিফিং পেপারে’ এ বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়েছে, এক বছর পর বা এর কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি এখনো মুখোমুখি অবস্থায় আছে। অনেকে সরকারের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদের কথা বলছে। সন্ত্রাসবাদেরও ঝুঁকি আছে। এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলমান আশ্রয়প্রার্থীর ঢল নেমেছে বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে ধারণা করা হচ্ছে যে দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়তে পারে।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার থেকে নতুন করে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। শুরুতে বাংলাদেশ আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের ঠেকানোর চেষ্টা করলেও সংকটের মাত্রা স্পষ্ট হওয়ার পর উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘গত মাসে বাংলাদেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আকাশসীমা লঙ্ঘন ও সীমান্তে স্থলমাইন পাতার অভিযোগ তোলে। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধার আশঙ্কা ছিল কয়েক দিন ধরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মাসের শেষ দিকে জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। বাংলাদেশ আশা করছে, সাম্প্রতিক সময়ে আসা রোহিঙ্গাদের উল্লেখযোগ্য অংশকে মিয়ানমারে দ্রুত ফেরত পাঠানো যাবে। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কোনো রোহিঙ্গাকে যেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত পাঠানো না হয় তা নিশ্চিত করতে বিশ্লেষকরা সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, পরিস্থিতি সম্পর্কে পার্লামেন্ট সদস্যদের হালনাগাদ তথ্য দিতে ব্রিফিং পেপারটি প্রকাশ করে হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি। সব দেশ সম্পর্কেই এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেশ বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য ছয় কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাজ্য। এটি একক কোনো দেশের সর্বোচ্চ অর্থ সহায়তার অঙ্গীকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন কিভাবে হওয়া উচিত সে বিষয়ে উভয় পক্ষই গত দুই বছর ধরে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে আসছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামো বাতিল করেছে। আবার সেই ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও সরকারের কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিএনপির যুক্তি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা উচিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগকে এখন নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় অন্তর্র্বতী মন্ত্রিসভা গড়ার কথা বিবেচনা করতে বলা হচ্ছে। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি এ ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমঝোতা না হলে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা নির্বাচনে যাবে, নাকি বর্জন করবে। বর্জনের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতায় ছায়া ফেলতে পারে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা জোরালো করতে পারে।
বিএনপির দাবি, আওয়ামী লীগ ক্রমেই আরো কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ‘নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও সমালোচকদের ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থানের’ এবং ‘উগ্রবাদী সহিংসতা মোকাবেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর বে আইনি আটক, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার’ কথা বলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গত বছরজুড়ে বা সমসাময়িক সময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের কিছু অংশের বিরোধ হয়েছে। গত বছর হাইকোর্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন। গত জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্ট ওই রায় বহাল রাখেন। ‘
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠ বিচারকদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠায় অভিসংশনের সংসদের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে ২০১৪ সালে ওই সংশোধনী গৃহীত হয়েছিল। বর্তমানে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার তার সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়েছে। ইসলামিক স্টেটসহ সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকির আন্তর্জাতিক মাত্রাকেও সরকার এখন আমলে নিয়েছে।
/জে