ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্র্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এতে পরামর্শক খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৭ কোটি ৮৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যা প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তার ৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। পরামর্শক খাতে এত টাকা ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। একই প্রশ্ন বিশ্লেষকদেরও।
ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প পরামর্শকের পকেটেই ৭৮ কোটি টাকা# নেগোসিয়েশনের দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন -ড. মির্জ্জা আজিজ
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২৮৫ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪২৭ কোটি ১১ লাখ ২৯ হাজার টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ থেকে ৮৫৮ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। এরই মধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তা উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় কেন এত বেশি লাগছে, সেটি বোঝা যাচ্ছে না। আগে জানা দরকার কী ধরনের কারিগরি কার্যক্রম আছে। তবে জাইকার ঋণ অত্যন্ত সহজ শর্তে এবং কম সুদে পাওয়া যায়। অনেক সময় তারা ঋণ মওকুফও করে দেয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নেগোসিয়েশনের (আলোচনার) দক্ষতার অভাব রয়েছে। তারা ভালোভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসব ব্যয় কমাতে পারতেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের এক প্রকল্পে তারা যে প্রস্তাব দিয়েছিল আমি একবার তা মেনে নিইনি। পরে তারা আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। এক্ষেত্রে নেগোসিয়েশনের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২৬ জন পরামর্শকের কাজের জন্য এ খাতে এ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকল্পে মোট ঋণ সহায়তার ৭ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যয় (প্রকৃতপক্ষে তা ৯.০৬ শতাংশ) পরামর্শক খাতে রাখার যৌক্তিকতা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) উল্লেখ করতে হবে। তাছাড়া প্রকল্পের আওতায় কতজন পরামর্শক নিয়োগ করা হবে, তার উল্লেখসহ পরামর্শকের ধরন (স্থানীয়/বৈদেশিক), যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মপরিধি জানাতে হবে।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এএন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, দাতাদের অর্থায়ন থাকলে তাদের চাহিদা মতো পরামর্শক ব্যয় রাখতে হয়। তাছাড়া ১০ শতাংশ পর্যন্ত পরামর্শক ব্যয় রাখা যেতে পারে। এটা খুব বেশি বলা যায় না।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২৯ জুন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও জাইকার মধ্যে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর আগে জাইকার অর্থায়নে ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট ও ফরিদপুর এলাকায় ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, এলজিইডির ক্ষুদ্র পানিসম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় স্থানীয় জনগণ বা ইউনিয়ন পরিষদের প্রস্তাবিত এলাকায় বন্যা ব্যবস্থাপনা, পানি নিষ্কাশন বা জলাবদ্ধতা নিরসন, পানি সংরক্ষণ এবং ভূ-উপরিস্থ পানি দিয়ে সেচ উন্নয়নে পানিসম্পদ সংক্রান্ত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়ে থাকে। অবকাঠামোর মধ্যে খাল পুনঃখনন, বাঁধ তৈরি, স্লুইসগেট, রেগুলেটর ও সেচনালা নির্মাণ অন্যতম।
স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, পানিসম্পদের উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনা করে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রামীণ জনগণের অধিক কর্মসংস্থান তৈরির জন্য এলজিইডি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ১৭৩টি ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন উপপ্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। পানিসম্পদ অবকাঠামো উন্নয়নে দেশে আরও চাহিদা থাকায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের ২৯ জেলায় আরও ১৪৫টি নতুন উপপ্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ১৪৫টি পুরনো উপপ্রকল্পের সম্প্রসারণ, পুনর্বাসন ও বিশেষ উন্নয়নের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্রমতে, নতুন উপপ্রকল্পে রয়েছে বন্যা ব্যবস্থাপনা, পানি নিষ্কাশন, পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির অফিস ভবন নির্মাণ ইত্যাদি। ১৩৬টি পুরনো উপপ্রকল্পের সম্প্রসারণ বা পুনর্বাসন করা হবে। ৯টি পুরনো উপপ্রকল্পের বিশেষ উন্নয়ন (গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ ও বাজার স্থাপন) এবং ১৪০ দশমিক ২৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।