ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:লন্ডনে চিকিৎসা শেষে প্রায় তিন মাস পর খালেদা জিয়া দেশে ফিরেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার এবারের বিদেশ সফর নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা ছিল আগে থেকেই। তিনি কী পরিকল্পনা নিয়ে দেশে ফিরেন সেই হিসাব-নিকাশও চলছিল। বলা হচ্ছিল, দেশে ফিরেই সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আন্দোলনের কর্মসূচিও দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছিল।
কিন্তু না, তিনি রোহিঙ্গাদের দেখতে যাওয়ার যে সাধারণ কর্মসূচি দিলেন সেটিই অবশেষে বিএনপির জন্য অসাধারণ হয়ে দেখা দিলো। এ কর্মসূচিটির মাধ্যমে সারাদেশে যে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন তাতে গোটা রাজনীতির হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে বলা যায়। এই সফরকর্মসূচি সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারের কাছে যে তথ্য দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ লাখ লোককে রাস্তায় নামতে সক্ষম হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। এটা একটা বিশাল সাফল্য, যা কল্পনাতীত। টেলিভিশনের পর্দায় লাইভ দেখা গেছে, তাকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। এও দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ রাস্তায় রাস্তায় বাধা দিয়েছে, রাস্তার উপর বড় বড় গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়েছে, যাতে খালেদা জিয়ার কাছে মানুষ ভীড় করতে না পারে। উল্টো এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। এতো কিছুর পরও রাস্তায় মানুষের ঢল দেখে অনেকে হতভম্ব হয়ে গেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা, একে খালেদা জিয়ার ‘গণজোয়ার’ চমক বলে আখ্যায়িত করছেন। সরকারি দল আওয়ামী লীগও নড়েচড়ে বসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নতুন হিসাব-নিকাশ করতে শুরু করেছেন। বিএনপি ছাড়া একতরফা ‘নির্বাচন’র সম্ভাবনা আর দেখছেন না কেউ। অন্য কোনো অঘটন না ঘটলে বিএনপির ক্ষমতায় আরোহনের পথও পরিষ্কার হয়ে উঠছে।
দীর্ঘদিন মনমরা ও হতাশ থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীদেরকে এ মুহূর্তে বেশ উজ্জীবিত বলে দেখা যাচ্ছে। মানুষ হুমড়ি খেয়ে রাস্তায় নামার লক্ষণ দেখে তারা বেশ আশাবাদী। এমন আশাবাদী যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতেও এখন তাদের ভয় নেই, যদিও তা তারা করবে না। এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তেই তারা অটল আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে। তবে যে কোনও ধরনের নির্বাচনে এখন তাদের বিজয় আর কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক পরিবেশও তাদের বেশ অনুকূলে। তাই সরকারি দল আওয়ামী লীগও তাদেরকে এখন সমীহ করতে বাধ্য হচ্ছে।
বস্তুত এবার বিদেশ থেকে ফিরেই খালেদা জিয়া একের পর এক চমক দেখাচ্ছেন। বিদেশ থাকাকালে তার বিরুদ্ধে একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। সেগুলোকে উপেক্ষা করেই দেশে ফিরেছেন। অনেকে আশংকা করছিলেন, দেশে ফিরলেই তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ মন্ত্রীরা এমনই ‘ব্যবস্থা’ নেয়ার কথা বলছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া দেশে ফেরার সময় লন্ডনে বিমান বন্দরে এ প্রসঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, পারলে গ্রেফতার করুক। দেখা গেলো, তিনি দেশের পথে থাকাকালেই পুলিশের আইজিপি শহীদুল হক প্রকাশ্যে বক্তৃতায় এই মর্মে আশ্বস্ত করেছেন যে, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে না। এমনকি আইজিপি এও বলেছেন, খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সম্মানিত ও বিজ্ঞ ব্যক্তি। তাকে আদালতে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়া বিদেশ থেকে ফেরার দিনও বিমান বন্দরে প্রচুর লোক সমাগম হয়েছিল। বিমান বন্দর থেকে বাসা পর্যন্ত মানুষ তাকে সম্বর্ধনা জানিয়েছিল। তবে তার ঢাকা-কক্সবাজার সফরকে ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও যেভাবে রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে এতে সবাই অবাক হয়েছে।
বিএনপির সঙ্গে সুষমা স্বরাজের বৈঠকটিকে বেশ নিষ্প্রাণ ও সাদামাটাভাবে দেখা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, বিএনপি যা চেয়েছিল সেটি হয়নি। কিন্তু, ডিপ্লোমেসি সব সময় ভিন্ন একটি বিষয়। ডিপ্লোমেসিতে ভেতরের এবং বাইরের অবস্থা কখনও এক হয় না। যতটা জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ বৈঠকটি ছিল নিছক ‘আইওয়াশ’ সাক্ষাত। গুরুত্বপূর্ণ সব আলোচনা লন্ডন বসেই বেগম জিয়া শেষ করে এসেছেন। কখন কী করবেন, রাজনীতির ছকও তিনি লন্ডনে বসে সাজিয়ে এসেছেন। তারই একটি ‘চমক’ ঢাকা-কক্সবাজার সফর। এরপর পর্যায়ক্রমে ঢাকার বাইরে আরও সফরে বের হবেন এবং সেইসব সফরও প্রত্যেকটি তুরুপের তাস হিসেবে আবির্ভুত হবে। ধীরেস্থিরে বেশ পরিকল্পিত পদক্ষেপে তিনি এগুচ্ছেন।
তবে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলা মামলাগুলো এখন বেশ দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে এখন আর এ ব্যাপারে চিন্তিত মনে হচ্ছে না। মামলায় বিলম্ব বা গড়িমসিও এখন তেমন একটা করছেন না তিনি। নিয়মিত আদালতে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সাফাই স্বাক্ষীতে নিজের বক্তব্যও পেশ করেছেন। সাফাই স্বাক্ষী দিতে গিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বক্তব্যও উপস্থাপন করছেন। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, মামলার রায় যা-ই আসুক, সাজা হোক বা না হোক উভয়টিই তাদের জন্য মঙ্গলজনক ফলাফল বয়ে আনবে।
যদিও বেগম জিয়ার ঢাকার বাইরের সফরে হামলা হয়েছে কিন্তু এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আখ্যায়িত করছেন কেউ কেউ। কারণ, বিএনপির উপর এর আগেও অনেক হামলা-মামলা হয়েছে কখনও এতটা সমীহ করতে দেখা যায়নি। সরকার এখন কেন সমীহ করছে, এরও নিশ্চয়ই কোনও হেতু আছে। সংবাদ মাধ্যমগুলো একে নমনীয়তার আভাস বলে বিবেচনা করছেন। সরকার রাজনীতির নার্ভ বুঝতে পেরেছে। নানান ইস্যুতে এমনিতেই সরকার কোনঠাসা। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় না রাখলে বিপদ বাড়তে পারে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
মনে করা হচ্ছে, আগামী ১২ নভেম্বর রোববারের সমাবেশ স্মরণকালের বৃহত্তম মহাসমাবেশে রূপান্তরিত হতে পারে। বেগম খালেদা জিয়া এই সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। ইতিমধ্যেই এই সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পুলিশের আইজিপি শহীদুল হক বুধবার এক বক্তৃতায় বলেছেন, বিএনপির মিছিল-সমাবেশে কোনও বাধা নেই। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বিএনপি এই সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে।
এদিকে আজ বৃহস্প্রতিবার আদালতে সাফাই স্বাক্ষীর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি তার উপর সকল অন্যায় আচরণের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে শেখ হাসিনার উপর এসব আচরণের প্রতিশোধ নেবেন না। বেগম খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের ধরন এবং তার দৃঢতা দেখে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, তাহলে কি খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা পেয়ে গেছেন ইতিমধ্যে?শীর্ষনিউজ২৪ডটকম
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …