ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরাঃ জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক মেধাবী ছাত্র সাতক্ষীরার মনিরুল ইসলাম। ভ্যান চালিয়ে নিজের লেখাপড়া সহ সংসার চালান। সাতক্ষীরা আগরদাড়ি কামিল মাদ্রাসা থেকে কামিল (মার্স্টাস) প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন। পাশাপাশি ছোট ভাই-বোনের পড়াশোনা করাচ্ছেন।
পিতামাতার অভাব অনটনের সংসারে মনিরুল ইসলামের জন্ম সাতক্ষীরা সদরের আগরদাড়িতে ১৯৯১ সালে।
২০০৬ সালে আগরদাড়ি আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে ‘এ’ গ্রেডে পাশ করেন। পরে ২০০৮ সালে আলিম,২০১১ সালে ফাযিল ও ২০১৩ সালে কামিলে প্রথম বিভাগে অর্থাৎ ‘এ গ্রেডে পাশ করেন। লোপড়া চলার সময়ে সে শুক্রুবার ও ছুটির দিন সে ভ্যান চালাত। চাকুরি না পেয়ে ভ্যান চালানো পেষায় যেন তাকে বেঁছে নিতে হল।
জীবন সংগ্রামী মনিরুল হকের সাথে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়। কথার ফাঁকে ফাঁকে শোনায় তার সংগ্রামী জীবনের গল্প।
এরপর আবেগ-আপ্লুুত হয়ে তার কষ্টেগাঁথা ঘটনার বর্ণনা করেন। কীভাবে না খেয়ে, অন্যের বাড়ি কাজ করে দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে আছেন তা শুনালেন। নীরবে তার কষ্টের কথা বলে চোখের পানি ফেললেন।
তার সংগ্রাম মুখর জীবনের কথা শুনতে যেয়ে আবেগ-আপ্লুুত হয়ে পড়ে এ প্রতিবেদক। চোখে নিরবে পানি ঝরতে থাকে। এমনকি কছিুক্ষণের নিরবতা–।
তবে জীবনযুদ্ধে পরাজিত হতে চায় না মনিরুল। তার বিশ্বাস এ লড়াইয়ে সে বিজয়ী হবে। তবে এখন চরম প্রতিকূলতার মাঝে দিন কাটাচ্ছে। ভ্যান চালানোর পাশা পাশি মনিরুল মাঠের সকল কাজ রপ্ত করে ফেলেছে। ধান কাটা,পাট ধোঁয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ। প্রতি দিনের রোজগার থেকে এবার তার ভ্যানে একটি মটর লাগিয়েছে। কিন্তু রাস্তায় উঠলে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হয়রানিতে তার ভ্যান চালানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। এর পরও গ্রামের দিকে সে এভাবে তার জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা সদর উপজেলার আগরদাড়ি গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুল বারীর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বড় মনিরুল। স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে আব্দুল বারীর সংসার চালানোই ছিল দায়। তারপরে লেখাপড়ার খরচ চালানো তো দুঃসাধ্যের ব্যাপার। অভাবের কাছে হার না মেনে বড় ছেলে মনিরুল ইসলাম ছোট বেলা থেকে লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে সে ভ্যান চালিয়ে যে টাকা আয় হতো তা দিয়ে মাদ্রাসার বই-খাতা-কলম কিনতো। এভাবে নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই বহন করতো।
সে এখন শুধু নিজের লেখাপড়ার খরচ নয়; তার ছোট ভাই সাইফুল ইসলান ও ছোট বোন রওশনআরার লেখাপড়ার খরচও বহন করতে হয়। সাইফুল ইসলান সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অর্থস(অর্থনীতি) দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র। এবর্ষে তার রেজাল্ট প্রথম। এছাড়া তার এসএসসি ও এইসএসসিতে তার‘এ’প্লাস ছিল। প্রতি মাসে তার লেখাপড়া খরচ বাবদ প্রায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া ফরম ফিলাপে তো মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। ছোট বোন রওশন আরা এবছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তার ও ফরম ফিলাপে অনেক খরচ। সব মিলিয়ে বর্তমানে তাকে অনেক টাকার প্রয়োজন। প্রতিদিন ভ্যান চালিয়ে দুই থেকে তিনশ টাকা আয় করেন। এতে কোন কোন রকমে তাদের সংসার চলে।
অভাব যেন তার চীর সঙ্গী। পায়ের জুতা পর্যন্ত তার ছিল না। তাই অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়ে তাকে মাদ্রাসাতে খালি পায়ে যেতে হত। কয়েকটি ঈদ ও কাটিয়েছে খালি পায়ে। নতুন জামা কাপড় কেনা তো দূরে কথা।
ছোট বেলা থেকে তার বাবা পড়া লেখার খচর দিতে পারতো না। তাই বার বার তাকে মাদ্রাসাতে যাওয়া বাদ দিয়ে তার সাথে কাজ করার কথা বলতেন। এমনকি কয়েক দিন মনিরুলের বই ফেলে দেয় তার বাবা। এর পরও নিজে লোকের ক্ষেতে কাজ করে নিজের বই,গাইড,খাতা কলম ও পরীক্ষার ফি দিত। জীবনে এ পর্যন্ত আসার পথে এমন কথা তার কাছে কেউ জানতেও চায়নি। পাওয়া বড় কথা নয় তার কথা যে আজ মিডিয়াতে প্রকাশ পাচ্ছে এটা শুনেই সে অনেক খুশি। কান্নার মাঝে যেন হাসির ঝিলিক মিলল।
তার নামে এলাকাতে তেমন কোন অভিযোগ নেই। অনেকে জানালেন,সে একজন মেধাবী ছাত্র। নম্্র,ভদ্র ও বিনয়ই। তাই এলাকার লোকজন তার ভ্যানে বেশি বেশি যাত্রী হত ও ভাড়াটাও একটু বাড়িয়ে দিত। নিয়মিত নামাজ কালামের পাশা -পাশি সে পিতা মাতা ও গুরুজন ভক্ত ছিল। সংসারে একটু স্বচ্ছলতা ফিরলেই বিয়ে করার ইচ্ছা আছে তার।
প্রতি দিনের রোযগার থেকে পাঁচ-দশ টাকা রেখে সে একটি মোবাইল সেট কিনেছে সে। মেধাবী এই ছাত্র আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন বোধ না করলেও একটি চাকুরির জন্যে সমাজের সকলের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়েছে। সাইফুল ইসলামের মোবাইল নং-০১৭০৭ ৬৮৭০১৮।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …