ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেছেন, আমরা মিয়ানমারের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলাম। আমরা যেভাবে আলোচনা শুরু করেছিলাম, এই মুহূর্তে তা সন্তোষজনক বলা যাচ্ছে না।
আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএন উইমেন আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটা নিয়ে কাজ চলছে। ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
চলতি মাসে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক অং সান সু চি’র দফতরের ইউনিয়নমন্ত্রী টিন্ট সোয়ে ঢাকা সফরকালে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নেপিডো সফরে গিয়ে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এই গ্রুপ গঠনের তাগাদা দেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনের শর্টকাট কোনো পথ নেই উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, আমাদের দেশের কোনো মানুষ বিদেশে আটকা পড়লে তার নাগরিকত্ব আমরাও যাচাই-বাছাইয়ের কথা বলি। আন্তর্জাতিক নিয়মগুলো সেভাবেই তৈরি করা আছে। তাই সবাইকে (রোহিঙ্গা) একসাথে ধরে পাঠিয়ে দেয়ার অবকাশ নেই।
রোহিঙ্গা সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘায়িত শব্দটি আপেক্ষিক। আগে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঘটনা ঘটার অনেক দিন পরে শুরু হতো। এবার দেড় মাসের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে পেরেছি। এটি ভালো লক্ষণ। এটি কতটুকু গতিশীলতা পাবে তা দেখার বিষয়। কিন্ত গতি আরো বাড়ানোর জন্য যে বহুপাক্ষিক চাপ রাখার কথা সেটি আমরা বজায় রেখেছি।
আন্তর্জাতিক চাপ বন্ধ হলে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাপ বন্ধ হলে কী হবে সে বিষয়ে জল্পনা-কল্পনা করাটা ঠিক হবে না। আর বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও দেখছি না। এ অবস্থায় যে ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন তা সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। তাই মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করার কোনো বিকল্প নেই।
জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সম্ভাব্য রেজ্যুলেশন সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগে দেখা যাক নিরাপত্তা পরিষদে কে কী অবস্থান নেয়। তারপর এ বিষয়ে কথা বলা যাবে। সব দেশ মিলে একটি শক্ত পদক্ষেপ নেবে – এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন-১৩২৫ এর ওপর ইউএন উইমেন আয়োজিত আলোচনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এর অধীনে আমরা নারীদের ক্ষমতায়ন বিষয়ে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছি। এটা মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
এর আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক গোলটেবিল বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমারের কোনো আশ্বাসে বাংলাদেশ আর আস্থা রাখতে পারছে না। আলোচনায় লাভ হচ্ছে না- এসব কথা জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানানো হয়েছে। আমরা তাদের জানিয়েছি, কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কী ফল আসবে তা নিশ্চিত নই। তাদের সাথে আলোচনার ফলাফলে আমরা আস্থা রাখি না। এরপরও আমরা বসে নেই। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাই।
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা চাওয়ার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার দ্বারও বাংলাদেশ উন্মুক্ত রেখেছে উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, ছলচাতুরীর আশঙ্কা থাকলেও মিয়ানমারের আহ্বানে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় গেছে। যদিও অনেকে বলেন, আমরা যেন মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ফাঁদে পা না দেই। আমি বলতে চাই, আমরা জেনে-বুঝেই মিয়ানমারের সাথে আলোচনায় গেছি। আমরা জানি এটা থেকে তারা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে। সেজন্য যখনই আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় গেছি, তখনই এ সংক্রান্ত অন্যান্য দিক আমলে রেখেছি। পাশাপাশি যা যা করণীয় করা হচ্ছে। যার ফলে নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলও সরব আছে।