ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:৩০ অক্টোবর। এই দিনটি ছিল সাংবাদিক উৎপলের জন্মদিন। প্রতি বছরই তাকে নিয়ে হতো নানা আয়োজন। কিন্তু গতকাল সুখকর কোনো আয়োজন ছিল না উৎপলকে নিয়ে। কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। জন্মদিনের কেক কাটা হয়নি। এসবের পরিবর্তে সবার দাবি ছিল উৎপল ফিরে আসুন। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সরব ছিল উৎপলের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে। তিন সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ রয়েছেন উৎপল।
এভাবেই একের পর এক নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। যাদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও সর্বশেষ সাংবাদিকও নিখোঁজ হলেন। প্রতিটি ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি বা মামলা দায়ের হলেও উদ্ধার হচ্ছেন না নিখোঁজ ব্যক্তিরা। এ দিকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে সর্বক্ষণই উদ্বিগ্ন তাদের পরিবার।
গত ১০ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডিনিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক উৎপল দাস। সাংবাদিক উৎপল দাস (২৯) নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার থানাহাটি এলাকার চিত্ত দাসের ছেলে। তিনি রাজধানীর ফকিরাপুল ১ নম্বর গলিতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত ১০ অক্টোবর দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে পূর্ব-পশ্চিম অফিস থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। ওই দিন থেকে তার ব্যবহার করা মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তার সন্ধান চেয়ে ২৩ অক্টোবর মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে পূর্ব-পশ্চিম কর্তৃপ। ওই দিন তার বাবাও একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গত আগস্টের ২২ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে নিখোঁজ হন পাঁচ ব্যক্তি। তাদের মধ্যে একজন ফিরে এলেও বাকি চারজনের কোনো হদিস নেই। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম দণি বিএনপির সহসভাপতি ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ রায় ও কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইশরাক আহমেদ।
গত ২২ আগস্ট বনানী ফাইওভারের নিচ থেকে অপহৃত হন সাদাত আহমেদ। গাড়ি থেকে নামিয়ে সাদা পোশাকের কয়েকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়।
২৭ আগস্ট রাতে নিখোঁজ হন কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান। ওই রাতে তিনি ও ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া একসাথে পার্টি অফিস থেকে বের হন। দল দু’টির অফিস একই ভবনে। দু’জন গল্প করতে করতে নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে আসেন। এরপর যে যার বাড়ির দিকে যান। ওই রাত থেকেই নিখোঁজ আমিনুর রহমান। এখনো তার কোনো হদিস মেলেনি।
ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়কে গুলশান অ্যাভিনিউ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ২৭ আগস্ট। সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) উল্লেখ করা হয়েছে, বিকেল ৪টা ১৯ মিনিটে ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে বের হন অনিরুদ্ধ রায়। রুপালি রঙের একটি মাইক্রো বাস সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। মাইক্রো বাস থেকে তিনজন বেরিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
গত ২৬ আগস্ট ইশরাক বন্ধুদের নিয়ে ধানমন্ডির স্টার কাবাব এলাকায় খেতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। আর ফেরেননি। সে থেকেই খোঁজ নেই ইশরাকের। তিনি কানাডায় পড়ালেখা করতেন। ইশরাক জুনে ছুটি কাটাতে দেশে আসেন।
এর প্রতিটি ঘটনায়ই সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের হয়েছে। প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের একই বক্তব্যÑ খুঁজে দেখা হচ্ছে। উৎপল দাস নিখোঁজের ব্যাপারে দু’টি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। মতিঝিল থানার ওসি বলেছেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উৎপল দাসকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
গত ২৯ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে নিখোঁজ হন সাইদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ঢাকা ওয়াসার একজন কর্মচারী বলে জানা যায়। তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম স্বামীকে উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
প্রায় প্রতি মাসেই এভাবে দু-চারজন নিখোঁজ হচ্ছেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকজনকে তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে তুলে নেয়ার কয়েক দিন পরে জানা যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরূপ আরো কিছু ঘটনার অভিযোগ রয়েছে।