প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল অতিক্রম করার পরপরই বহরের গাড়ি লক্ষ্য করে কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এসময় দুটি বাসে আগুন ধরে যায়। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা অপেক্ষমান বিএনপি-যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা লাঠি-সোটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এর আগে শনিবার কক্সবাজার যাওয়ার পথে ফেনীর ফতেহপুরে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা চালিয়ে ১৫-১৬টি গাড়ি ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা। হামলায় ১১ সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
ফেনী শহরের অদূরে মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকায় বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এ হামলা চলে। খালেদা জিয়ার গাড়ি হামলা এড়াতে সক্ষম হলেও বহরে থাকা গণমাধ্যমের গাড়িসহ শতাধিক গাড়ি নির্বিচারে ভাঙচুর করা হয়। সাংবাদিকসহ অর্ধশত নেতাকর্মী এতে আহত হয়েছেন। ফেনী শহর ছাড়াও খালেদা জিয়ার যাত্রাপথের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও বাধা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ফেনীতে হামলার পর পুলিশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে খালেদা জিয়া ফেনী সার্কিট হাউজ থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রওনা হন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়ি পেরিয়ে যাওয়ার পর ফেনী শহরের ৪ কিলোমিটার আগে মোহাম্মদ আলী বাজারে একদল যুবক গাড়িবহরে হামলা চালায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গণমাধ্যমের চারটি গাড়িসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শতাধিক গাড়ি।
একাত্তর, ডিবিসি, চ্যানেল আই ও বৈশাখী টেলিভিশন, একুশে টিভি, যমুনা, এটিএন নিউজের গাড়ি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের একটি মাইক্রো বাসও হামলার মুখে পড়ে। একাত্তর টিভির আলোকচিত্রী আলম হোসেন ও জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শফিক আহমেদ গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া কালের কণ্ঠ, নয়া দিগন্ত, যুগান্তর, যায় যায় দিন, সংগ্রাম, জি টিভি, আমাদের সময়সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা হামলার শিকার হন।
সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী মারধরের শিকার হন। একাত্তর টিভির এক কর্মী ভিডিও ধারণ করতে গেলে তিনিও মারধরের শিকার হন। একজন হামলাকারী দৌড়ে এসে ওই আলোকচিত্রীকে বলেন, ‘একাত্তর-মেকাত্তর বুঝি না, তুই ক্যামেরায় ছবি কিল্লাই তুললি? তোর ক্যামরা ভাঙিয়া হালামু।’ এ সময় ক্যামেরা নিয়ে টানা-হেঁচড়া করেন তারা।
হামলাকারীরা প্রকাশ্যে লাঠি হাতে বহরে থাকা গাড়িগুলোর সামনের গ্লাস ভাঙচুর করতে থাকে। বিএনপি মহানগর দক্ষিণসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বহু গাড়ি ভাঙচুর হয়। নেতাকর্মীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে হামলার শিকার সাংবাদিকেরা ফেনীর লালপুলের একটি হোটেলে ওঠেন। সেখানে একদল সন্ত্রাসী এসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা এখান থেকে চলে যান। আমাদের নির্দেশনা আছে। নইলে বড় ধরনে বিপদ পড়বেন।’ এমন হুমকিতে সাংবাদিকেরা খাবার না খেয়ে হোটেল ত্যাগ করেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার জানান, তাদের বহরে থাকা মহানগর দক্ষিণের ১০-১১টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক, ছাত্রদল, যুবদলের অনেক গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় অনেকে ভয়ে পালিয়ে যান। বহরে আসা গাড়িগুলো বেছে বেছে ভাঙচুর করতে দেখা গেছে। মোহাম্মদ আলী বাজারের কাছে বহরের বাইরে দূর পাল্লার বাসসহ ট্রাক ও প্রাইভেট কারগুলো ভাঙচুর করেনি হামলাকারীরা। হামলাকারীদের হাতে অস্ত্রও দেখা গেছে।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কুমিল্লার দাউদকান্দি অতিক্রমের আগে দুপুরের দিকে দাউদকান্দিতে বিএনপির কয়েকটির গাড়ি ছাত্রলীগের সশস্ত্র যুবকেরা ভাঙচুর করেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। এ সময় বিএনপি নেতা আবদুস সালাম আজাদ, খন্দকার মাশুকুর রহমান বুলুর সাথে ছিলেন।
এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের ভবেরচর ও কুমিল্লার ইলিয়েটগঞ্জের কাছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ওই দিন দুপুরে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় বলে স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন। মুরাদনগরেও হামলা করা হয়েছে। ফেনীতে যাত্রাবিরতির সময় খালেদা জিয়ার সাথে নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ ঠেকাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বলে স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর ফেনীর মহিপাল ব্রিজ অতিক্রম করার সময় উল্টো পাশের সড়কে দুটি বাসে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
এ নিয়ে মহিপালে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে এই ঘটনা ঘটে। গাড়িবহরে আগে থেকেই যুক্ত থাকা ফেনী জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ ঘটনাকে ক্ষমতাসীনদের হামলা মনে করে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে।
তারাও আরও জানান, ক্ল্যাসিক ও শান্ত পরিবহনের দু’টি বাস স্থানীয় নাজির আহমেদের সিএনজি পাম্প থেকে গ্যাস নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল।
বিস্তারিত আসছে…