ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:ঢাকা: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি উদযাপন উপলক্ষে আগামী কাল শনিবার বেলা ১২টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে শুরু হবে শোভাযাত্রা এবং বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আগামী কাল (শনিবার) ২৫ নভেম্বর দেশব্যাপী আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদফতর, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের সদস্যরা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মনে করি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া জাতির জন্য তথা এর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য একটি বিরাট অর্জন। বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে এর অন্তর্ভুক্তির মানে হচ্ছে চিরস্থায়ী বিশ্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা’।
তিনি বলেন, এই বিরাট অর্জন উদযাপনের লক্ষ্যে আগামি ২৫ নভেম্বর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের তথা সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনসমূহের অংশগ্রহণে দেশব্যাপী আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
মুখ্যসচিব বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে, বিশেষত শিক্ষার্থীদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অবহিত করার লক্ষ্যে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারের এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এই উদযাপন শুধুমাত্র উৎসবেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটা হবে সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচি, যাতে শিক্ষার্থীরা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারে।
এই স্বীকৃতিকে বাঙ্গালী জাতি ও বাংলা ভাষার জন্য বিশাল গৌরব হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাইকে, বিশেষত শিক্ষার্থীদের, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানা উচিত।
কামাল আবদুল নাসের বলেন, তাদের জানা উচিত ‘মেমোরি অব ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রার’ কি এবং বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য কি।
তিনি আরও বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করার লক্ষ্যে আমরা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ক্লাস নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছি’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে উল্লেখ করে মুখ্যসচিব বলেন, জাতির গৌরব এই ভাষণটি প্রদর্শনের জন্য সকল পাবলিক লাইব্রেরিতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি রাখা হবে।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের উপর কুইজ ও সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার মত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে’।
মুখ্য সচিব বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে দেশজুড়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কনসার্টের আয়োজন করা হবে।
তিনি বলেন, ভাষণটি বিভিন্ন ভাষায় সম্প্রচার করা হবে যাতে বিশ্ববাসী এর সম্পর্কে জানতে পারে। এ কাজে আমরা বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে উৎসাহিত করব।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর ইউনাইটেড নেশন এডুকেশন, সায়েন্টিফিক এন্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেস্কো) ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে (ওয়াল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) বিশ্বে প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। প্যারিসে ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক ইরিনা বুকোভা এই ঘোষণা দেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্বের আন্তর্জাতিক রেজিস্ট্রার স্মৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি ইউনেস্কো কর্তৃক তৈরি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্যের একটি তালিকা।
এটি বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত তাৎপর্যপূর্ণ প্রামাণ্য দলিল সমূহের আন্তর্জাতিকভাবে রেজিস্ট্রার্ড একটি তালিকা। আন্তর্জাতিকভাবে রেজিস্ট্রাকৃত এই তালিকা তৈরির উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঐতিহ্যগত প্রামাণ্য দলিলসমূহের সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা।
ইন্টারন্যাশনাল এডভাইজারি কমিটি (আইএসি) কোনো প্রামাণ্য দলিল বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে রেজিস্ট্রার হবে কিনা বা যোগ্য কিনা তা বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে। এই কমিটি এবছর ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর আয়োজিত সংগঠনটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে বিশ্বে আন্তর্জাতিক রেজিস্ট্রার্ড মেমোরি হিসেবে মনোনীত করে।
বর্তমানে ম্যামোরি অফ ওয়াল্ড রেজিস্ট্রারে সব মহাদেশগুলো থেকে ৪২৭টি প্রামাণ্য দলিল ও সংগ্রহ তালিকাভুক্ত রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভাষণটি স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রস্তুতির দিকে ঝুঁকে পড়তেও উৎসাহিত করে। এটি মুক্তিবাহিনীতে যোগদানকারী মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণের অন্যতম প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেশের বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান চলাকালে প্রচারে বাঙালী জাতির হৃদয় ও মনকে উৎসাহিত করে। এই ভাষণ এদেশের মানুষকে এবং পরবর্তী প্রজন্মগুলোকে অনুপ্রাণিত করছে।