ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হলেও কবে নাগাদ শেষ হবে তা নির্দিষ্ট করে দেয়া সম্ভব না। এতে কোনো লাভও নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। আর এ লক্ষ্য অর্জনে পুরো পৃথিবী বাংলাদেশের সাথে আছে। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সম্মত হয়েছে ।
মিয়ানমার থেকে ফিরে আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর গত বৃহষ্পতিবার মিয়ানমারে রাজধানী নেইপিডোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সমঝোতা স্মারক(এমওইউ) সই হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এতে স্বাক্ষর করেন।
স্বাক্ষরিত এমওইউ’র আইনি বাধ্যবাধকতা আছে কিনা – প্রশ্ন করা হলে মাহমুদ আলী বলেন, অবশ্যই আছে। তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কোনো রাষ্ট্র তা অনুসরন করছে কি না। সিরিয়া ও ইরাকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বহু চুক্তি সই হয়েছে। কিন্তু তা অনুসরন করা হয়নি বলে দেশ দুটি আজ ধ্বংসের মুখে। তাই আইনই সব নয়।
তিনি বলেন, একটি যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবে। দু’পক্ষই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহায়তা নিতে সম্মত হয়েছে।
মিয়ানমার প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত সময়ে ইউএনএইচসিআরকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করবে। চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন ও পুর্নবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঙ্ঘের সংস্থাসমূহ ও আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
‘উপযুক্ত সময়’ একটি বায়ুবীয় শব্দ কিনা – প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। তিনি বলেন, এমওইউ অনুযায়ী মিয়ানমার ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পরে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত রাখাইন রাজ্যের অধিবাসীদের ফেরত নিবে। এই চুক্তির অধীনে আলোচ্য সময়ের মধ্যে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পর এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত রাখাইন রাজ্যের অধিবাসীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এমওইউ স্বাক্ষরের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ লক্ষ্যে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং টার্মস অব রেফারেন্স চুড়ান্ত করা হবে। মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি সই হবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এই চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রত্যাবাসনকারীদের রাখাইন রাজ্যে তাদের আগের আবাসস্থল বা পছন্দ অনুযায়ী কাছাকাছি কোন স্থানে পুনর্বাসিত করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে সীমিত সময়ের জন্য রাখা হবে। ভারত ও চীন প্রত্যাবাসনকারীদের জন্য প্রিফেব্রিকেটেট (আগে থেকে অর্ধেক তৈরী করা) বাসা নির্মাণ করে দিতে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার দুই দেশকে এই ধরনের বাসা নির্মাণ করে দেয়ার ব্যাপারে রাজি হয়েছে।