গাজীপুর সংবাদদাতা, ১ নভেম্বর ঃ গাজীপুরে জুয়ার আসরে দু’পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় নিহত আরো এক ব্যবসায়ীর লাশ বুধবার সন্ধ্যায় ডোবা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এনিয়ে মঙ্গলবার ভোর রাতের ওই ঘটনায় মোট দু’ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এদিকে সংঘর্ষের ওই ঘটনার পর বুধবার ভোর রাতে পুলিশ আগুন দিয়ে জুয়ার আসর পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। বুধবার উদ্ধারকৃত নিহতের নাম আব্দুল কাদের (৫৩)। সে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী কেন্দুয়া এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। শ্রীপুর বরমী বাজার বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ফল ও পানের ব্যবসা করতেন তিনি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি গত কয়েকদিন ধরে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়া খেলার আসরে জুয়ার বোর্ডে জমা দেয়া টাকা নিয়ে জুয়াড়ী ও বোর্ড পরিচালনাকারীদের সোমবার দিবাগত রাতে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় দৌড়ে পালানোর কালে কয়েক ব্যাক্তি পাশর্^বর্তী হাজেরার বাড়ির ময়লা পানি ও আবর্জনার গর্তে পড়ে যায়। ঘটনার পর পরই স্থানীয়রা ওই গর্ত থেকে গুরুতর অবস্থায় ১০/১২জনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ক্লিনিকে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আজিজুর রহমান নামের সাভারের এক ববসায়ীকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। সে ঢাকা জেলার সাভারের উত্তর রাজাসাম এলাকার মৃত মাইন উদ্দিনের ছেলে।
এদিকে সোমবার রাতে জুয়ার আসরে আসা শ্রীপুরের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের ওই ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ হয়। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায় নি। বুধবার সন্ধ্যায় স্থানীয়রা ময়লা আবর্জনার ওই ডোবায় এক বক্তির লাশ দেখতে পায়। খবর পেয়ে নিহতের ছেলে আকতার হোসেন ঘটনাস্থলে এসে তার বাবার লাশ সনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
অপরদিকে হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজমুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ওই জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে প্যান্ডেলের কিছু অংশ ভেঙ্গে দেয় এবং আগুন লাগিয়ে পুড়ে দেয়।
জয়দেবপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, ঘটনার ব্যাপারে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এবাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমাইয়ুন কবির জানান, সোমবার রাতের ওই ঘটনার ব্যাপারে এবং ঘটনায় নিহত এক ব্যক্তির লাশ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়া হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে ও ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে তদন্তের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রাহেনুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার গঠণ করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- গাজীপুরের এনডিসি কুদরত-ই-খুদা জুয়েল ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রাসেল মিয়া।
উল্লেখ্য, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি গত কয়েকদিন ধরে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়া খেলার আসর পরিচালনা করে আসছিল। টিন দিয়ে অস্থায়ীভাবে বেড়া নির্মাণ করে এবং সামিয়ানা টানিয়ে ওই আসরে একাধিক জুয়ার বোর্ড পরিচালিত হত। জেলা প্রশাসন ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে উচ্ছেদ করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলেও তা আবার শুরু হয়। সর্বশেষ উচ্ছেদের প্রেক্ষিতে কিছু দিন বন্ধ থাকার পর কয়েকদিন পূর্বে পুনরায় জুয়ার আসর চালু হয়। সোমবার রাতের ঘটনা ধামা চাপা দেওয়ার জন্য নিহত ব্যবসায়ী আজিজুরের লাশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়া হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায় স্বজনরা। হাসপাতাল থেকে লাশ গায়েবের বিষয়টি দুপুরে প্রকাশ পেলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জয়দেবপুর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।