ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট::শেষ পর্যন্ত রাজনীতির চাকা ঘোরা শুরু হয়েছে। গুলশান থেকে বেরিয়েছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে এক ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। অনেকটা সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছে সরকারও। যদিও এখন প্র্যাকটিস ম্যাচের মুডেই রয়েছেন রাজনীতির মাঠের খেলোয়াড়রা। তারা হিসাব কষছেন।
মূল পর্ব নিশ্চিতভাবেই ২০১৮ সালে।
সংবিধান দুই ধরনের ব্যবস্থাই রেখেছে। ২০১৮-এর শেষ অথবা ২০১৯ সালের শুরুতে হবে আগামী নির্বাচন। তারিখ অবশ্য খুব বেশি মানুষ জানেন না। হয়তোবা কেউই জানেন না। কারণ রাজনীতির চিত্র আর গ্যারান্টির ওপর নির্ভর করে বহুকিছু। তবে নির্বাচন যখনই হোক রাজনীতির ফয়সালা ২০১৮ সালেই হয়ে যাবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন নির্দলীয় সরকারের দাবি নতুন করে উত্থাপন করেছেন। বিএনপি নেতারা এর আগে সহায়ক সরকার নিয়ে নানা কথা বললেও খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে সহায়ক সরকার কথাটি উচ্চারণ করেননি। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের মতো অনেকেই মনে করেন, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নেত্রী নির্দলীয় সরকারের দাবির অবস্থানে অনড় থাকতে পারবেন না। আপাত মাঠে সমর্থন দেখে বিএনপিতে স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জের পাহাড়। দলটির সাবেক দুই এমপির সম্প্রতি সাজা হয়েছে। এমন মামলার আসামি সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীই। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আরো অনেক নেতার বিরুদ্ধেই রায় ঘোষিত হতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ দুটি মামলায় রায় কী হবে, রায়ের পর খালেদা জিয়ার স্থান কোথায় হবে- তা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। তিনি কি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, হয়তোবা উচ্চ আদালত পর্যন্ত এসব মামলায় চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে না। তবে রায় বিরুদ্ধে গেলে বিএনপি কি নির্বাচনে যাবে? দলটিতে এ নিয়ে নানা মত। কোনো কোনো নেতা অবশ্য মনে করেন, নির্বাচনে না যাওয়া মানে হবে সরকারের ফাঁদে পা দেয়া। আইনি চ্যালেঞ্জের বাইরে বিএনপির সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ দুটি। এক. দলের নেতাকর্মীদের মাঠের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা। দুই. আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি নির্ভর করবে দলটি কতটা দরকষাকষির ক্ষমতা অর্জন করতে পারে তার ওপর।
অন্যদিকে, সরকার এখনো অনড় অবস্থানেই রয়েছে। এবং সেটাই স্বাভাবিক। সোহরাওয়ার্দী থেকে খালেদা জিয়া দুটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেছেন। নির্দলীয় সরকারের পাশাপাশি বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন চেয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ এরইমধ্যে এ দুটি দাবিই নাকচ করে দিয়েছে। সেনা মোতায়েন নিয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সোমবার বলেছেন, নির্বাচনে সেনা থাকবে তবে কিভাবে থাকবে সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা অবশ্য গতকাল রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা বাসস-কে বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, বক্তব্যটি তার ব্যক্তিগত। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, গত নির্বাচনে বিরোধীদের চাপে রেখে আওয়ামী লীগ সফলতা দেখিয়েছে। এবারও নিশ্চিতভাবেই সরকার একই কৌশলে হাঁটবে। নাগরিক সমাজের আগের মতো কোনো তৎপরতা নেই। ভবিষ্যতেও তারা তৎপর হওয়ার তেমন সুযোগ পাবেন না। সদ্য পদত্যাগ করা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে নানা বিষয়ে সরকারের টানাপড়েন তৈরি হয়েছিলো। বাজারে ছড়িয়ে পড়েছিলো নানা গুজব। শেষ পর্যন্ত বিচারপতি সিনহাকে পদত্যাগই করতে হয়েছে। এখন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি কে হন সেদিকে দৃষ্টি রয়েছে দেশের। নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসবে বিরোধীদের ওপর চাপ ততই বাড়তে পারে। মামলা নিষ্পত্তির গতিও হয়তো বাড়বে।
হার্টে ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে ফিরেছেন। তবে শারীরিক কারণেই তিনি এখন আগের মতো সক্রিয় নেই। আরো বেশ কিছুদিন বিশ্রামে থাকতে হতে পারে রাজনীতির এই কুশীলবকে। শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি নিবন্ধনও হারিয়েছে জামায়াত। দলটির নেতারা স্বতন্ত্রভাবে লড়তে চাইলেও আগামী নির্বাচনে বাধার মুখে পড়তে পারেন। বিএনপির সঙ্গে দলটির এরইমধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মহাজোটের কোনো কোনো শরিক মুখ খুললেও সবাই জানেন ভোটের রাজনীতিতে তাদের কোনো প্রভাব নেই। নৌকা ছাড়া ভোটে গেলে তাদের কী অবস্থা হবে তা বোঝার জন্য রাজনৈতিক জ্যোতিষী হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
টার্নিং পয়েন্ট ২০১৮। সহসাই বহুকিছু খোলাসা হওয়া শুরু করবে। বাংলাদেশের রাজনীতি ঘিরে আন্তর্জাতিক সমীকরণে অবশ্য তেমন কোনো পরিবর্তনের আভাস নেই। দেশীয় রাজনীতির ওপরই নির্ভর করবে বহুকিছু। mzamin