ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: ভেঙে যাচ্ছে ঢালিউডের জনপ্রিয় তারকা দম্পতি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের সংসার। গত কয়েকদিন ধরে এমন গুজবই ভেসে বেড়াচ্ছে মিডিয়ায়। বিষয়টি শুধু গুজবেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিচ্ছেদ নিয়ে শাকিব খানের নীরবতা এর সত্যতার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ। কেন এই বিচ্ছেদ? এর নেপথ্যের কারণ কী? শাকিব খানের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে বের হয়ে এসেছে অপুর প্রতি শাকিবের বেশ কিছু অভিযোগ ও অভিমান। বিস্তারিত লিখেছেন অনিন্দ্য মামুন
লুকিয়ে প্রেম, গোপনে বিয়ে এবং অবশেষে বিচ্ছেদের সুর। মিডিয়াজুড়ে এখন শাকিব অপুকে নিয়ে চলছে বাহাস। প্রায় ৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে শাকিব-অপুর। বিষয়টি সত্যি নাকি মিথ্যে- এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শাকিব খানের কাছের মানুষ যারা, তারা নিশ্চিত করেছেন শিগগিরই তাদের মধ্যে ডিভোর্স ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু অপু বিষয়টি নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি। বলেছেন, তিনি কিছু জানেনই না। যদি সত্যিই হয় তাহলে কেন এই বিচ্ছেদ? গুজব নিয়ে এরই মধ্যে অনেকেই অনেক রকম কথা বলছেন। ব্যক্ত করেছেন নিজেদের অনুভূতি। চলচ্চিত্র পরিচালক স্বপন আহমেদ ফেসবুকে তার একাউন্টে লিখেছেন, ‘শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস ভুল পথে হাঁটছেন। সন্তানের ভবিষ্যতের চেয়ে তার পিতামাতার ক্যারিয়ার বা রাগ, ক্ষোভ, ইগো বড় হতে পারে না। টাকা দিয়ে কখনও ভবিষ্যৎ গড়া যায় না।’
শাকিব-অপুর বিবাহ বিচ্ছেদের গুঞ্জনে সরব সোশাল মিডিয়াসহ গণমাধ্যমও। সাধারণ মানুষও বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় মেতেছেন। যদিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে ‘এ তারকা জুটির মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটছে শিগগিরই। কিন্তু শাকিব বা অপু- কারও কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই সেখানে। শাকিব খানও সরাসরি স্বীকার করেননি। আবার বিষয়টি উড়িয়েও দেননি। বরাবরই বলে এসেছেন, সময় হলে সবকিছু জানতে পারবেন।’ মূলত তার এমন মন্তব্য থেকেই গুজবের সত্যতার পরিমাণ বেড়ে যায়। এ নিয়ে অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে বেশ কিছু তথ্য। শাকিব খান নাকি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন ডিভোর্সের জন্য। কিন্তু কেন?
মূলত, আজ থেকে সাত মাস আগে অপু যখন প্রথমবার আব্রাম খান জয়কে শাকিবের ছেলে বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে একটি টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তখন থেকেই দু’জনার মধ্যে মনোমালিন্য শুরু। সেসময় অপু বেশ কিছু অভিযোগ করেছিলেন শাকিবের প্রতি। বলেছিলেন, বিয়ে করেছিলেন তারা ২০০৮ সালে। শাকিবের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে এতদিন সবকিছু লুকিয়ে রেখেছেন। তখন বিয়ে এবং সন্তানের বিষয়টি শাকিব স্বীকার করলেও হুট করে এভাবে টিভি চ্যানেলে অপুর সাক্ষাৎকার দেয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। তিনি বলেছেন, স্বাভাবিকভাবেই তাদের সংসার চলছিল। সন্তান এবং সংসারের যাবতীয় খরচও মেটাচ্ছেন তিনি। ১০ এপ্রিল যখন টিভি চ্যানেলের লাইভে এসেছিলেন অপু, তার আগের দিনও নাকি তিনি অপুকে তার চাহিদামতো সংসার এবং সন্তানের জন্য ১২ লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু অপু তাকে কিছুই না জানিয়ে টিভির লাইভে এসে সবকিছু ফাঁস করে দেন। এ নিয়েই মূলত তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
এরপর পহেলা বৈশাখে স্বামী-স্ত্রী সন্তানসহ একসঙ্গে মিডিয়ার সামনে উপস্থিত হলেও পরবর্তীতে তাদের একসঙ্গে আর কখনোই দেখা যায়নি। দু’জনেই আলাদা থাকছেন। কথাও নাকি হয় না দু’জনের মধ্যে। এরমধ্যে ২৭ সেপ্টেম্বর জয়ের প্রথম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বাবা শাকিব খানের উপস্থিত না থাকার কারণে বিচ্ছেদের বিষয়ে গুঞ্জনের ডালপালা মেলতেই থাকে। অবশেষে সেই গুঞ্জনই সত্যি হতে চলেছে বলে যুগান্তরের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাকিব খানের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, বিচ্ছেদের বিষয়টি চূড়ান্ত। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এখন ডিভোর্স দু’জনার সম্মতিতে হবে নাকি আদালত পর্যন্ত যাবে বিষয়টি- সেটাই দেখার বিষয়। সূত্র জানিয়েছেন কেন শাকিব খান ডিভোর্সের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? অন্তরালের রহস্য কী? সূত্রের বরাতে প্রাপ্ত এর কারণগুলো হল-
* বিয়েপরবর্তী আট বছর ধরে অপুর কথামতোই তার সঙ্গে বিভিন্ন ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব। অন্য নায়িকাদের সঙ্গে কখনোই অভিনয় করতে দেননি অপু। সংসারে অশান্তি হবে ভেবে শাকিব খানও অপুর সঙ্গে জুটি বেঁধে ছবিতে অভিনয় করেছেন। কিন্তু সন্তান গর্ভধারণের পর শাকিব যখন অন্য নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করছেন তখন অপু তাতে বাঁধা দেয়। এ নিয়ে শুরু হয় অশান্তি।
* কোনোকিছু না জানিয়ে হুট করেই সবকিছু মিডিয়ায় ফাঁস করে দেয়া।
* গণমাধ্যমে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে শাকিব ও তার পরিবার নিয়ে কটূক্তি করা।
* অন্য নায়িকাদের সঙ্গে জড়িয়ে শাকিব খানকে অপমানসূচক কথাবার্তা বলা।
* শাকিব খানের অর্থে ছেলের জন্মদিন পালিত হলেও অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বাবা হিসেবে শাকিব খানের ছবি ব্যবহার না করা।
* গত কয়েকমাসে চলচ্চিত্রের যারা শাকিব খানকে বহিষ্কার কিংবা বয়কট করেছেন তাদের সঙ্গে অপুর অবাধ মেলামেশা এবং তাদের সঙ্গে কাজ করা।
* শাকিবকে না জানিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া এবং শাকিকে হেয় করে কথা বলা।
* সন্তানের দেখভাল সঠিকভাবে না করা (শাকিবের অভিযোগ, অপু বেশিরভাগ সময় সন্তান জয়কে বাসায় রেখে বাইরে থাকেন। এসময় জয়কে দেখাশোনা করেন কাজের মানুষ)।
* সংসারের খরচ দেখিয়ে অনিয়ন্ত্রিত অর্থ দাবি করা (শাকিবের দাবি, সন্তানের পোশাক-আশাক খাবার-দাবার, খেলনা ছাড়াও প্রতি মাসে অপুর ব্যক্তিগত খরচের জন্য এক লাখ টাকা করে তার একাউন্টে জমা দেন তিনি)।
এরকম আরও অনেক কারণ দেখিয়েছেন সূত্রটি। এসব কারণেই নাকি অপুর প্রতি বেশ বিরক্ত শাকিব। সূত্রের বরাতে পাওয়া এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা হয় অপুর সঙ্গে। অভিযোগ শুনে তিনি প্রথমেই জানতে চান, এসব অভিযোগ শাকিব করেছেন কী না? বিশ্বস্ত সূত্রে প্রাপ্ত খবরে তিনি বিশ্বাসী নন বলে জানিয়ে দেন। তবুও এসব অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে কিংবা শাকিব করে থাকেন তার উত্তরে কী বলবেন আপনি? এমন প্রশ্নে অপু যুগান্তরকে বলেন, ‘দেখুন, এসব ব্যাপারে আমি এখন কোনো কথা বলব না। শাকিব যদি নিজের মুখে এসব অভিযোগ করে থাকে তাহলে আমি এর উত্তর দেব। কারণ ডিভোর্সের ব্যাপারে শাকিব কিংবা তার পরিবার কোনো কথাই বলেনি আমার সঙ্গে। তাহলে কিভাবে বিশ্বাস করব এসব কথা। আর হুট করে এসব আসছে কেন এখন? আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে সেটা শাকিবের মুখেই শুনতে চাই। এখন এসব নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই। বিষয়টিকে আমি এখনও গুজব হিসেবেই দেখছি।’ তাছাড়া তিনি বিশেষ সূত্রে পাওয়া খবরের সেই ‘বিশেষ সূত্র’রও সমালোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে অপু বলেন, ‘কে সেই বিশেষ সূত্র? কারা শাকিবকে মন্ত্র পড়া দেয়? এই সূত্রগুলো এতদিন কোথায় ছিল? আর কোনো সূত্রে প্রাপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি নই আমি।’
এদিকে শাকিব-অপুর বিচ্ছেদের পথে হাঁটার কারণ হিসেবে মিডিয়ার বিশিষ্ট জনেরাও অনেক কিছু বলছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিনিয়র চিত্রপরিচালক বলেন, “সংবাদ মাধ্যমের বরাতে প্রাপ্ত খবরে যতটুকু বুঝতে পারলাম, শাকিব-অপু দু’জন দু’জনার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর অবশিষ্ট নেই। কোনো সংসারে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে সে সংসার কখনোই টিকে থাকে না। চলতি বছরের এপ্রিলে শাকিব-অপুর বিয়ের খবর ফাঁস হওয়ার পর মাত্র একদিনই তাদের একসঙ্গে দেখা গেছে। এরপর তাদের মধ্যে মুখ চাওয়াচাওয়িও নাকি হয়নি কখনও। শাকিব যা পছন্দ করেন না সেসবই নাকি অপু বেশি করছেন। আর এসব কারণে ডাবল পারিশ্রমিক দিয়েও অপুর সঙ্গে অভিনয় করাতে কোনো প্রযোজক-নির্মাতা শাকিবকে রাজি করাতে পারেননি। তবে বিচ্ছেদের মতো কোনো ঘটনা যদি ঘটে যায় তাহলে সেটা হবে খুবই দুঃখজনক। কারণ মিডিয়াতে এর প্রভাব পড়বে। এমনিতেই মিডিয়ার মানুষজনকে সাধারণ মানুষ ভালো চোখে দেখে না। তার ওপর ওদের মতো বড় তারকা যদি এসব নিয়েই মেতে থাকেন তাহলে খারাপ ধারণাটা আরও বেশি বদ্ধমূল হবে। তবে এটাও ঠিক যে, মানসিকভাবে অশান্তিতে থেকে কোনো কাজ সঠিকভাবে করা যায় না। তারা যদি সংসার করতে না-ই চায় তাহলে আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো। অযথা মানুষকে সমালোচনা করার সুযোগ দিয়ে কী লাভ?’
এদিকে শাকিবের সেই ঘনিষ্ঠ সূত্র কিন্তু নিশ্চিত করেছেন শাকিব-অপুর বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটছে। এরমধ্যে আবার কেউ কেউ শাকিব এবং অপু দু’জনকেই বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু আদপে সেটা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা অজানা। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কলকাতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশের নতুন একটি ছবির শুটিং নিয়ে এ মুহূর্তে শাকিব থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, শাকিব-অপুর বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে যে জল ঘোলা হচ্ছে তার অবসান হবে কেবল শাকিব দেশে ফিরে এলেই। এখন শুধু শাকিবের জন্য অপেক্ষা!যুগান্তর