ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:ঢাকা: রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হিন্দু বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ বন্ধে সরকার কোনও কার্যকরী ভূমিকা রাখেনি বলে অভিযোগ তুলেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
মঠ, মন্দির, প্রতিমা, বাড়িঘর ভাঙচুর এবং তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগকারীদেরকে চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন হিন্দু নেতারা।
শুক্রবার বেলা ১১টায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে পথসভায় সংগঠনের নেতারা এ সব কথা বলেন।
রংপুরের তারাগঞ্জের ঠাকুরপাড়া গ্রামে ফেইসবুকে ‘মিথ্যা গুজব’ ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও টিটু রায়কে গ্রেফতার-রিমান্ডের প্রতিবাদে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
এ সময় তারা এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তির জন্য জড়িত ব্যক্তিদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানান। মানববন্ধন শেষে জাতীয় প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ করা হয়।
বিক্ষোভ শেষে পথসভায় হিন্দু নেতারা বলেন, ফেসবুকে তথাকথিত ধর্ম অবমাননার অযুহাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নাসির নগরসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ ও তাদের সম্পদ লুটপাট হয়েছে। এরই মধ্যে পুনরায় রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। অথচ সরকার এসব নিরসনে কোনও কার্যকরী ভূমিকা রাখেনি।
তারা অভিযোগ করেন, সরকার মঠ মন্দির প্রতিমা ভাঙচুর, বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগকারীদেরকে চিহ্নিত এবং গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। হিন্দু নির্যাতনের অপরাধীদের আজ পর্যন্ত কারো কোনও শাস্তি হয় নাই। ফলে অপরাধীরা অপরাধ করতে আরও উৎসাহিত হচ্ছে। যার কারণেই বারবার একেরপর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। সে কারণে হিন্দু সম্প্রদায় এখনো আতঙ্কগ্রস্ত। প্রতিদিনই নিরবে আতঙ্কিত হিন্দু সম্প্রদায় দেশ ত্যাগ করছে।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তাগণ মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির-প্রতিমা ভাঙচুর, জোরপূর্বক জমি দখল-বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, শ্লীলতাহানি ও হিন্দু নির্যাতনকে দেশ থেকে হিন্দুজনগোষ্ঠী উৎখাত করে দেশকে হিন্দু-শূন্য করার কুট-কৌশল বলেও মন্তব্য করেন।
মানববন্ধন ও পথসভা থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা সরকারের কাছে তিন দফা দাবিও রাখেন।
দাবিগুলো হচ্ছে-
১. চট্টগ্রামের হাটহাজারী, কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নাসিরনগর ও রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হামলাকারী ও অগ্নিসংযোগকারীদের মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।
২. হিন্দু নির্যাতনের হাতিয়ার তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করতে হবে।
৩. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
পথসভায় সভাপতি মনোজ কুমার মন্ডলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মন্ডল, সিনিয়র সহ-সভাপতি সোমনাথ দে, সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন কৃষ্ণ দাশ ও অ্যাডভোকেট প্রতুল কুমার মন্ডল (তাপস), আর্ন্তজাতিক সম্পাদক বাদল কৃষ্ণ সাহা, যুগ্ম সম্পাদক সাধন কুমার দাস ও প্রদীপ কুমার হালদার, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক উজ্জল জয়ধর (শ্রাবন) প্রমুখ।