ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ঐকমত্যে পৌছুতে না পারায় দেশে সৃষ্টি হয় অস্থিতিশীল পরিবেশ। রাজপথে আন্দোলনে নামে ১৪ দলীয় জোট। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ জানুয়ারি ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর জনজীবনে স্বস্তি নেমে আসলেও তা টেকেনি বেশীদিন। ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) খেলার মাঠে তুচ্ছঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাবি ছাত্র বনাম সেনা সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনীতিবিদদের রাজনীতির সুযোগ করে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে অগ্রসর হয়। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকারের অধীনে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১১ জানুয়ারি থেকেই জরুরী অবস্থা জারি রাখে। জরুরী অবস্থা তুলে নেওয়া হয় ১৬ ডিসেম্বর ২০০৮।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা আর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন খালেদা জিয়া। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় মহাজোট গঠন করে। অন্যদিকে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীসহ চারদলীয় জোট নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৬৩ আসনে জয়লাভ করে। অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ৩৩টি আসনে জয়লাভ করে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৪জন নির্বাচিত হন। সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার মধ্যে ২৮ অক্টোবর, ২০০৬ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লগি, লাঠি বৈঠা নিয়ে রাজপথে নামে। চারদলীয় জোট সরকারের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এদিন জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের সামনের সড়কে বিকেল ৩টায় এক সমাবেশের আয়োজন করে। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে দৈনিক বাংলা মোড়, বায়তুল মোকাররম, পল্টন মোড় হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগ নেতা কমীদের লাঠির আঘাতে পল্টন মোড়ে নিহত হয় জামায়াত-শিবিরের এক কর্মী।অন্যদিকে জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের গুলিতে নিহত হন ওয়ার্কাস পাটির এক কর্মী। পরিণতিতে ওয়ান-ইলেভেন অনিবার্য হয়ে পড়ে। ক্ষমতায় আসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দিন আহমদ। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ দেশে জরুরী অবস্থা জারি করেন। এ সময় জনজীবনে নেমে আসে স্বস্তি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে জনগন যে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছিল তার অবসান ঘটে। বরং আতঙ্কিত রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ আত্মগোপনে যান।
ফখরুদ্দিনের সরকার দেশের দায়িত্বভার নেওয়ার পর মানুষের মধ্যে যে স্বস্তি ফিরে এসেছিলো তার একাধিক নজির তখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছিলো জনগনের সামনে। ওয়ান-ইলেভেনের আগে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের যেখানেই মানুষ বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিতো সেখানেই স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও তাদের আশ্রিত সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হতো। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের সরকার দায়িত্বভার নেয়ার পর রাজনীতিবিদ ও তাদের আশ্রিত সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে চলে যায়। তখন অনেকেই চাঁদা না দিয়ে নির্ভয়ে রাড়ি করেছেন। রাজপথেও নেমে এসেছিলো স্বস্তি। কোটি টাকা দামের গাড়ীর মালিকরা তাদের গাড়ি লুকিয়ে ফেলে। তাছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি রাজপথে নামাননি রাজনৈতিক শেল্টারে থাকা গাড়ির মালিকরা। গ্রেফতার আতঙ্কে কেউ কেউ টাকা ফেলে দিয়েছেন রাস্তায়, অলি-গলিতে। কেউ আবার কুমিরও রাস্তায় ফেলে যান। ধারণা করা হয়েছিলো কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তুলে নিয়ে টুকরো টুকরো করে কুমিরকে খাওয়াতেন। রাস্তায় পার্কিংয়ের বদলে বহুতল ভবনের নীচ তলায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্য সরকার নির্দেশ দিলে ভবনের মালিকরা ভবনের নীচতলা ভেঙ্গে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার কাজ শুরু করেন। মোটামুটি সকল সেক্টরে শৃঙ্খলা চলে আসে।
ওয়ান-ইলেভেনে শুধু রাজনীতিবিদরাই আতঙ্কে ছিলেন না। আতঙ্কে ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঘুষ, দুর্নীতি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
তবে এমন আতঙ্কের পরিবেশের মধ্যে দুর্নীতি বন্ধ করা যায়নি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের। চট্টগ্রাম বন্দরের তালিকাভুক্ত সিএন্ডএফের ব্যবসায়ীরা তখন অভিযোগ করেছিলেন, বন্দরে আসা পণ্য ডেলিভারী নিতে সিএন্ডএফ এজেন্টদের চট্টগ্রাম কাষ্টমস হাউসের কর্মকর্তাদের টাকা দিতে হতো। ওয়ান-ইলেভেনের আগে গুণে টাকা নিলেও ওয়ান-ইলেভেনে অভিনব এক পন্থার প্রচলন করেন তারা। যেসব কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর লাগতো তাদের প্রতিনিধিরা থাকতেন চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন ব্যাংকে। তারা যে ব্যাংকের গ্রাহক সেই ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে তার প্রতিনিধিদের হাতে জমার স্লিপ দিতে হতো। এরপর তারা সবুজ সংকেত দিলে তবেই ফাইলে স্বাক্ষর করতেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তারা।
ওয়ান ইলেভেন প্রথমে জনজীবনে স্বস্তি নিয়ে এলেও পরে শুরু হয় অস্বস্তি। পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার বিরুদ্ধে বাগড়া দেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। যৌথবাহিনীর সদস্যরা দাম কমানোর জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দেন দাম কমানোর। কিন্তু সে আশ্বাস বাস্তবায়ন করেননি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদের গুদামে অভিযান চালাতে শুরু করেন সেনা সদস্যরা। এ অবস্থায় সেনা সদস্যদের হাত থেকে বাঁচতে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জের পেছনের কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেন হাজার হাজার বস্তা চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। এ তথ্য ওই সময়ে আমাকে জানিয়েছিলেন খাতুনগঞ্জের কর্মরত আমার এক আত্মীয়।এতে দেশে নিত্য পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়। বিপদে পড়ে নতুন ধরনের এই সরকার।
এরই এক পর্যায়ে তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে কারো কারো বিরুদ্ধে এবং বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেওয়া বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী সমাজ। দুর্নীতি দমন অভিযানের কথা বলে গ্রেফতার করা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের কোষাগারে এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা জমা করানো হয়। এছাড়া এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ আগস্ট ২০০৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তুচ্ছঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্র-সেনা সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যা পরবর্তীতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রুপ নেয়। এ আন্দোলন প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন অংশ নেয়।
ছাত্র-সেনা সংঘর্ষের সূত্রপাত : ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে চলছিল আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলা। মাঠের পাশেই ছিল সেনাবাহিনীর অস্থায়ী সেনাক্যাম্প। সেখানকার সেনা সদস্যরা খেলার মাঠে ঢুকে গ্যালারিতে বসার চেষ্টা করে। পরে তাদের বসা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেনা সদস্যের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সশস্ত্র সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ওপর সেনাবাহিনীর হাত তোলার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীরাও। বেধে যায় তুমুল সংঘর্ষ। সংঘর্ষের প্রতিবাদ আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে সেনা শাসন চালানোর ক্ষোভে ঢাবির ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আন্দোলনে নামেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরাও। বিক্ষোভের ছোঁয়া লাগে দেশের অন্যান্য জেলা শহরেও। সারাদেশে আহত হয় প্রায় শতাধিক বিক্ষোভকারী। এছাড়াও রাজশাহীতে এক রিকশাচালক নিহত হন। পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে ২২ আগস্ট সরকার দেশের ছয়টি বিভাগীয় শহরে কারফিউ জারি করে। এ সময় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যা দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ রাখা হয়।
অন্যদিকে বিক্ষোভে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ এনে ২৩ আগস্ট সেনাসমর্থিত সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, সাবেক কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন ও অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকসহ ঢাবির চার শিক্ষক ও সাত ছাত্রকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাদের পাঠানো হয় কারাগারে এবং বিভিন্ন মেয়াদে এই শিক্ষকদের কারা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আটক আট শিক্ষকের মধ্যে দুই শিক্ষক ও এক কর্মকর্তাকে কারাদণ্ড দেয় সরকার। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো সাত ছাত্রকেও জেল খাটতে হয়। ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনায় পরবর্তীকালে মোট ৬৬টি মামলা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৩টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। ১৬টি মামলা সরকার প্রত্যাহার করে নেয় এবং সাতটি মামলা আদালত খারিজ করে দেন।
সেই দিনের ঘটনার শিকার ছাত্ররা জানিয়েছিল, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী সেই দিন খেলার মাঠে ছাত্রদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল। ছাত্ররা এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে সেনাবাহিনী আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ছাত্ররাও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ শিক্ষার্থীদের মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলন করে।
দেশের ক্রান্তিকালে বিশেষ করে ’৫২, ’৬৯, ’৭১ ও সর্বশেষ ’৯০ ছাত্ররা যেভাবে নিজেদের দেশের স্বার্থে কাজ করেছে একইভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজেদের অবস্থান পাকা করে রাখা সেই সেনা সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে ওঠে ওই দিন বিকেলেই। শুরু হয় আন্দোলন, যা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এটি হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সবচেয়ে বড় একটি কালো অধ্যায়। সেই সঙ্গে ছাত্ররা প্রমাণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখনই কারো বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তখনই তার পতন হয়েছে। সেই দিন যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই আন্দোলনের সূত্রপাত না হতো তাহলে হয়তো সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরাকার আরও অনেকদিন থাকতো।
উল্লেখ্য ২০০৮ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২৩ আগষ্টের দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এই দিনটিকে ঘিরে নানা কর্মসূচি পালন করে।
ব্যবসায়ীরা টাকা ফেরত পাননি : ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জরুরি অবস্থা জারি করে দুর্নীতি দমন অভিযানের কথা বলে গ্রেফতার করা হয় দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের। তখন ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন সময় প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের কোষাগারে এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা জমা করা হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওই টাকা ফেরত চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক রিট করেন ক্যাফেলি ডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ড লিমিটেড এবং এস আলম স্টিল লিমিটেডসহ ১১টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীরা। পরে ২০১০ ও ২০১১ সালে পৃথক রায়ে হাইকোর্টে রিটকারী ১১ ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানকে তিন মাসের মধ্যে প্রায় ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের টাকা আর ফেরত দেয়া হয়নি।
হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এস আলম গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠান ৬০ কোটি টাকা, দি কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি লিমিটেড এবং বারাউরা টি কোম্পানি লিমিটেড ২৩৭ কোটি ৬৫ লাখ, মেঘনা সিমেন্ট ইন্ডাষ্ট্রিজকে ৫২ কোটি, বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড ১৫ কোটি, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড ৯০ লাখ, ইউনিক সিরামিক ইন্ডাষ্ট্রিজ ৭০ লাখ, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ১৭ কোটি ৫৫ লাখ, বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড ৭ কোটি ১০ লাখ, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড ৩৫ কোটি এবং ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের এক পরিচালক ১৮৯ কোটি ও ইউনিক ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের স্বত্বাধিকারী ৬৫ লাখ টাকা।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ টাকা ফেরতের বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে দেন। এর ফলে জরুরি অবস্থার সময় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছিল তা ফেরত দেয়ার পথ প্রশস্ত হয়। সে সময় আদালতে ব্যবসায়ীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আহসানুল করিম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
রায়ের পর আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, গণতান্ত্রিক দেশে অগণতান্ত্রিক শাসন কখনোই কাম্য নয়। দেশের নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে অবৈধভাবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডিজিএফআই এসব টাকা নিয়েছিল। তবে ডিজিএফআই আনুষ্ঠানিকভাবে আপিল বিভাগকে জানিয়েছিলো, কিছু সদস্য ব্যক্তিগতভাবে এসব কাজ করেছে। এ দায় ডিজিএফআইর নয়।http://bangla.thereport24.com