ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট: সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরায় পানি আর পানি। তবে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। উপকুলীয় এ জেলার বেশির ভাগ মানুষ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে লড়াই করে বেঁচে আছে। এ জেলাতে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দুরারোগ সহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ লেগেই আছে এ জেলা বাসিন্দাদের। সরকারী হিসাব মতে এজেলার ৮০ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পেয়ে থাকে। বাস্তবে এমন তথ্য শুধু মাত্র কাগজে কলমে। ফলে বিষাক্ত পানি খেতে হচ্ছে সাধরণের।
শতকরা কতভাগ মানুষ সুপেয় পানি পান করছেন তার কোনো সঠিক তথ্য নেই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে। কাগজপত্রে ৮০ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে- এমনটা উল্লেখ থাকলেও বাস্ততা ভিন্ন। সুপেয় পানি পাচ্ছে তার চেয়ে অনেক কম মানুষ। সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলি মনিরুজ্জামান,এসব অভিযোগ স্বীকার করে বলেন আমরা সুপেয় পানি সবার কাছে পৌছাতে চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, ২০০২ সালে একবার বেসরকারি এনজিও সংস্থা জরিপ করলেও সেটি সঠিক হয়নি। তা ছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমেও শতকরা কতভাগ মানুষ সুপেয় পানি পান করছেন তার সঠিক জরিপ করা হয়নি। কেননা জনবল সংকট রয়েছে। তবে ধারণা অনুযায়ী আমরা ৮০ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পান করছেন বলে কাগজপত্রে উল্লেখ করি।
সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট সব চেয়ে বেশি। এখানে গভীর নলকূপ বসালেও পানি ওঠে না। আর পানি উঠলেও সেটি একদিকে লবণাক্ত অন্যদিকে আর্সেনিকযুক্ত। আমাদের কিছু করার থাকে না। এরপর সুপেয় পানির সংকট রয়েছে তালা ও কালীগজ্ঞ উপজেলায়। সেখানেও একই অবস্থা। দেবহাটা ও কলারোয়া উপজেলাতেও রয়েছে আর্সেনিকযুক্ত পানি। গ্রামঞ্চলের মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই বিকল্প উপায় না পেয়ে এ পানি পান করেন।
সাতক্ষীরা সদরেও সুপেয় পানির সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তবে সদরের মানুষ পানি কিনেই পান করেন বেশি।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসতি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলার পর উপকূলীয় এলাকায় দেখা দেয় সুপেয় পানির তীব্র সংকট। জলবায়ু ট্রাস্টের অর্থায়নে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হলেও তার যথাযথ ব্যবহার হয়নি।
এদিকে জলবায়ু ট্রাস্টের কোটি কোটি টাকা অর্থ নয়-ছয় হয়েছে। সঠিক ব্যবহার হয়নি, যার কারণে তার কোনো সুফল মানুষ পাচ্ছে না। সাতক্ষীরা সদরে প্রায় সব পরিবারই বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি কিনে পান করেন।
২০০৯ সালের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদে। মুহূর্তের মধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি ও খুলনা জেলার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ক্ষতি গ্রস্থ হয় সুপেয় পানির উৎস সমূহ।
আইলাবিধ্বস্ত শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আজম টিটো জানান, দুর্গত এলাকা এখনো নানা সমস্যায় জর্জরিত। খাবার পানির তীব্র সংকট। আইলায় মিষ্টি পানির আধারগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। আজও পুকুর বা জলাশয় খনন করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এলাকায় কাজ নেই। উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। নদীতে বড় ধরনের জোয়ার আসলেই বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।