‘সরকার যেভাবে আইন করে দেয় সেভাবেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। সেই আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) এমন বক্তব্যে জাতি হতাশ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, সিইসি সংলাপ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সমঝোতার উদ্যোগ নেবে না ইসি। তার এমন বক্তব্য গোটা জাতিকে হতাশ করেছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী একথা বলেন।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, গত ৩১ জুলাই থেকে সংলাপ শুরু হয়ে ৪৫টি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সাথে সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন। সংলাপে আওয়ামী লীগসহ দু’তিনটি রাজনৈতিক দল ছাড়া সব দলই নিরপেক্ষ অথবা সহায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করেছে। প্রায় সব দলই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। দীর্ঘ এই সংলাপের পর আগামী নির্বাচন নিয়ে গতকাল সিইসি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে প্রমাণিত হয়, সরকারের দেখানো পথ ছাড়া তিনি হাঁটবেন না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ইসি যেসব পদক্ষেপ নিতে পারে তা তার গতকালের বক্তব্যে ফুটে ওঠেনি। তবু আমরা আশা করবো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংলাপে যেসব প্রস্তাবনা উঠে এসেছে সেটির যথাযথ বাস্তবায়ন করবে ইসি। সংলাপের প্রস্তাবনাগুলোর বাস্তবায়ন করতে হলে নিরপেক্ষ বা সহায়ক সরকার এবং সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ অবশ্যই প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন সেটি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের ভুমিকা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সরকারি ব্যর্থতা ও নতজানু নীতি আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। মিয়ানমার সফর শেষে আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে মিয়ানমার। তিনি বলেছেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আমরা একটি একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করবো। এই গ্রুপ একটি কর্মপদ্ধতি তৈরি করবে এবং সে অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাথে বৈঠকে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি বলেছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে আসতে চায় না। সে সময় সু চি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠককালে আরো বলেছেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক এবং রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করেছে দুষ্কৃতকারীরা। সীমান্ত মাইনও পুঁতে রেখেছে দুষ্কৃতকারীরা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নয়। যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের এসব বক্তব্যের পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে বলতে পারেন যে, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে সরকার। এটা শুধু নির্লজ্জ মিথ্যাচারই নয়, বরং গোটা জাতিকে হাইকোর্ট দেখানোর মতোই তামাশা। সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীরা মিয়ানমারে যে সফর করছেন তা শুধুমাত্র প্রমোদভ্রমণে পরিণত হবে।
‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি না কি খুশি। বিএনপির এই খুশি বেশি দিন থাকবে না’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া তিনি বলেন, বতর্মান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি খুশি নয়, বরং উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত বিএনপি। আওয়ামী লীগ যেভাবে দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে, যেভাবে গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে, যেভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, যেভাবে বিচার বিভাগের ওপর আক্রমণ চলছে, বিরোধী দলকে ধ্বংস করতে যেভাবে দমন-নিপীড়ন ও মিথ্যা শাস্তির খড়গ চালানো হচ্ছে তাতে আওয়ামী লীগের যে ভয়াবহ পতন হবে তা ভেবেই বরং উদ্বিগ্ন বিএনপি।
এছাড়া গত বুধবার ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মশিউর রহমানকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে কারাগারে প্রেরণ করার নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, মঙ্গলবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সভাপতি আমিরুজ্জামান আমীর, জেলা বিএনপির সহদফতর সম্পাদক সারওয়ার জাহান দোলন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবদল নেতা সুমন, রাব্বি, কুমিল্লা জেলা ছাত্রদল নেতা পাভেল, সাজ্জাদসহ নয়জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং মিছিলে পুলিশের বেপরোয়া গুলিবর্ষণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবদল নেতা মুনীর, গোলাপসহ ১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আহত করে পুলিশ। গত ২৩ অক্টোবর গাইবান্ধা জেলা ছাত্রদল সভাপতি খন্দকার জাকারিয়া জিমকে পুলিশ তার বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতিবাদে গত ২৪ অক্টোবর কুমিল্লায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ ও নেতাকর্মীদের গুলিবিদ্ধ করে আহত করে পুলিশ। পুলিশের বেপরোয়া গুলিবর্ষণে কুমিল্লা মহানগর যুবদলের সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু, মহানগর ছাত্রদল নেতা প্রিন্স, ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রদল নেতা মুক্তার হোসেন এবং কোতোয়ালি থানা ছাত্রদল নেতা সজিবসহ ১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রিজভী অভিযোগ করেন, গত বুধবার রংপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান সামু, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান লাকু এবং রংপুর জেলা ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শহীদকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় কারাগারে প্রেরণ করার ঘটনায় আমি বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। এছাড়া ময়মনসিংহ উত্তর জেলার ফুলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল বাশার আকন্দ এবং তারাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদারকে বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে বরখাস্ত করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।