ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশে লোকজনের ব্যাপক উপস্থিতির প্রস্তুতি নিশ্চিত করেছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। আজ বেলা ২টায় অনুষ্ঠেয় এ সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সভাপতিত্ব করবেন এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এ সমাবেশে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবেন।
এর আগে গত রোববার ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসকে উপলক্ষে করে একই জায়গায় ব্যাপক শোডাউন করে সরকারবিরোধী দল বিএনপি। দীর্ঘদিন পর বিএনপির এ শোডাউন রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচিত হয়। তবে আজকের সরকার দলের এ সমাবেশকে পাল্টা সমাবেশ হিসেবে মানতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সকালে জনসভাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, এটিকে অনেকেই বিএনপির পাল্টা সমাবেশ হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছেন। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই এটি পাল্টা সমাবেশ নয়। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়ায় তার ‘সেলিব্রেশন’ মাত্র।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, অসুস্থতাসহ নানা কারণে দীর্ঘ প্রায় দুই মাস পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। সে জন্য আজকের সমাবেশ বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে উপলক্ষ করে হলেও এতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের রাজনৈতিক জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া আগামী সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সমাবেশে ৭ মার্চের ভাষণ এবং বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁেক বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে চলবে আবৃত্তি ও সঙ্গীত।
সমাবেশে জনতার ঢল নামিয়ে ইতোমধ্যেই বিরোধীদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। সেই লক্ষ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন তারা। এসব বৈঠক থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক লোকের উপস্থিতি নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা সরকারের প্রতি জোরালো সমর্থন জানানোর আহ্বান জানানো হয়।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, দলটির কাছে এ সমাবেশের গুরুত্ব অনেক। কারণ অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট সত্ত্বেও দীর্ঘদিন পর বিএনপি তাদের সমাবেশে ব্যাপক শোডাউন করে। সেখানে খালেদা জিয়া সরকারের নানা সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে নির্দলীয় সহায়ক সরকারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি। দাবি না মানলে নির্বাচন হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এসব বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব দিতে পারেননি। আজকের সমাবেশে তার জবাব দেয়া হতে পারে। সে জন্য সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চান ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকেরা।
সমাবশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে গিয়ে সমবেত হবেন। প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নের নেতাদের সর্বোচ্চ জমায়েত নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যেই দফায় দফায় বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীপর্যায়ের নেতারা। ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত জাতীয় সংসদ সদস্য, ঢাকার পাশের জেলাগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় সংসদ সদস্য, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ ও কৃষক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সাথে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সভা থেকে দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভায় অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশ সফল করতে গতকাল প্রস্তুতি সভা করছে আওয়ামী যুবলীগ। এতে সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী নাগরিক সমাজের আয়োজনে এ সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো: হারুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান হিরন, আব্দুস সাত্তার মাসুদ, মো: আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুর আলম শাহীন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কাজী আনিসুর রহমান, মিজানুল ইসলাম মিজু, কার্যনির্বাহী সদস্য রওশন জামির রানা, কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুল ইসলাম হাওলাদার, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল, দক্ষিণ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, উত্তর সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ।
এর আগে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করে। এসব সভায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ডা: দীপুমনি উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, নাগরিক সমাজের আয়োজনে এ সমাবেশে দলমত নির্বিশেষ সর্ব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমন্ত্রণ জনানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রস্তুতি সভার মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। তবে নাগরিক সমাবেশ হলেও বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে বক্তব্য রাখবেন। তার বক্তব্য থেকে নেতাকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক নির্দেশনাও আসতে পারে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়মী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, জনসভাটি নাগরিক সমাজের। আমরা শুধু সেখানে সহযোগিতা করব। তার অংশ হিসেবে জনসভায় সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পেশাজীবীদের সাথেও বৈঠক করা হয়েছে। এ সমাবেশকে ঐতিহাসিক সমাবেশে পরিণত করতে যা যা করার সব প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। সমাবেশে থেকে নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা নিয়ে ঘরে ফিরবেন।dailynayadiganta