অবিচল খালেদা জিয়া : পথে পথে জনতার ঢল

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:গাড়িবহরে হামলা, পথে পথে বাধা কোনো কিছুই টলাতে পারেনি বেগম জিয়াকে। শনিবার বিকেলে যখন ফেনী শহরের অদূরে হামলার ঘটনা ঘটে, কেউ কেউ আরো হামলার আশঙ্কায় খালেদা জিয়া ঢাকা ফিরে যেতে পারেন এমন মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তা করেননি। ফেনী সার্কিট হাউজ থেকে রাতের অন্ধকারেই পথ পাড়ি দেন চট্টগ্রাম অভিমুখে। অন্ধকার ওই পথেও হামলা হয়েছে। মিরসরাইতে বহরের মধ্যে থাকা দলের নেতা বরকত উল্লাহ বুলুর গাড়ি ভাংচুরের শিকার হয়। এরকম উত্তেজনা আর শঙ্কার মধ্যে বেগম জিয়া যখন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পৌঁছান, তখন রাত ১১টা।

আজ রোববার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অভিমুখে রওয়ানা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ থেকে বের হন তিনি।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর যাত্রাপথের দু’পাশে অবস্থান নিয়ে তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী।

আজ খালেদার যাত্রা শুরুর পর দেখা গেছে, সার্কিট হাউজ থেকে আমানত শাহ সেতু পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে নেতাকর্মীদের ঢল। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি উৎসুক জনতাও খালেদা জিয়াকে দেখতে রাস্তার দু’পাশে জড়ো হয়েছেন।

খালেদা জিয়া দুপুর সোয়া ১২টায় সার্কিট হাউস বের হলেও সকাল ৯টা থেকেই রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য নেতাকর্মী অবস্থান নেন। বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন হাতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন এলাকা।

বহরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িতে রয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাডভোকেট শিমুল বিশ্বাস। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, গতকাল হামলার খবর শোনার পর বেগম জিয়া দারুণভাবে ক্ষুব্দ হয়েছেন। তিনি এর নিন্দা জানান। আহতদের দ্রুত চিকিৎসায় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।

তিনি আরো বলেন, হামলা কিংবা বাধা, এর উদ্দেশ্য একটাই, যাতে বেগম জিয়া জনগণের কাছে যেতে না পারেন। কিন্তু তিনি অনঢ়। জনগণের ভালোবাসাই তার পাথেয়। সেই মনোবল নিয়েই তিনি সব বাধা উপেক্ষা করে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে যাচ্ছেন।

খালেদা জিয়া আজ কক্সবাজার সার্কিট হাউজে রাত্রি যাপন করবেন। আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় উখিয়ায় বালুখালী পানবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বালুখালী-২, হাকিমপাড়া ও ময়নার গুনা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করবেন তিনি।

খালেদা জিয়া ওই দিন বিকেলে কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে রাত যাপন করবেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। পথে ফেনী সার্কিট হাউজে যাত্রাবিরতি করবেন। খালেদা জিয়ার আগমনকে ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে পুরো চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে। সব নেতাকার্মী ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে মিলিত হয়েছেন।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাত্রাপথে গতকাল শনিবার ফেনীর মহিপালে খালেদা জিয়ার গাড়ির বহরে হামলা করে ৪০-৫০ জন দুর্বৃত্ত। বিএনপির পক্ষ থেকে এ জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। ফেনীর পর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়েও হামলার মুখে পড়ে খালেদার গাড়িবহর।

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাকারীরা সরকারি দলের ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাদের হামলার ঘটনা পরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

রোববার সকালে গণমাধ্যমের আহত সাংবাদিকদের চট্টগ্রামের দুইটি হোটেলে দেখতে গিয়ে এই দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত পত্রিকায় দেখলাম, ছবিতে দেখলাম, এরা চিহ্নিত। খুব পরিস্কার করে বুঝা যাচ্ছে যে, এরা সরকারি দল আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ অথবা যুব লীগের ক্যাডার। এই ছাত্রলীগ-যুব লীগের ক্যাডাররা যে এটা করেছে, এটা পত্র-পত্রিকায় এসেছে গেছে। তাদের আইডেনটিটি এসে গেছে।’

‘তারা (সন্ত্রাসীরা) চিহ্নিত। সরকারের উচিৎ হবে অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ ঘটনাগুলোকে যখনই সরকার ডাউন প্লে করে বা এটাকে অস্বীকার করতে যায়, তখন এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে তারাই এর সঙ্গে জড়িত। আপনাদের (গণমাধ্যম) ওপর আক্রমণ, ম্যাডামের ওপর আক্রমণ হলো, আমরা ওপরও আক্রমণ হয়েছিলো- তাহলে তো আর কিছুই বাকী থাকলো না।’

‘এটা আজ পরিস্কার যে, তারা(সরকার) বিরোধী মত ও পথ সহ্য করতে পারছে না। সঙ্গে যারা প্রচার করতে চায়, তাদেরকেও সহ্য করতে পারছে না। এরচেয়ে বড় নজির কী হবে একদলীয় শাসনের।পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ করা হচ্ছে সবকিছু।’

গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ওপর আক্রমনে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা গণমাধ্যমের কর্মীরা সব সময় নিরপেক্ষ থাকেন। কাজ করেন, সবরকম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন, আপনাদের কোনো দল নেই, আপনারা সত্যকে তুলে ধরতে চান। সেই ক্ষেত্রে যদি আপনারা সেই অধিকারটুকু হারিয়ে ফেলেন তাহলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তো আমরা দেখতে পারছি না।’

রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেখবেন আমাদের এবার গাড়িবহর খুবই ছোট। ইচ্ছা করেই আমরা মানা করছি যে, বেশি গাড়ি না যেতে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয়। যানজট যতটুকু সৃষ্টি হয়েছে ম্যানেজমেন্টের দূর্বলতার কারণে হয়েছে।’

‘পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন কতগুলো তাও বলেছেন। দিস ইজ দ্যা মিনিমাম। আগে আমাদের এক হাজার গাড়ি যেতো- আপনারা দেখেছেন। আমরা এটা সচেতনভাবে এবার বহরে গাড়ির সংখ্যা কম রেখেছি। আমরা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে নেতা-কর্মীদের মানা করেছি যাতে ওখানে কোনো সমস্যা না হয়।’

কক্সবাজার ও উখিয়া যাওয়ার পথে এরকম ঘটনা আরো ঘটার আশঙ্কা করছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কখনো এগুলো আশা করি না, আশঙ্কাও করছি না। কিন্তু যারা দুর্বৃত্ত যারা এসব সন্ত্রাসী কার্য্কলাপ করে তাদের এখন তো নাম পত্রিকায় ঠিকানা পত্রিকায় চলে এসছে, ছবি এসছে, কে স্থানীয় ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি সেসব তো চলে এসেছে- এই যে মোটরসাইকেল নিয়ে আছে, তারা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখন বুঝাই যাচ্ছে যে, সরকারি দলের লোকজন এটা করেছে।’

পুলিশের ভুমিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে আমরা মোটামুটি ভালো কাজ করেছে। কিন্তু নিরাপত্তার ব্যাপারে যেমন সাংবাদিকদের ওপর যখন আক্রমণ করলো তখন তো তারা দাঁড়িয়েছিলো। তারা তো কোনো ব্যবস্থা নেয়ানি। কয়েকটা জায়গায় তাদের রেসপন্সও পাওয়া যায়নি।’

‘ফেনীতে যখন আক্রমণ হলো আমরা বার বার করে এসপিকে বলেছি, ওসিকে বলেছি- আপনারা এগুলো দেখেন। তারা বলেছে আমরা দেখছি। যখন সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ হওয়ার পর আমরা ঢাকাতেও কথা বলেছি।’

খালেদা জিয়ার সফরে নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শকের নিশ্চয়তার বিষয়টি উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।

আওয়ামী লীগ বলেছে নিজের কোন্দলে এই আক্রমণ হয়েছে- এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘আপনি সত্যকে যদি অস্বীকার করেন এটা হচ্ছে ক্রাইম। ওই ক্রিমিনালদেরকে পার্টি থেকে এক্সপেল করা, পার্টি থেকে বহিস্কার করা উচিৎ ছিলো যদি তারা (ক্ষমতাসীন) আন্তরিক হতেন।’

‘ডিভেন্ড করার অর্থ হচ্ছে যে তারা সন্ত্রাসকে প্রশ্রয়-আশ্রয় দিচ্ছেন, সন্ত্রাসকে লালন করছেন। তারাই ডিফেন্ড করে সন্ত্রাসকে তারাই লাগিয়ে দিচ্ছেন- এটা তারাই প্রমাণ করছেন। জাতির কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে এটা কারা করেছে- চিহ্নিত, নাম-ঠিকানা চলে এসছে। এরপর যদি বলেন, আমরা জানি না। জানি না বললে তো হবে- ইট ইজ ইউর ওয়ার্কাস। দায়-দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে। ’

‘অন্তর্দ্বন্দ্ব এর কথা বল তারা উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতে চায়।’

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে যাচ্ছেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এটা নিয়ে আমরা কোনো রাজনীতি উদ্দেশ্যে না, পুরোপুরি ত্রাণ দেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি যাচ্ছেন।’

খালেদা জিয়ার বহরে হামলার ঘটনায় কালিগঞ্জের একজন ছাত্রনেতার গুরুতর আহত অবস্থার কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তার মাথা কুপিয়েছে, তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে, লাইভ এন্ড ডেথ।’

বিএনপি মহাসচিব আহত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন এবং শরীরের খোঁজ-খবর নেন।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।