নাজমুল আলম মুন্না,সাতক্ষীরা।দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা এখনও বন্ধ হয়নি । কমেনি নারী ও শিশু নির্যাতন এবং হত্যা। সীমান্ত হত্যা হ্রাস পেলেও কমেনি সীমান্ত অপরাধ। দেশে মানবাধিকার কর্মী হত্যার ঘটনা ঘটছে। এমনকি গনমাধ্যমকর্মীদের ওপরও হামলার ঘটনাও ঘটছে সচরাচর।
জাতিসংঘে প্রেরিত ইউপিআর (ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ) রিপোর্ট ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরেন আয়োজকরা। তারা বলেন সামাজিক অপরাধ প্রবণতার সংখ্যায় হ্রাস বৃদ্ধি ঘটলেও রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে পারিবারিক সহিংসতাও বেড়ে চলেছে।
সাতক্ষীরার স্থানীয় একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় আইন ও সালিশকেন্দ্র (আসক) আয়োজিত মানবাধিকার বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশের এই চিত্র তুলে ধরা হয়।
এতে আরও বলা হয় অপরাধীর মৃত্যুদন্ডের বিধান বাতিল করার সুপারিশ থাকলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। সরকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের বহু সুপারিশ পুরোপুরি গ্রহন করেছে । ১৯৬ টি সুপারিশের মধ্যে ১৬৪ টি পুরোপুরি গ্রহন করেছে সরকার। সরকার আংশিক সুপারিশ গ্রহন করেছে ২৭ টি এবং পাঁচটি সুপারিশে সরকার একমত হতে পারেনি।
সাতক্ষীরার বেসরকারি সংস্থা স্বদেশ পরিচালক মাধব দত্তের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তদন্ত কর্মকর্তা ফয়জুল কবির ফরিদ ও সুবর্না ধর। এছাড়া সুশীল সমাজের পক্ষে শিক্ষকতা সাংবাদিকতা রাজনীতি ও আইন পেশায় জড়িত অধ্যক্ষ আবদুল হামিদ, অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, কাজী রিয়াজ, ওবায়দুস সুলতান বাবলু , বিশ্বনাথ ঘোষ, সুভাষ চৌধুরী , কল্যাণ ব্যানার্জি , এম কামরুজ্জামান , সুধাংশু শেখর সরকার , জোসনা দত্ত , মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, ড. দিলীপ কুমার দেব, রঘুনাথ খাঁ, নাজমুল আলম মুন্না প্রমুখ।
লিখিত তথ্য উপস্থাপন করে আয়োজকরা আরও বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দেশে ৮২৩ জন বিচার বহির্ভুত হত্যার শিকার হয়েছেন। এ সময় গুম অথবা অন্তর্ধানের ঘটনা ঘটেছে ৩৪৭ টি। দেশের কারাগারে ধারন ক্ষমতা অপেক্ষা দ্বিগুন বন্দী থাকছে উল্লেখ করে পরিসংখ্যানে বলা হয় তাদের সার্বিক অধিকার এখনও নিশ্চিত হয়নি। এ ছাড়া ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত সীমান্তে ১৪৭ টি হত্যার ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয়েছেন ২৭৮ জন। বর্তমানে তা প্রায় শুন্যের কোঠায়। এই সময়ের মধ্যে ১০২৩ টি শিশু হত্যার তথ্য তুলে ধরে তারা আরও বলেন ধর্ষনের শিকার হয়েছে ১২৪৮ টি শিশু। সড়ক নিরাপত্তা এখনও নিশ্চিত হয়নি উল্লেখ করে বলা হয় ২০১৬ সালে সংঘটিত ২৯৯৮ টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৩৪১২ জনের। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৮৪৭২ জন। ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১৪ জন ব্লগার ও মানবাধিকার কর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৬ সালে গনমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে ১১৭ টি। দেশের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশার উল্লেখ করে তারা বলেন মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে । তবে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি পায়নি। শিল্প দুর্ঘটনায় ১৩২৯ জন নিহত হয়েছেন এবং ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে ১০২৬ জনের। মত বিনিময় সভায় আরও বলা হয় সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির ফলে ৭২ হাজার শিশু শিশু শ্রম থেকে সরে এসেছে ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর আয়োজনে এবং স্বদেশ সাতক্ষীরার সহযোগিতায় রবিবার সকাল ১০ টায় চায়না বাংলা শপিং কমপ্লেক্স মিলনায়তনে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জাতিসংঘে প্রেরিত ইউপিআর স্টেকহোল্ডার প্রতিবেদনের ওপর এক মতবিনিময় সভা স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়।