ক্রাইমবার্তা রির্পোট:বগুড়া : ‘আপা’ বলে সম্বোধন করায় আবারো রোগীর স্বজনদেরকে মারপিট করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। স্বজনদের উপর হামলার পর ওই রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর পরপরই অন্য হাসপাতালে নেয়ার পরে রোগীর মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে রোগীর স্বজনদের উপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ফেব্র“য়ারি মাসে একই ঘটনায় রোগীর স্বজনদেরকে মারপিট করে আটকে রেখেছিল ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারপিটে আহতরা হলেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল গ্রামের গাজিউর রহমান (৪৭) ও তার ছেলে শান্ত (২৫)।
জানাগেছে, গাজিউর রহমানের মা মাহেলা বেওয়াকে (৭৫) গত ২৪ অক্টোবর শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাহেলা বেওয়া শ্বাসকষ্ট ছাড়াও বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তিনি হাসপাতালে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের ১ নং ইউনিটের ৫ নং বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক দুর্বলতার কারণে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রোগীর শরীরে রক্ত দেয়া হচ্ছিল। রাত ৯টার দিকে রক্ত সরবরাহ শেষ হওয়ায় রোগীর নাতী শান্ত একজন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে ‘আপা’ সম্বোধন করে রোগীর কাছে যেতে বলে। এতে ওই নারী চিকিৎসক ক্ষিপ্ত হয়ে আশিকুজ্জামান নামের আরেক জন ইন্টার্ন চিকিৎসককে বিষয়টি জানায়। এরপর ২-৩জন পুরুষ ইন্টার্ন চিকিৎসক শান্তকে বেদম মারপিট শুরু করে। এদৃশ্য দেখে তার বাবা গাজিউর রহমান ছেলেকে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও মারপিট করা হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারপিটে শান্ত’র মাথা ফেটে যায়। পরে তাদেরকে হাসপাতালের একটি কক্ষে আটক করে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এদিকে, খবর পেয়ে রাতেই সাংবাদিকরা হাসপাতালে গেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দরজা বন্ধ করে দিয়ে সেখানে প্রবেশে বাধা দেয় এবং এবিষয়ে কোন ছবি অথবা কারো বক্তব্য নেয়া যাবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
শুক্রবার সকালে চিকিৎসকদের হাতে মার খাওয়া বাবা ও ছেলের রোগী মাহেলা বেওয়াকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়।
শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ শাখার নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে সংগঠনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রোগীর স্বজন একজন নারী চিকিৎসকের সাথে অশালীন আচরণ করে। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অন্যান্য রোগীর স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে মারপিট করে। তবে, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন চিকিৎসককে আপা সম্বোধন করায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই বাবা ও ছেলেকে নির্মমভাবে মারপিট করে আটকে রাখে। পরে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে।
এর আগে গত ফেব্র“য়ারি মাসে শজিমেক হাসপাতালে সিরাজগঞ্জের আলাউদ্দিন নামের এক রোগীর ছেলে ইন্টার্ন চিকিৎসককে আপা সম্বোধন করায় তাকে বেদম মারপিট করে আটকে রাখা হয়েছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও পরে আন্দোলনের মুখে তাদের শাস্তি প্রত্যাহার করে নেয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেপরোয়া আচরণের কারণে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রায়ই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী মাহেলা বেওয়া শুক্রবার সকালে মারা গেছেন বলে জানাগেছে।