মিশরের সিনাই প্রদেশের আল রাওদাহ মসজিদে শুক্রবার বোমা হামলা ও গুলির সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের অনেকেই বিমান হামলায় নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র তামের রিফাই এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরা।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিফাই বলেন, মিশরের বিমান বাহিনী ওই সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্ত করে এবং তাদের বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে সন্দেহভাজনরা নিহত হয়।
এর আগে হামলাকারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কঠোর জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি।
শুক্রবারের ওই হামলায় অন্তত ২৩৫ জন নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। আহতের সংখ্যাও শতাধিক।
জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস ) ওই হামলার দায় স্বীকার না করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিনাইয়ে আইএস সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা বাড়ায় ঘটনার জন্য তাদেরই সন্দেহ করা হচ্ছে।
২০১৫ সালে রাশিয়ার একটি বিমান ধ্বংস করে ২২৪ জনকে হত্যার ঘটনাতেও আইএসপন্থি জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে সন্দেহ করা হয়।
কায়রো থেকে ১৩০ মাইল দূরে বির আল আবেদ শহরের মসজিদে ভয়াবহ ওই বোমা হামলার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মিশরের সেনাবাহিনী আইএসের বেশ কয়েকটি অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়।
সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, জঙ্গি গোষ্ঠীটির মজুদ করা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ ধ্বংস করা হয়েছে। মসজিদে হামলায় ব্যবহৃত কয়েকটি গাড়ি চিহ্নিত করে সেগুলোর ওপরও বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি মুখপাত্রের।
কয়েক দশকের মধ্যে প্রাণঘাতী এ হামলার পর মিশরে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে দেশটির প্রেসিডেন্ট ফাত্তাহ আল সিসি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কায়রোর লড়াই থামিয়ে দিতেই জঙ্গিরা মসজিদে বোমা হামলা ও গুলি চালিয়েছে। সর্বশক্তি দিয়ে আমরা নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করব।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদভ, আরব লিগ প্রধান আহমেদ আবদুল গেইতের পাশাপাশি ইরান, ফ্রান্স, ইসরায়েল ও সৌদি আরব এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সেনাবাহিনী মুসলিম ব্রাদারহুডের মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই মিশরে জঙ্গি হামলার মাত্রা বেড়ে গেছে। একের পর এক জঙ্গি হামলায় শত শত পুলিশ, সেনা সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হচ্ছেন।
এসব ঘটনার জন্যই আইএসসংশ্লিষ্ট সিনাই উপত্যকার জঙ্গি গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি হামলার লক্ষ্য ছিল মিশরের কপটিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় স্থাপনা।
স্থানীয়রা বলছেন, আল রাওদা মসজিদে সুফিবাদীরা নিয়মিত নামাজ পড়তে আসেন। আর আইএসসহ বিভিন্ন জিহাদি গ্রুপ সুফিবাদের বিরুদ্ধে।