মো.অহিদ সাইফুল,হেমন্ত হল ষড় ঋতুর চতুর্থ ঋতু। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দু’মাস নিয়ে হেমন্তকাল। হেমন্ত মানেই শিশিরস্নাত প্রহর। শরতের কাশফুল মাটিতে নুইয়ে পড়ার পরপরই হেমন্তের আগমন ঘটে। এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। ঋতুচক্রের পরিক্রমায় বঙ্গঋতুনাট্যে শরতের পরে শূন্যতা, রিক্ততা ও বিষণ প্রকৃতির মেদুরতাহীনতায় আবির্ভূত হয় হেমন্ত ঋতু। আর এবছর হেমন্তের শুরুতে মেঘেরা আকাশে ভিড় করেছিল। অসময়ের ঝড়বৃষ্টিতে তুমুল কান্ড।
সকালে ধান গাছের ডগায় শিশির জমে থাকাই হেমন্তের জানান দেয়। শীত একটু একটু কাঁপুনি দিচ্ছে। শীত আসার আগেই শীতেরা যেন চেপে ধরবে এমন ভাব। সকালের প্রথম রোদের বর্ণটায় গাছের পাতাগুলো খিলখিল করে হেসে ওঠে। ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন ও আউশ শরতে বেড়ে ওঠে। এ হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধান পরিপক্ক হয়, আর তখনই ধান কাটার উপযোগী হয়। আর এই হেমন্তে শুরু হয় কৃষকের ঘরে ফসল তোলার প্রস্তুতি।
কাস্তে হাতে কৃষকরা মাঠে মাঠে আমন ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর নতুন ফসল দেখে কৃষকের মুখে ফুটে ওঠে হাসি।
রবিবার ঝালকাঠি সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধানসিড়ির চরভাটারকান্দা গ্রামে সারেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনালি ধানের আগায় আগায় রুপালি কুয়াশারা চিক চিক করছে। কুয়াশার এই মনজুড়ানো দৃশ্য চোখে পড়ে খুব ভোরে আর সন্ধ্যায়। দিনের সোনালি রোদ কুয়াশাদের পরাজিত করে লুকিয়ে রাখে। কুয়াশার চাদরে মোড়া হেমন্তের ফসল যেন এক অনাবিল আনন্দ। আর এই আনন্দ উদযাপন করা যায় শুধু গ্রামে।
দুপুরে তাপের তীব্রতা একটু বাড়ে। তবুও সোনার ফসল ঘরে তুলতে কৃষকের এই অদম্য পরিশ্রমের সব সুখ ফসলের মধ্যেই নিহিত। সন্ধ্যা আর রাতগুলো শীতের কাপড় নামানোর আহ্বান জানাচ্ছে। মাঝরাতে শীতেরা আলিঙ্গন করে যাচ্ছে অবিরত। কুয়াশায় ভরা হেমন্তের ফসলের মাঠ কৃষকের জীবনে আনন্দের ঢেউ খেলে দেয়।
এদিকে মাঠজুড়ে হেমন্তের সোনার ফসল। ফসলেরা মরিয়া হয়ে আছে কৃষাণীর হাতের ছোঁয়া পাওয়ার আশায়। মেঘ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে তবুও সোনার ফসল ঘরে তুলতে মরিয়া কৃষকরা। এই সংগ্রামী কৃষকেরা যেন থামার নয়! ক্ষান্ত হওয়ার নয়! ঘরে যখন নতুন ফসল উঠবে কৃষাণীর আনন্দ বাঁধ ভেঙে যাবে।
ইতোমধ্যে ঝালকাঠি জেলা সদর, শেখেরহাট, কেওড়া, পোনাবলিয়া ও নথুল্লাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় কাটা শুরু হয়ে গেছে কৃষকের কষ্টে উপার্জিত আমন ও আউশ ধান। মাঠের দিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায় সোনালি রঙে হালকা সবুজের স্পর্শ। সবুজের সমারোহে দামাল হাওয়া যেন খেলা করে। সবুজের সাগরে সোনালি আলোর আভা ছড়াচ্ছে সোনালি ফসলে। এ যেন নিখাদ সোনা। বিস্তৃত ফসলের মাঠে দমকা হাওয়ারা ঢেউ খেলে যায় তরঙ্গের মতো। এই মনোরম দৃশ্য দেখলে মন যেন হারিয়ে যায়।
রোদ বৃষ্টি যাই হোক না কেন, তবুও এই সবুজের সমুদ্র থেকে সোনার ফসল উঠবে কৃষকের ঘরে। সোনালি ধান সোনালি আলো ছড়াবে চার দিকে।