কপোতাক্ষের ভাঙনে দীর্ঘ হচ্ছে গৃহহীনদের তালিকা

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:কপোতাক্ষের অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙনে শুধু বাপ-দাদার ভিটা মাটিই নয়, ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, কবর স্থানসহ হাজার হাজার ফলজ ও বনজ বৃক্ষ। পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ও হরিঢালী ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার হয়েছে গৃহহীন। পাঁচ হাজারের অধিক মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ভয়াবহ ভাঙনে।

সরেজমিন ভাঙন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় দু’যুগ ধরে প্রতিনিয়ত ভাঙছে নদী, গৃহহীনদের তালিকা হচ্ছে দীর্ঘ। ইতোমধ্যে অনেকে বাস্তভিটা ছেড়ে হয়েছে উদ্বাস্ত। সব হারিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিয়েছে কেউ কেউ। রামনাথপুর জেলেপাড়া ভাঙন কুলে পৌঁছাতে হলো জরাজীর্ণ খুপড়িতে জড়োসড়োভাবে বেঁচে থাকা কয়েকশ’ মানুষের হাহাকার, হতাশা আর অভিযোগের বোঝা মাথায় নিয়ে। তাদের মুখে জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের কাউকে পাশে না পাওয়া আক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ। কার্ত্তিক বিশ্বাস, মনিষা, কালিদাসী, লিপিকা, বনদাসী আর বিকাশ বিশ্বাসের কথা যেন অভিন্ন। ঘরভাঙ্গা, ফসলি জমি আর সহায় সম্বল হারানো গল্পটা হয়ত অর্থের মাপ কাঠিতে কম বেশি হবে কিন্তু ক্ষুধা, দারিদ্র আর বেদনার ভাষা এক। দরগাহমহলের মেহেরুন্নেছার (৬৫) অভিযোগের সাথে উঠে আসে বেঁচে থাকার আত্মবিশ্বাসে সাহসী পদক্ষেপের কথা। পাঁচবার বাড়ি ভেঙ্গেছে তার। অন্যদের সাথে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন তার। এতদিন কাউকে যখন কাছে পাইনি এবার ভিক্ষে করে গাড়ি ভাড়া করে হলেও হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে যাব, বলেন মেহেরুন্নেছা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সালাম উল্লাহ জানান, ২০০০ সাল থেকে ভাঙন শুরু হলেও তালা উপজেলার পাখিমারা বিলের টি আর এম প্রকল্প গ্রহণ করার পর এ অঞ্চলের ভাঙ্গন বেড়েছে বহুগুণ। ইতোমধ্যে তার বসত ভিটাসহ কয়েক বিঘা সম্পত্তি চলে গেছে নদীতে। নদী পাড়ে বেড়ে উঠা এ মানুষটির অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, নদীর পূর্বের গতিপথে ফিরে গেলে এ পাড়ের ভাঙন রক্ষা করা সম্ভব হবে। স্থানীয়দের অনেকের অভিযোগ, নদী শাসন, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং নদীর মূল ¯্রােতধারা পরিবর্তন হওয়ার কারনে ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুক্তভোগীদের দাবি খননের মাধ্যমে কপোতাক্ষকে তার মূল ঠিকানায় ফেরাতে হবে।

জানা গেছে, দরগাহমহল প্রাক্তন ইউপি সদস্য জব্বার সরদার, মাওলানা মো. সাইফুল, হাজী শেখ আবু বক্কার, শেখ আব্দুল রাজ্জাক, মান্দার সরদার, শেখ আব্দুল মান্নান, মধু মন্ডল, সৈয়দ আবুল কালাম আজাদসহ অনেকেই তাদের বসত ভিটা হারিয়েছেন নদীর ভাঙনে। হুমকীর মুখে পড়েছে পাইকগাছা-কয়রা পল্লী বিদ্যুতের মেইন লাইন, খুলনা পাইকগাছা সড়ক (দ্বিতীয় দফায়), এতিম খানাসহ মানচিত্রে কোন রকম স্মৃতি আকড়ে পড়ে থাকা দরগাহমহল ও রামনাথপুর গ্রাম। যাদের অনেকেই বাপ-দাদার ভিটা হারিয়ে অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে আশ্রয় নিয়েছে ফেলে যাওয়া ভিটায়, রাস্তার ধারে কিংবা ভাঙন কুলের খুপড়িতে। তেমনি একজন মুক্তিযোদ্ধা কার্ত্তিক চন্দ্র বিশ্বাস (৮২)। বঙ্গবন্ধুর হাতে হাত দেয়া কার্ত্তিক চন্দ্রের নদী ভাঙনে সব হারিয়ে ঠাঁই হয়েছে নদী পাড়ে জরাজীর্ণ খুপড়িতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাস্ত ভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও তাদের ওপারে জেগে ওঠা চরে নেই আশ্রয়। স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও তার শ্যালকের রক্ষ চক্ষুতে সেখানেও ঠাঁই নেই মুক্তিযোদ্ধা কার্ত্তিক কিংবা বনদাসী বিশ্বাসদের।

উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার কপোতাক্ষ খননে ২৬২ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। গণস্বাক্ষর করে বিভিন্ন দপ্তরে দেন-দরবার করছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি, চলমান সমস্যা সমাধানে যেন মূল ম্যাপ অনুযায়ী কপোতাক্ষ খনন করা হয়। তাহলে নদী ফিরে পাবে মূল গতিপথ। অন্যদিকে গৃহহীন পরিবারের মাথা গোজার ঠাঁইটিও হবে নিজ ঠিকানায়।

Check Also

সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে দুবলার চরে গেলেন ৪০১জন পূণ্যার্থী

উপকূলীয় অঞ্চল (শ্যামনগর): পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে অনুমতি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরে রাস মেলায় গেছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।