দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখা ও জনকল্যাণে ভবিষ্যতেও সেনাবাহিনী অবদান রাখবে : প্রধানমন্ত্রী

সাভার থেকে বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার দৃঢ় আশা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কাজে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেবা ও কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে সেনাসদস্যরা জনগণের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং সমগ্র জাতির আস্থা ও ভালবাসা অর্জন করেছে। দেশের জনকল্যাণমূলক কাজে ভবিষ্যতেও সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার সাভার সেনানিবাসে মিলিটারি পুলিশ কোরের (সিএমপি) বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলন ২০১৭, কোর পুনর্মিলনী এবং সিএমপি সেন্টার এন্ড স্কুলকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্রমধারায় আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের গ-ি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে একটি সুশৃঙ্খল ও আধুনিক সেনাবাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, আধুনিকায়ন ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এবং সেনাসদস্যদের আরও নিষ্ঠার সাথে দেশমাতৃকার কাজে উদ্বুদ্ধ করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত আমাদের সেনাবাহিনী দেশের আস্থা ও গর্বের প্রতীক। দেশপ্রেমিক ও পেশাদার এই বাহিনী দেশের ভূখ- ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের যেকোন প্রয়োজনে সর্বদাই সর্বোচ্চ আস্থা ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে নিজেদের নিবেদিত করে।

প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক এবং জিওসি অব আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ তাকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রীকে সুসজ্জিত একটি সেনাদল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, কর্নেল কমান্ড্যান্ট অব দ্য সিএমপি এন্ড স্কুল মেজর জেনারেল মিয়া মুহম্মদ জয়নুল আবেদীন, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিক, উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সিএমপি’র কর্মরত কর্মকর্তা ও অবসরে থাকা কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুল আজিজের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন এ সময় তিনি নবনির্মিত সিএমপি সেন্টার এবং স্কুল কমপ্লেক্সেরও উদ্বোধন করেন।

সিএমপি সেন্টার এন্ড স্কুলের আধুনিকায়নেও তার সরকার গুরুত্ব প্রদান করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক সুবিধা সম্বলিত আধুনিক এই কমপ্লেক্স নির্মাণ করে দিয়েছি।

নতুন দু’টি এমপি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, সকল এমপি ইউনিটের অধিনায়কের র‌্যাংক মেজর হতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ উন্নয়ন এবং আধুনিক সরঞ্জাম ও যানবাহন দ্বারা এমপি ইউনিটসমূহকে সুসজ্জিত করা হয়েছে, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা দৃঢ় আশা প্রকাশ করে বলেন, নবনির্মিত এই সিএমপি কমপ্লেক্স ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে আরও সফলতা অর্জন করবে, এমনকি বহির্বিশ্বেও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে।

তিনি বলেন, মিলিটারি পুলিশ কোর সেনাবাহিনীতে সামরিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করার ব্রত নিয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সেইসাথে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর মিলিটারি পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী ও বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহের সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিষ্ঠান বন্ধুপ্রতিম দেশের অফিসারসহ বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, কোস্ট গার্ড এবং বিজিবি, আনসার ও কারা অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্যদের সফলভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।

‘ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রাপ্তির মাধ্যমে যে বিরল স্বীকৃতি ও গৌরব আজ আপনারা অর্জন করলেন, তা ভবিষ্যতে নিষ্ঠা ও উদ্দীপনার সাথে কাজ করার প্রেরণা যোগাবে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ এখন একটি ‘ব্র্যান্ড নেম’ যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনছে সম্মান ও মর্যাদা।

সরকার প্রধান বলেন, সিলেট এবং কক্সবাজার জেলার রামুতে পদাতিক ডিভিশন গঠন করা হয়েছে। বরিশাল জেলার লেবুখালিতে আরও ১টি পদাতিক ডিভিশন গঠনের কাজ শিগগিরই শেষ হবে।

মিয়ানমারের শরণার্থীদের সহযোগিতা প্রদানে সশ্রবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের মানবিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। জোরপƒর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের সব ধরণের সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা বহুল প্রশংসিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিকভাবে এই সমস্যার একটি কূটনৈতিক সমাধান এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি আনতে সাহায্য করবে।

কুচকাওয়াজ শেষে প্রধানমন্ত্রী মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন।

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।