ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: সৌদি আরবে দুর্নীতিবিরোধী কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শনিবার ১১ রাজপুত্র এবং ১৪ জন সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রীকে আটক করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কী তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তাদের পরিচয়ও জানা যায়নি। তবে সূত্রের বরাত দিয়ে আটককৃতদের দুইজনের পরিচয় প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রবিবার (৫ নভেম্বর) এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে আটককৃতদের মধ্যে প্রভাবশালী ধনকুবের প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালালও রয়েছেন। সেইসঙ্গে সাবেক অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম বিন আসাফও আছেন। তবে প্রভাবশালী সৌদি প্রিন্সদের আটক ও মন্ত্রিপরিষদে রদবদলের নেপথ্যে কী? কে এক্ষেত্রে সুবিধাবান হচ্ছেন? আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এই আটক ও মন্ত্রিপরিষদে রদবদলের ঘটনায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা আরও দৃঢ় হওয়ারই আভাস মিলছে। এই পদক্ষেপ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে রাজ্যের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করবে বলে মনে করছে তারা।
শনিবার (৪ নভেম্বর) একটি রাজ ডিক্রি জারি করে সৌদি আরব। ডিক্রিতে বলা হয়েছে: দুর্নীতির মূল উৎপাটন না করতে পারলে এবং দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা না গেলে মাতৃভূমির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যাবে না।’
এ দিন সন্ধ্যায় সৌদি বাদশাহ সালমান নতুন একটি দুর্নীতিবিরোধী কমিটি গঠন করেন। পরে সৌদি মালিকানাধীন আল আরাবিয়া টেলিভিশন জানায়, ওই দুর্নীতিবিরোধী কর্তৃপক্ষ ১১ জন রাজপুত্র, চারজন বর্তমান মন্ত্রী এবং দশজন সাবেক মন্ত্রীকে আটক করেছে। তবে কাদের কাদের আটক করা হলো তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। পরদিন রবিবার জ্যেষ্ঠ এক সৌদি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে রয়টার্সকে বলেন, আটককৃতদের মধ্যে ধনকুবের প্রিন্স এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান কিংডম হোল্ডিং ৪২৮০ এর মালিক আলওয়ালিদ বিন তালাল ও সাবেক অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আল আসাফ রয়েছেন। তবে সেই কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ করেননি এবং আটককৃত বাকিদের সম্পর্কেও জানা যায়নি। তাছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে কিংডম হোল্ডিং কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
মন্ত্রিপরিষদেও ব্যাপক রদবদল আনা হয়েছে। রয়টার্স জানায়, শনিবার সৌদি আরব জাতীয় গার্ডের প্রধানের পদ থেকে রাজ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য মিতেব বিন আব্দুল্লাহকে সরিয়ে দিয়ে খালেদ বিন আয়াফকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। এ মিতেবকেই একসময় সম্ভাব্য বাদশাহ বলে বিবেচনা করা হতো; তবে দুই বছর আগে মোহাম্মদ বিন সালমানের উত্থান হওয়ার পর সেই সম্ভাবনা নিভে যায়। সৌদি ন্যাশনাল গার্ড এবং নৌবাহিনী প্রধানের পদেও করা হয়েছে রদবদল।
তবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সৌদি প্রিন্সদের আটক করা হলেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কী তা এখনও জানা যায়নি। অবশ্য, সৌদি সংবাদমাধ্যম আল-অ্যারাবিয়া জানিয়েছে, ২০০৯ সালে সৌদিতে যে বন্যা হয়েছিল এবং ২০১২ সালে মার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার যে ঘটনা ঘটেছিল এই বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে প্রিন্সদের আটকের ঘটনায় যুবরাজেরই ক্ষমতা বাড়ছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। যে দুর্নীতিবিরোধী কমিটির সুপারিশে প্রিন্সদের আটক করা হলো মূলত তার নেতৃত্বে ছিলেন বাদশাহ সালমানের পুত্র যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
সৌদি আরবের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, যুবরাজকে প্রধান করে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেখানে যুবরাজ চাইলে যে কাউকে গ্রেফতার করার এবং যে কারও উপরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেবার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশ সৌদি আরবে আরও বেশি করে বিদেশি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে দেশটির যুবরাজ একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদে এ রদবদল যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে রাজ্যের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে সহায়তা করবে; যা দীর্ঘদিন ধরে শাসক পরিবারের আলাদা আলাদা ক্ষমতা শাখা থেকে পরিচালিত হতো।