ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভে নেমেছে দেশটির কট্টর ইসলামপন্থিরা। গতকাল রোববার সহিংসতা ইসলামাবাদের বাইরে অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। আগের দিন আইনমন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে তারা। এতে নিহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। আহত হয়েছে পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাসহ ২৫০ জনের বেশি। আটক করা হয় দেড় শতাধিক কট্টরপন্থিকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। খবর বিবিসির।
শনিবার ইসলামাবাদে প্রবেশের মূল সড়ক অবরোধ করে আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে ইসলামপন্থি উগ্র সংগঠন তেহরিক-ই-লাবাইকের প্রায় দুই হাজার কর্মী। তারা আগেই আলটিমেটাম দিয়েছিল, এ দিন সকাল ৭টার মধ্যে মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু তাদের দাবি পূরণ হয়নি। এর পর সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সরকার কঠোর অবস্থানে যায়। ফয়জাবাদ থেকে এই উগ্রবাদীদের অপসারণে অভিযান চালায় পুলিশ। তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় উগ্রপন্থিদের। তারা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেলের বৃষ্টি ঝরাতে থাকে। এতে কয়েকজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা ও নয় পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। একপর্যায়ে পুলিশও কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকে। আধা-সামরিক বাহিনীর প্রায় সাড়ে আট হাজার সদস্যও এ অভিযানে অংশ নেয়।
সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ দিন সন্ধ্যায় রাজধানী ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে পাকিস্তান সরকার। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিচার বিভাগের প্রধান কার্যালয়, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, দূতাবাসসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ও স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তেহরিক-ই-লাবাইকের নেতাকর্মীরা অবশ্য তিন সপ্তাহ ধরেই ইসলামাবাদের মূল প্রবেশদ্বার ফয়জাবাদে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনী শপথ থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কথা বাদ দিয়ে আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদ ধর্ম অবমাননা (ব্লাসফেমি) করেছেন। নির্বাচনী শপথের একটি অংশে নবীর নামের উল্লেখ বাদ পড়ায় ক্ষমা প্রার্থনাও করেছিলেন জাহিদ হামিদ। তার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এটি করণিক ভুল। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওই ধারা বাতিল করে সংশোধন করা হবে। তবে সরকারের এ ঘোষণা তাদের মন গলাতে পারেনি। তারা হামিদের পদত্যাগ ও বিচারের দাবি তোলে। সংঘর্ষের ঘটনা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার করতে থাকে। সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় সরকার টেলিভিশন চ্যানেল ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকালও এসব প্রচারমাধ্যম বন্ধ রাখা হয়। তারপরও ইসলামাবাদে সৃষ্ট এ সংঘর্ষ করাচি, লাহোর, গুজরাট, ফয়সালাবাদ, পেশোয়ারসহ বড় বড় শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে সন্ধ্যার পর সরকার কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসে বলে জানা যায়। একটি সূত্র জানায়, আইনমন্ত্রী পদত্যাগ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এটি সত্য কি-না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে কট্টরপন্থিরা আইনমন্ত্রীর নিজ জেলা শিয়ালকোট শহর ও তার বাড়িতে হামলা চালায়। তবে এ সময় তার পরিবারের কেউ বাড়িতে ছিলেন না।