. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ | | মতামত
উচ্চশিক্ষা দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে। জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জনে নাগরিকদের জ্ঞান ও দক্ষতায় উত্কর্ষ সাধনে উচ্চশিক্ষার বিকল্প যে কিছু নেই সেটা তর্কাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত।
প্রথমেই পরিষ্কার অবস্থানে আসা দরকার, আমরা কোন শিক্ষাকে প্রকৃত শিক্ষা বলব। দেশে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাস্তরের বিভিন্ন ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে একজন শিক্ষার্থীর একটি সার্টিফিকেট অর্জনকেই কি আমরা শিক্ষা হিসেবে অভিহিত করতে পারি? এটা অনেকের কাছেই শিক্ষার গ্রহণীয় একটি সংজ্ঞা বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু শিক্ষা গ্রহণের এই পদ্ধতিকে আমি প্রকৃত শিক্ষা বলব না। যে শিক্ষার সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক নেই, যে শিক্ষা বেকারত্ব সৃষ্টি করে, যে শিক্ষা মেধা অপচয়ের কারণ হয়, তা প্রকৃত অর্থে শিক্ষা হতে পারে না।
১৯৭১ সালে দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন উচ্চশিক্ষা লাভের একমাত্র ক্ষেত্র ছিল পূর্ব থেকেই প্রতিষ্ঠিত ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের ৪৬ বছরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০টিতে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৯২ পাস হওয়ার পর দেশে বেসরকারি উদ্যোগে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়। বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৫টি। ২০১৪ সালে ‘High University Enrolment, Low Graduate Employment’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।
প্রতিবেদনটি উল্লেখ করেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ বসবাস করে। এই দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান তরুণদের জন্য প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্তরে শিক্ষার হার বাড়াতে হয়েছে। ফলে সংগত কারণেই উচ্চশিক্ষা স্তরেও এর প্রভাব পড়েছে। গত ১০ বছরে এই বর্ধিত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যালয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ শতাংশ হারে।
আপাতদৃষ্টিতে দেশে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের এই চিত্র ইতিবাচক হলেও মান নিয়ে হতাশ সচেতন সমাজ। বিশেষায়িত দক্ষতার ঘাটতির কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরও ভালো কাজ পাচ্ছে না গ্র্যাজুয়েটরা। শিক্ষাগত যোগ্যতা আর কাজের বাজারের চাহিদার মধ্যে বিশাল ফারাক থাকায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের প্রায় ৪৭ শতাংশ গ্র্যাজুয়েটই বেকার।
দক্ষিণ এশিয়ায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে দি ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০১৩ সালে ‘Higher Education in South Asia-Trends in Afganistan, Bangladesh, India, Nepal, Pakistan and Sri Lanka’ শিরোনামে অন্য আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এতে বেকার স্নাতক বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে রিপোর্টটি বলছে—
‘The disconnect between the needs of the market and the courses offered by higher education institutions has contributed to high levels of graduate unemployment and underemployment.’ রিপোর্টের বক্তব্য স্পষ্ট, উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য বাস্তবমুখী নয়। কর্মক্ষেত্র ও উচ্চশিক্ষার মধ্যে সমন্বয় নেই।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি, চামড়া, তৈরি পোশাক, পর্যটন, চা-শিল্প, শিপইয়ার্ড, কনস্ট্রাকশন, ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষ জনশক্তি না থাকায় বিদেশি শ্রমিক আমদানি করা হয়। ১৬ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে একটি দৈনিকের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে যেসব দেশের নাগরিক কাজ করেন, সেসব দেশের শীর্ষ তালিকায় আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপান। এর বাইরেও বেশ কিছু দেশের নাগরিকরা এখানে চাকরি করেন। ’ ওই সম্পাদকীয়তে আরো উল্লেখ করা হয়, বিদেশিদের কাজের অনুমতি প্রদানকারী তিনটি প্রতিষ্ঠান—বিনিয়োগ বোর্ড, বেপজা ও এনজিও ব্যুরোর প্রদান করা তথ্য অনুযায়ী বৈধভাবে এ দেশে সাড়ে ১৬ হাজার বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিদেশি চাকুরের সংখ্যা কয়েক লাখ। এসব বিদেশি চাকুরে উচ্চ বেতনে চাকরি করে থাকেন, পক্ষান্তরে ৩০ শতাংশ হারে কর দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা দিতে গড়িমসি করেন। দেশে দক্ষ জনশক্তি প্রস্তুত হচ্ছে না বলেই আজ এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
উচ্চশিক্ষা লক্ষ্যহীন হলে চলে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন কিছু বিষয় পড়ানো হয়, যেগুলো মোটেই জীবনঘনিষ্ঠ নয়। চাকরির বাজারে এই বিষয়গুলো কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। পছন্দমতো সাবজেক্ট না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের দায় থেকে এসব বিষয়ে ভর্তি হচ্ছে ছাত্ররা। ফলে এই ডিগ্রি নিয়ে তারা বিপাকে পড়ে। স্নাতক শেষে চাকরির ক্ষেত্রে যে সুযোগ আসে সেটাই গ্রহণ করতে বাধ্য হয় তারা। আবার কোনো কোনো বিষয়ের বাজার চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ওই বিষয়ে মানসম্পন্ন অধ্যয়নের সুযোগ না থাকায় দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হয় স্নাতকরা। ফলে নির্দিষ্ট সেক্টরে চাকরি না পেয়ে অন্যান্য সেক্টরে চাকরি খুঁজতে হয় তাদের। ইকোনমিস্ট রিপোর্টের ভাষায়, ‘Despite more university graduates, employers are struggling to find good workers.’ মানসম্মত নয় বলেই গ্র্যাজুয়েটদের নিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো।
গ্র্যাজুয়েটদের কেউ কেউ অবশ্য নিজেদের সাবজেক্ট নিয়ে পড়ে না থেকে নিজেদের কারিগরি যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করে। ফলে তারা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকে। রাজনীতিবিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েট হয়ে একটি আইটি কোর্সে ভর্তি হয়ে আইটি খাতে কাজ করছে, এমন সংখ্যা কম নয়। চিকিৎসক ও প্রকৌশলী হয়েও সরকারের প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন ক্যাডারে কত কর্মকর্তা রয়েছেন, এ বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।
শিক্ষা হতে হবে প্রডাক্টিভ, বাজার চাহিদা ও প্রযুক্তিমুখী। শিক্ষা হবে বিশ্বের সঙ্গে তুলনীয় আধুনিক শিক্ষা। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় উল্লিখিত বিষয়গুলোর উপস্থিতি খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় না। ফলে আমরা জাতিগতভাবে উন্নয়নের পথে হাঁটতে পারছি না। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমৃদ্ধ জাতি গঠনের দৌড়ে অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। প্রশ্ন হলো, কেন এই পশ্চাদ্মুখিতা?
আমরা হয়তো উন্নয়নের অনেক সূচক পাব। ব্যবসা-বাণিজ্যে, প্রযুক্তিতে, কৃষিতে, সামাজিক অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের কিছু অর্জন আছে। কিন্তু সেটা যে কাঙ্ক্ষিত মানের নয়, সেটাও সবাই নিঃসংকোচে স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। আজকে যদি একটি পরিসংখ্যান জানতে চাওয়া হয় যে কৃষিতে কত শতাংশ শিক্ষিত জনশক্তি নিয়োজিত আছে? ব্যবসা-বাণিজ্যে শিক্ষিত শ্রেণির অবস্থান কোথায়? দেশের কত শতাংশ মানুষের কাছে প্রযুক্তিগত শিক্ষা পৌঁছানো গেছে? উত্তরে অনেক ক্ষেত্রেই সংখ্যাটি খুব উল্লেখযোগ্য হবে না। একটি দেশের কৃষিব্যবস্থায় যখন শিক্ষিত লোকের অংশগ্রহণ বাড়বে, তখন সেখানে প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটবে, সমবায়মুখী উত্পাদন বাড়বে। কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। ক্ষুদ্র শিল্পে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য প্রশিক্ষিত মেধার প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষা ছাড়া এই খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা দূর হবে যদি দেশের জনশক্তির সংখ্যার অনুপাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট প্রস্তুত করা যায়। যদি এসব স্বাস্থ্যস্বজনকে বিশ্বের মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ করা যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈশ্বিক কৌশল আয়ত্তে শিক্ষিত লোকের বিকল্প নেই। এভাবে সব ক্ষেত্রেই যদি শিক্ষিত জনশক্তির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় তাহলে সামগ্রিকভাবে দেশ সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হবে।
শিক্ষা জ্ঞান ও দক্ষতার ক্রমবিকাশ ঘটাবে এবং পরবর্তী প্রজন্মের হাতে সমৃদ্ধতর জ্ঞান সরবরাহ করবে। যখন শিক্ষায় প্রডাক্টিভিটি থাকবে না, তখন সেটাকে আর শিক্ষা বলা যাবে না। উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যদি আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করি তাহলে আমাদের সামনে যে চিত্রটি হাজির হয়, তা এককথায় ভয়াবহ।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় ‘জ্ঞান সৃষ্টি’ ও ‘জ্ঞান প্রদান’ করাই মূল উদ্দেশ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জ্ঞান সৃষ্টি (knowledge creation) ev cÉmvi (advancement of knowledge) করা হয় গবেষণার মাধ্যমে, নতুন তত্ত্ব বা প্রযুক্তি আবিষ্কারের মাধ্যমে। জ্ঞান সৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রয়াসে উদ্ভাবিত হবে নতুন জ্ঞানের। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এর ভিন্নতা। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই সাধারণত মৌলিক গবেষণায় যুক্ত থাকেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই জ্ঞান সৃষ্টিতে সম্পৃক্ত নয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট নেই। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় গুরুত্ব দিলেও সেই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য নয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই গবেষণার যথাযথ অবকাঠামো। ফলে উচ্চমানের কোনো প্রকাশনা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাচ্ছি না।
উচ্চশিক্ষা প্রদানের এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল প্রশ্ন তুলছে। গ্লোবালাইজেশনের যুগে বিশ্বের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তুলনা করা সহজ হচ্ছে। শিক্ষার মান অনুযায়ী বিশ্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমবিন্যাস করা হচ্ছে। এই ক্রমে এক হাজার সংখ্যার মধ্যেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটা শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান অবস্থায় আমাদের দৈন্য প্রকাশ করছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সেশনজট বর্তমান সময়ে সমার্থক শব্দ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো সেশনজট। সেশনজটে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান সময় অকারণেই নষ্ট হচ্ছে। চার বছরের ডিগ্রি নিতে রীতিমতো ছয় বা সাত বছর লেগে যাচ্ছে। তাদের জীবনের হিসাব থেকে বিনা কারণে অপচয় হচ্ছে দুই থেকে তিনটি বছর। এই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়ন শেষ করে যখন আন্তর্জাতিক ডিগ্রির জন্য বিদেশে ভর্তি হতে যায়, তখন বয়স নিয়ে তাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। ভালো রেজাল্ট থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু একাডেমিক বৃত্তিতে অধ্যয়নের সুযোগ হারাতে হয় শুধু বয়স বেড়ে যাওয়াজনিত কারণে। অন্যদিকে সেশনজটের ফলে সংগত কারণেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে বিলম্ব হয়। বেড়ে যায় আর্থিক ব্যয়, বাড়তে থাকে বেকারত্ব। অথচ দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো সেশনজট নেই। কথা হলো, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পারলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কেন পারবে না?
সব সমস্যা মাথায় রেখে এ দেশের উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কিভাবে হবে সেটা নির্ধারণ করা জরুরি। সেশনজট নামক আপদ থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচিতির প্রাধান্য পরিহার করা জরুরি। রাজনৈতিক বিবেচনায় যাঁরা নিয়োগ পান, তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকে। রাজনৈতিক নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে দলীয় লক্ষ্য বাস্তবায়নেই বেশি মনোনিবেশ করেন।
প্রযুক্তিগত শিক্ষা বাড়াতে হবে। শুধু উচ্চশিক্ষায় নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও প্রযুক্তি শিক্ষার সন্নিবেশ ঘটানো দরকার। এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রযুক্তি জ্ঞান সহজপাঠ্য করার স্বার্থে বিদেশি ভাষায় রচিত বইগুলো বাংলায় অনুবাদ করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে হবে। চীন-জাপান পাশ্চাত্য ভাষা পরিহার করলেও পাশ্চাত্য জ্ঞান গ্রহণ করে উন্নতির শিখরে আরোহণ করেছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আমাদেরও সেই পথেই হাঁটতে হবে।
উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীই নারী। নারীসমাজের ভূমিকা ছাড়া কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হবে না। উচ্চশিক্ষায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ বেড়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সময়োপযোগী পাঠ্যক্রম উপস্থাপন করছে। কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া দেশীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম ও শিক্ষাদানের পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানের। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মানসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েটরা বের হচ্ছে। তারা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভালো অবস্থানে আছে।
বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থেকেও উন্নয়নের সোপান বেয়ে অনেক ওপরে উঠে গেছে বেশ কিছু দেশ। মালয়েশিয়া এর অন্যতম। মালয়েশিয়ার ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনের পেছনে শিক্ষার আধুনিকীকরণ, শিক্ষায় বিনিয়োগ ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। কাজেই দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে দেশের উচ্চশিক্ষার মানের দিকে নজর দেওয়ার বিকল্প আমাদের হাতে কিছু নেই।
বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে ইকোনমিস্টও বলেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুমোদন কাঠামো, তদারকি, মাননিয়ন্ত্রণ ঠিকমতো করতে হবে। উচ্চশিক্ষা পাঠ্যক্রম তৈরিতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যক্রম সময়োপযোগী করতে হবে। এ জন্য আইনপ্রণেতা, নিয়োগকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমন্বয় দরকার।
লেখক : অধ্যাপক, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, উপাচার্য, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, খুলনা ও চেয়ারম্যান, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ট্রাস্ট