বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। টানা তিন বছর বাড়ার পর গত বছর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ছিল নিন্মমুখী ধারায়।

২০১৫ সালে যেখানে বিনিয়োগ এসেছিল ২৪৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার,২০১৬ সালে সেটি নেমেছে ১৭০ কোটি ৬৪ লাখ ডলারে। এক বছরের ব্যবধানে এফডিআই কমেছে ৭৩ কোটি ৮ লাখ মার্কিন ডলার (৫ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা)।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘আন্তর্জাতিক ঋণ পরিসংখ্যান ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বুধবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগ কমার মূল কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না।

এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতেও আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ডুয়িং বিজনেস’ প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের দুর্বলতার বিষয়টি উঠে এসেছিল। এর সঙ্গে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও মন্ত্রণালয়গুলোর অদক্ষতা। এসব কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমছে।

বুধবারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে এফডিআই এসেছিল ১৯৩ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় ২২৫ কোটি ৭০ লাখ। ২০১২ সালে এফডিআই এসেছে ১৩০ কোটি ডলার। এর আগের বছর এসেছিল ১১৯ কোটি ডলার। ২০১০ সালে তা ছিল মাত্র ৯১ কোটি ডলার। এছাড়া বিদেশি কোম্পানিগুলো গত বছর নতুন করে তেমন বিনিয়োগ করেনি।

তারা যে টাকা মুনাফা করেছে, তার বড় অংশই আর বিনিয়োগে খাটানো হয়নি। ২০১৩ সালে বিদেশি কোম্পানিগুলো মুনাফার ৩৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল, ২০১৪ সালে তা কমে হয় ২৬ কোটি ডলার।

ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমার প্রধান কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।

বিদেশি কোম্পানিগুলোকে স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এসব সূচকে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে।

বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বাংলাদেশে একজন বিনিয়োগকারীর যে সময় লাগে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। যার প্রমাণ দেখা গেছে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘ডুয়িং বিজনেস’ প্রতিবেদনে। এতে বাংলাদেশ সার্বিকভাবে এক ধাপ পিছিয়ে ১৭৭তম অবস্থানে রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ফোকাস’ শীর্ষক অপর এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি তিনটি।

এগুলো হচ্ছে- আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার আরও অবনতি, রাজস্ব খাতের সংস্কারের ক্ষেত্রে পিছু হটা ও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। সংস্থাটি আরও বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশ্বিক সংযোগ এখনও কম। তারপরও বৈশ্বিক কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছু ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এগুলো হল- যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে নীতির অনিশ্চয়তা এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, রাজস্ব ও আর্থিক খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত থাকলে রাজস্ব আয় বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি অবকাঠামোর উন্নতি করতে পারলে এবং ব্যবসায় পরিবেশের উন্নতি হলে বাংলাদেশ আরও উৎপাদনশীল খাতকে আকৃষ্ট করতে পারবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে।

বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের উচ্চ হার ব্যাংকগুলোকে আর্থিক চাপের মুখে পড়ার ঝুঁকিতে ফেলছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কয়েকটি ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হচ্ছে খেলাপি ঋণের উচ্চ হার।

সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে সংস্কার দরকার, যাতে প্রতিযোগিতামূলক আচরণ ও মূলধনের জোগান নিশ্চিত হয়। বিশ্বব্যাংকের ‘আন্তর্জাতিক ঋণ পরিসংখ্যান ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলারের এফডিআই প্রবাহ ছিল, যা আগের বছরের চেয়ে ২ শতাংশ কম।

গত বছর সবচেয়ে বেশি ৩৯১ বিলিয়ন ডলার এফডিআই পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এফডিআই পেয়েছে যুক্তরাজ্য, ২৫৪ বিলিয়ন ডলার।

আর তৃতীয় সর্বোচ্চ এফডিআই পেয়েছে চীন, ১৩৪ বিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এফডিআই পেয়েছে ভারত, ৪৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, যা এ অঞ্চলের ৮২ শতাংশ।

আর বাংলাদেশে এসেছে এ অঞ্চলের মাত্র ৪ শতাংশ। এবার এফডিআই বৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ছিল পাকিস্তান। চীন ব্যাপক বিনিয়োগ করায় পাকিস্তানে এফডিআইয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৮ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের বিশ্ব মন্দার পর দরিদ্র দেশগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি বর্তমানে সর্বনিন্ম পর্যায়ে রয়েছে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।