খুলনা অফিস : দেশের সাদা সোনা হিসাবে খ্যাত গলদা চিংড়ির দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার দর পড়ে যাওয়ায় কয়েক লাখ চিংড়ি চাষির মাথায় হাত পড়েছে। গত বছর প্রতি কেজি গলদার দর ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা ছিল এ বছর তার দর পতন হয়ে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি মাত্র সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা। গলদা’র চাষিরা এর জন্য দায়ী করছে এ ব্যবসার মধ্যসত্বভোগীদের। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তারা গলদা’র আন্তর্জাতিক বাজারের দর পতনকে দায়ী করছেন।
ফিস ফার্ম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ফোয়াব) চেয়ারম্যান শামসুর রহমান শাহিন জানান, প্রতি বছর মার্চ থেকে ফাল্গুন মাস গলদার মওসুম। এ বছর গলদার দর প্রতি কেজিতে পতন হয়েছে ৬শ’ টাকা। এত কম বাজার দরে চাষিরা খরচের টাকা ওঠাতে পারছে না। হারির টাকা, মাছের খাবার, লেবারসহ সব খরচ বাদ দিলে এক কেজি গলদার বাজারে ওঠালে দাম পাওয়া যায় না। তিনি আরও জানান, দাদন, ব্যাংকের ঋণ, ফড়িয়াদের টাকা পরিশোধের কথা মাথায় রেখে একজন চাষিকে গলদার চাষে নামতে হয়। আর লাভের টাকা মধ্যসত্বভোগীদের মধ্যে ফড়িয়া আর কমিশন এজেন্টদের হাতে চলে যায়। এই এজেন্টদের সাথে আবার মাছ কোম্পানির সাথে যোগসাজস রয়েছে। বাগেরহাটেই লাখেরও বেশি গলদার চাষি রয়েছে যারা গলদার চাষ করে এখন বড় বিপাকে পড়েছে।
ফোয়াবের খুলনা শাখার সভাপতি শাকিল হোসেন জানান, গলদা চাষের খরচ ফিস ফিডে (মাছের খাবার) চলে যায়। ২৫ কেজির এক বস্তা ফিস ফিডেরই দাম ৯শ’ থেকে ১১শ’ টাকা। সাত বছর আগে যে জমির হারি ছিল ৫ হাজার এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজারে। অন্যান্য খরচ মিটিয়ে গলদার চাষে যে ব্যয় হয় তাতে আগামীতে ৮০ ভাগ এ অঞ্চলের চাষিরা ঝড়ে পড়বে বলে তার আশঙ্কা।
গলদার দর পতনের জন্য খুলনা মৎস্য পরিচালন বিভাগের উপ-পরিচারক প্রফুল্ল কুমার সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের দর পতনকে দায়ী করে বলেছেন, বড় আকারের গলদার প্রধান মার্কেট হচ্ছে ব্রিটেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সে দেশ বেরিয়ে যাওয়ায় মুদ্রার মান কমে গেছে। যার কারণে সে দেশের খাদ্য রসিকরা এখন পয়সা বেশি দিয়ে বড় আকারের গলদা আর খাচ্ছে না। ডিমান্ড ও সাপ্লাই কমে যাওয়ায় বেশ কয়েক বছর আগের মত গলদা ওদেশে রফতানি খুব কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের গলদার বাজারে।
তবে তিনি মাঝাড়ী আকারের গলদার দাম ঠিক আছে বললেও চিংড়ি চাষিরা তার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। ফোয়াবের কর্মকর্তারা সরকারের চিংড়ি খাতের উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। তারা জানান, এখাতে উপরের পর্যায়ে প্রণোদনা দেয়া হয়। আর ভর্তুকি দেয়া হয় যাদের জন্য সেই চাষিদের দুয়ারে কখনও পৌঁছায় না। প্রকৃত চাষিরা যাতে সরাসরি সরকারের সুযোগ সুবিধা পায় তার জন্য নীতিমালা পরিবর্তনেরও দাবির বিষয় জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মিঠা পানিতে দেশের মধ্যে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও যশোর জেলায় প্রতি বছর গলদার চাষ হয়ে থাকে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে দেশে মোট গলদার চাষ হয় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কয়েক লাখ ক্ষুদ্র ও বড় চাষি এর সাথে জড়িত।
তবে চিংড়ি চাষিরা জানান, গলদার দর কমলেও বাগদার বাজার দর ঠিক আছে। ২৮ থেকে ৩০ গ্রেডের প্রতি কেজি বাগদা বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭শ’ থেকে ৯শ’ টাকায়। গত বছরের চেয়ে কেজিতে এবছর ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
Check Also
ইসলাম-বৌদ্ধ-হিন্দু-খ্রিষ্টান, সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই: সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান
সব ধর্ম, ইসলাম-বৌদ্ধ-হিন্দু-খ্রিষ্টান, সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চান বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। …