সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত ও বিচারকাজ চলার সময় প্রধানমন্ত্রী থেকে মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য এবং শাসকদলের কোনো কোনো নেতা আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। অভিযুক্ত করে বিরূপ প্রচারণা চালাচ্ছেন। যেন তারা মামলার রায় কী হবে তা আগাম জানেন! অথবা তাদের বক্তব্যে আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তদন্ত ও বিচারাধীন বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের এই অপপ্রচার ন্যায়বিচারকেই শুধু প্রভাবিত করতে পারে না, বরং তা আদালত অবমাননার শামিল। এখানেই শেষ নয়। আমার সাজা হবে এবং কাশিমপুর কারাগারে রাখা হবে বলেও কোনো কোনো মন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন। কোনো কোনো মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতা প্রায় নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন- আমাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় করে দেয়া হবে। এ পরিস্থিতিতেই এসব কথা বলছি।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে কত গুরুত্বপর্ণ মামলা বছরের পর বছর ধরে চলছে। কতগুলো মামলা সচল আছে? কিন্তু আমার মামলাগুলো পেয়েছে রকেটের গতি। যেন কেউ পেছন থেকে তাড়া করছে। শীঘ্রই শেষ করো। তড়িঘড়ি করে একটা রায় দিয়ে দাও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। কেন, কোন উদ্দেশ্যে এবং কিসের জন্য এত তাড়াহুড়া? এ তাড়াহুড়ায় কি ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে? নাকি ন্যয়বিচারের কবর হবে?’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বকশিবাজারে বিশেষ জজ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি এ বক্তব্য রাখেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে সে বিষয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন, মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের উচ্চমহলের কার্যকলাপ এবং বক্তব্য থেকেও তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। আর এসব কারণে দেশবাসীর মনে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোতে ন্যায়বিচার হবে না।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার এবং বিচার বিভাগের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। দেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার নিরলস প্রয়াসে কখনও বিরতি দেইনি। আমি বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছি। আত্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলছি না। আমার এ অবস্থার জন্য বাড়তি কোনো সুবিধা বা মর্যাদা দাবি করার কোনো অভিপ্রায় নেই। আমি নিজেকে আইন ও বিচারের ঊর্ধ্বেও মনে করি না।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি শুধু বলতে চাই, একই ধরনের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আরেকজন নেত্রী যেসব সুবিধা ভোগ করেছেন আমি আদালতের কাছে তেমন কোনো সুবিধা দাবি করিনি।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে প্রাপ্ত অধিকার পেলেই খুশি। ন্যায়বিচার ছাড়া কোনো কিছুই চাই না। আজ আমার প্রতি যে আচরণ করা হচ্ছে তা আমার অবস্থা ও ভূমিকার সঙ্গে যায় কিনা? এর মাধ্যমে বৈষম্য করা হচ্ছে কিনা সেটা আদালতের বিবেচনার বিষয় বলে মনে করি।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে কোনো যাদুর কাঠি আছে। সেই যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, চাঁদাবাজিসহ সব মামলা তিনি সরকারে আসার পর উঠে গেছে বা খারিজ হয়ে গেছে। কিন্তু, আমাদের আর কারো হাতে তেমন কোনো জাদুর কাঠি নেই। কাজেই একই সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো সচল ও গতিশীল হয়েছে। হয়েছে নতুন নতুন মামলা।’
আমাদের কাছে যাদুর কাঠি থাকলেও বলতাম না মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। আশা করি সব প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার করা হবে। ন্যায়বিচারের কথা জোর দিয়ে বারবার বলছি। এর কারণ আছে। কারণ, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কিনা সে ব্যাপারে দেশবাসীর ঘোরতর সন্দেহ আছে।’