মাথা ন্যাড়ার শর্তে এসএসসির ফরম পূরণ!

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মাথা ন্যাড়া করার শর্তে এসএসসির ফরম পূরণ করা হয়েছে। চাঁদপুর আল আমিন একাডেমি স্কুলে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হলে পুনরায় পরীক্ষা নিলেও ফল ঘোষণা না করে মাথা ন্যাড়া করার শর্তে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করা  হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। শুধু পরীক্ষার ফরম পূরণ হয় এই আশায় মুখ ফুটে কেউ কিছু বলছে না। ন্যাড়া করার ব্যাপারে মুখ খুললে শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক পি এম এম জামাল হোসেন এমন নির্দেশের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা নিজেরাই চুল কেটেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঘুরে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের রুমের সামনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ভিড়।

এ সময় কয়েকজন অভিভাবকের মাঝে ক্ষোভ দেখা যায়। কারণ এ বিদ্যাপীঠের পড়া লেখার মান অনেক ভালো হওয়া সত্ত্বেও কেন শিক্ষার্থীরা ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে অকৃতকার্য হবে? এমনটাই প্রশ্ন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের।
চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে আল আমিন একাডেমীতে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক প্রায় চারশ শিক্ষার্থীর মধ্যে টেস্ট পরীক্ষায় ৯১ জন কৃতকার্য হয়। বাকি প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। পরে তাদের অকৃতকার্য বিষয়ে পুনরায় পরীক্ষা নিলেও ফলাফল ঘোষণা করেনি কর্তৃপক্ষ। ফলাফল ঘোষণা না করে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে ফরম পূরণ করা হচ্ছে এমনটাই অভিযোগ আবুল বাসার নামের এক অভিভাবকের। এমন প্রচুর অভিযোগ রয়েছে প্রাইভেট না পড়াতে অনেক শিক্ষার্থীকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। এমনকি ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কৌশলও বলছেন কেউ কেউ। অপর দিকে ইংরেজি শিক্ষক জামাল স্যারের নির্দেশে ১৯ জন শিক্ষার্থী মাথা ন্যাড়া করতে বাধ্য হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এমন শর্ত দেয়ায় প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু তিনি এ সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত ও কার্যকর করার নির্দেশ দেন। শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয় তাদের মাথা ন্যাড়া করতে। এমন ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। কারণ যদি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ না দেয়া হয় তবে জীবন থেকে চলে যাবে একবছর। যদিও এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি দেয়ার আগেই জামাল স্যার ও অধ্যক্ষ শিক্ষার্থী অভিভাবকদের এক প্রকার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থী লজ্জায় টুপি অথবা ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছে।
শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন, ফাহিম ও মাহিব হাসান বলেন, আমরা স্যারদের সকল শর্ত মানার পরেও হয়রানি করা হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ৭ বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরও ফরম পূরণ করা হয়েছে। অথচ ন্যাড়া করার ব্যাপারে যদি সাংবাদিকদের বলি তাহলেও স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ইংরেজি শিক্ষক পি এম এম জামাল হোসেনের নির্দেশে ১৯ জন শিক্ষার্থী মাথা ন্যাড়া করতে বাধ্য হয়েছি।
ন্যাড়া করার ব্যাপারে শিক্ষক পি এম এম জামাল হোসেন বলেন, আমি এমন নির্দেশ দেইনি। তারা নিজেরাই চুল কেটেছে।
আল আমিন একাডেমীর অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ আবদুল গাফফার (ইনচার্জ) বলেন, এমনটি হওয়ার কথা নয়। আমি বিষয়টি দেখছি।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।