হঠাৎ খালেদা জিয়ার প্রতি কি নমনীয় হচ্ছে সরকার?

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সড়কপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে। এর আগে বিএনপি দীর্ঘদিন ঢাকাসহ সারাদেশে কোথাও প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জনসভা বা সমাবেশের অনুমতি পায়নি, এমন কী ছোটখাটো কর্মসূচিতেও অনুমতি মিলছিল না দলটির জন্য। সেই বিএনপিরই চেয়ারপার্সন সম্প্রতি লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার পর শোডাউন করেছে দলটির নেতাকর্মীরা।

এরপরেই ঢাকা থেকে অনেকটা রোডমার্চের মতো করেই কক্সাবাজারে গেলেন তিনি, প্রশাসন বা ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে কোনও বাধাও দেওয়া হল না। তাহলে কি সরকার ও ক্ষমতাসীন দল খালেদা জিয়ার প্রতি এক ধরনের নমনীয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে?

বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রায় তিন মাসের সফর শেষে চলতি মাসেই যখন লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরেছিলেন তখন তাকে স্বাগত জানিয়েছিল তার দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক। তাদের এক ধরনের ‘শোডাউনে’র মধ্য দিয়েই বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসায় পৌঁছেছিলেন তিনি।

তার ফেরার আগে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়না জারি হয়েছিলো এবং তিনি ঢাকায় ফিরে জামিনের আবেদন করতে যখন আদালতে যান সেখানে আসা-যাওয়ার পথেও হাজির ছিল দলের বিপুল সংখ্যক কর্মী। এরপর রোহিঙ্গাদের পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণের জন্য তিনি ঢাকা থেকে কক্সবাজার রওনা হলেন, পথে পথে তার দলের অসংখ্য নেতাকর্মীর উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

যে বিএনপিকে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতিই দেয়া হচ্ছিল না দীর্ঘ সময় ধরে, সেই বিএনপিকে হঠাৎ করে কোনও বাধা ছাড়াই এসব কর্মসূচি পালন করতে দেওয়াটা কি সরকারের কোনও ধরনের নমনীয়তার বহি:প্রকাশ? হলে সেটির কারণই বা কী?

জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলছেন তারাও চান বিএনপি তাদের কর্মসূচি পালন করুক কিন্তু অশান্তির কিছু হোক সেটা তারা চান না । তিনি বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দলের কর্মসূচি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। সরকার এ বিষয়ে সব দলকে সহায়তা করবে। কিন্তু কোনও ঘটনা ঘটিয়ে বা নাটক করে ইস্যু বাড়ানোর চেষ্টা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না।”

যদিও ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা খালেদা জিয়ার এমন সমালোচনা করছেন যাতে বলা হচ্ছে ত্রাণ দেওয়া নয় বরং রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে, অর্থাৎ জনসংযোগে বেরিয়েছেন খালেদা জিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থক অনেকেই দাবি করছেন যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া যেন সব সুবিধাই পান সেটি নিশ্চিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই।

আবার কক্সবাজার যাওয়ার পথে ফেনীতে তার গাড়িবহরের একটি অংশে সাংবাদিকদের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটলেও বিএনপি নেত্রী বা তার সহযোগীরা পুরো কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন নির্বিঘ্নেই। এমন কী কক্সবাজারেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঘুরে দেখা এবং ত্রাণ বিতরণও তিনি করেছেন পুরোপুরি নির্বিঘ্নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের এমন সহনশীলতা কিংবা নমনীয়তার কারণ কি কেন্দ্রের নির্দেশনা নাকি স্থানীয় সিদ্ধান্ত?

এমন প্রশ্নের জবাবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেন কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে পাল্টা কোন কর্মসূচি না দিতে। তার কথায়, “আমরা নিজেরাও সহনশীল। আমরা পাল্টা কিছু করতে চাইনি। তবে মানুষ বুঝেছে এটি ছিলো খালেদা জিয়ার নির্বাচনী কর্মসূচি।”

ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের দপ্তর বিভাগ ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী গত বছর পহেলা মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশের পর থেকে গত প্রায় দেড় বছর ধরে তাদের কোনও ধরনের সভা সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছিল না প্রশাসন। ঢাকার বাইরে কয়েকটি স্থানে কর্মসূচিতে গিয়ে নানাভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন দলটির কয়েকজন সিনিয়র নেতা। ঢাকায় কিছু ঝটিকা মিছিল সমাবেশেও পুলিশি হামলার অভিযোগ প্রায়শই পাওয়া গেছে দলের পক্ষ থেকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নিউজ টুডে পত্রিকার সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলছেন নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির একটি উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকারের এ নমনীয়তা একটি পরীক্ষা নিরীক্ষাও হতে পারে। তিনি বলেন, “এবারো যদিও আগের মতোই নির্বাচন হয়, বিরোধী দল মাঠে আসতে না পারে তাহলে সরকারের জন্য অসুবিধা হতে পারে। সে বোধ থেকেই হয়তো একটি পলিটিক্যাল স্পেস বিরোধী দলকে দেয়ার বিষয়টা সরকার চিন্তা করেছে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে না চাইলে তো সবাইকে রাজনীতির অধিকার দিতে হবে।” তবে সে অধিকার ঠিক কতদিন বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি উপভোগের সুযোগ পায় সেটিও পর্যবেক্ষণের বিষয় বলে মন্তব্য করেন মিস্টার আহমেদ।
বিবিসি

Check Also

ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।