খুলনা অফিস : খুলনায় যৌন হয়রানির ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যৌন হয়রানীর শিকার হয়ে ও লাঞ্ছিত হয়ে গত ২২ দিনে তিন ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটি এ ধরনের উত্ত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ১৩ অক্টোবর রাতে শামীম হাওলাদার শুভ ও তার সহযোগীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে খুলনা সরকারি করোনেশন বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী শামসুন নাহার চাঁদনি (১৩) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় চাঁদনির বাবা রবিউল ইসলাম বুলু বাদী হয়ে পাঁচজনের নামে থানায় মামলা করেন। পুলিশ এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করেছে।
২৭ অক্টোবর নিজ বাড়ি থেকে বাজুয়া এসএন ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী বন্যা রায়ের (১৮) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ এনে বন্যার বাবা অনিমেষ রায় দাকোপ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বর্ণদীপ জোয়াদ্দার ও তার বন্ধু অভিজিত ওরফে অভিকে আসামী করে মামলা করে। প্রধান আসামী অভিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপর আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
গত ৫ নবেম্বর প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে দাকোপের লাউডোব সরকারি এলবিকে ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জয়ী মল্লিককে (১৮) লাঞ্ছিত করে বাজুয়া এসএন ডিগ্রি কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি ইনজামামুল হক। ওইদিন রাতে জয়ী কলেজ হোস্টেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় ইনজামামের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে মামলা করেন জয়ীর বাবা। গত ১২ নবেম্বর সে খুলনায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে।
খুলনা পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিনবন্ধু দেবনাথ বলেন, ‘কিছু দিন আগে কলেজ হোস্টেলের পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে মেয়েদের ভয় দেখানো হতো। উচ্ছৃঙ্খল কিছু যুবক নিয়মিতই মেয়েদের বিরক্ত করতো। এরপর পুলিশে অভিযোগ দেয়া হয়েছিল।’
সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলি আজিজি বলেন, ‘চাঁদনির আত্মহত্যার পর স্কুলের পক্ষ থেকে পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। স্কুল চলাকালীন উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের আনোগোনা ঠেকাতে পুলিশি টহল জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে এতে।’
গোবরচাকা ন্যাশনাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কৌশিক কুমার বর্মন বলেন, স্কুলের পক্ষ থেকে উত্ত্যক্তকারীদের উৎপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে থানায় একাধিকবার অভিযোগ দেয়া হয়েছে। পুলিশ মাঝে মাঝে স্কুলের সামনে এসে টহল দেয়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর বখাটেরা ফের মেয়েদের বিরক্ত করে।’
এ ব্যাপারে কামরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে বয়রা হাজী ফয়েজ উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে যাওয়ার পথে টেক্সটাইল মিল এলাকায় এক যুবক প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করতো। ওই যুবককে একাধিকবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে সেখান থেকে বাসা বদল করেছেন তারা।
সরকারি মজিদ মোমোরিয়াল সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার বলেন, ‘২৫-২৬ অক্টোবর কলেজে যাওয়ার পথে তিন-চার যুবক আমার পিছু নেয়। এ কথা বাসায় জানানোর পর মা নিয়মিত কলেজে পৌঁছে দিয়ে যান।’
খুলনা জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান বলেন, ‘এখনও বাল্য বিয়ের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বখাটেদের উৎপাত। অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে উত্ত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধির ফলে কেএমপিতে নারী নির্যাতন মামলার সংখ্যা কমে আসছে। প্রতিমাসেই নারী নির্যাতন মামলার হার কমছে।
Check Also
সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন
ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা: ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …