ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:প্রখ্যাত লোকসংগীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী আর নেই। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটায় মৃত্যুবরণ করেন(ইন্নালিল্লাহি…)। প্রখ্যাত এ শিল্পীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী।
গত কয়েকদিন ধরেই তিনি এ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তার বয়স হয়েছিলো ৬৩ বছর। বারী সিদ্দিকীর দুটি কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়েছিলো।
এর পাশাপাশি তিনি বহুমূত্র রোগেও ভুগছিলেন। গত ১৭ই নভেম্বর রাতে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। অচেতন অবস্থাতেই তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর তাকে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিলো। বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ই নভেম্বর বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি হয় তার। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।
সত্তরের দশকে বারী সিদ্দিকী জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল সংগীতের উপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হন এ শিল্পী। সে ধারাবাহিকতায় বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসংগীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে প-িত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। আর দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সঙ্গে ক্ল্যাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। অডিও অ্যালবামের পাশাপাশি বারী সিদ্দিকী আরো বেশকিছু চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করেছেন। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শুয়াচান পাখি’, ‘পূবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’, ‘একটা জিন্দা লাশ’, ‘মাটির দেহ’, ‘মাটির মালিকানা’, ‘মানুষ’, ‘মা’ প্রভৃতি।
[এমকে]