ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ঐক্য সৃষ্টি করে আন্দোলনের মুখেই নির্বাচনে যেতে হবে। সেই নির্বাচনে আমাদেরকে জয়লাভ করতে হবে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বলতে চাই, বিএনপি ধ্বংসস্তুপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠে। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, দেশপ্রেম, স্বাধীন থাকবার যে আগ্রহ-আকাঙ্খা তাকে কোনোদিন দাবিয়ে রাখা যাবে না। আমাদেরকে সবার আগে যেটা করতে হবে, ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে, সংগঠন গড়ে তুলতে হবে এবং আন্দোলনের মুখেই নির্বাচনে যেতে হবে এবং সেখানেই আমাদের জয়লাভ করতে হবে।
রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে এই আলোচনায় সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের সংগঠনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার তাগিদ দিয়ে বলেন, আজ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে যত যুদ্ধ জয় সম্ভব হয়েছে, যত আন্দোলন-সংগ্রাম সফল হয়েছে এসব কিছুর পেছনে ছিলো একটা ডিসিপিলিন ফোর্স। যদি শৃঙ্খলাবদ্ধ না হন, তাহলে কোনো আন্দোলনে বিজয় অর্জন করা যাবে না। আমি বলতে চাই, আপনাদের সংগঠন তৈরি করতে হবে, ঘরে ঘরে মানুষের কাছে গিয়ে বলতে হবে কোথায় অন্যায়টা হচ্ছে, কেনো আমরা এই কথা বলছি, কেনো এই সরকার জনগণের অজনপ্রিয় সরকার- এসব মানুষকে বলতে হবে। আজকে ৬০/৭০ টাকা চালের দাম, প্রতিটি দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ুন গ্রামে গ্রামে, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, মানুষকে সরকারের অন্যায়গুলো বলুন।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্মমহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদসহ মহানগর উত্তরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর উত্তরের সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু।
একাদশ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন, ডুগডুগি বাজাবেন, আর সবকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। করে আবার নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাবেন- এই স্বপ্ন দেখছেন আপনারা। আপনারা তো ২০৪১ সাল পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে ফেলেছেন। আমরা বলতে চাই, এই সংসদ রেখে কোনো মতেই নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এই সরকারকে রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেন, সহায়ক সরকার বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলেন-মূল কথা হচ্ছে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে যারা নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করবে।
বিএনপি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যে উদ্ধৃতি দিয়ে তাকে কিছুটা বাস্তবাদী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতি এতো সহজে এদেশ থেকে দূর করা যাবে না।
হাসানুল হক ইনু সাহেব প্রায়ই বলেন যে, বিএনপির রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। হানিফ সাহেব বলেন, বিএনপিকে রাজনীতি করতে দেয়া যাবে না। অবশ্য ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেন যে, বিএনপিকে অস্বীকার করা যাবে না। এর পেছনে এখনো বহু লোক আছে। কিছুটা বাস্তববাদী এই কারণে তিনি সেই কথা বলেন। আমি কোনো ব্যক্তি নিয়ে কথা বলতে চাই না, কারণ এটা আমার অভ্যাস নয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭২-৭৫ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলের ইতিহাস জনগণ ভুলে যাবে না।
তিনি বলেন, ইতিহাসের কথা বলেন আপনারা। ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত এদেশে কী করেছেন এটা সবাই জানে। ওই বইগুলো পড়ে দেখুন, বইগুলো সরিয়ে ফেলেছেন আপনারা। তখনো আজকের মতো অবস্থা ছিলো, রাস্তার ধারে গুলিবিদ্ধ ডেডবডি পড়ে থাকতো। তখন আজকের মতোই গুম হয়ে যেতো কেউ খবর দিতে পারতো না। কমিউনিস্ট পার্টির শান্তিসেন, তার স্ত্রী, তার ভাইয়ের বউকে ওই রক্ষী বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়েছিলো, সারা রাত পানি মধ্যে, ঠাণ্ডার মধ্যে চুবিয়ে রেখেছিলো এবং ২১ দিন নির্মম নির্যাতন করেছিলো। সিরাজ সিকদার ভিন্নমত পোষণ করতেন বলে তাকে গ্রেফতার করে পেছন দিক থেকে গুলি করে বললেন যে, ক্রসফায়ার। এরকম হাজার হাজার ভিন্নমতের মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছে সেই ইতিহাস আমরা ভুলে যাইনি, জনগণ ভুলে যাবে না। আজ আবারো মানুষ সেই দোয়া করতে শুরু করছে। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করতেই সরকার তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজার দেয়ার চক্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বয়াতি ওবায়দুল কাদের সাহেব। প্রতিদিন তিনি কোনো না কোনো গান গাচ্ছেন। উদ্ভট, অদ্ভুত গান গেয়ে যাচ্ছেন। মানুষ শুনছে কি শুনছে না সেদিকে তার খেয়াল নেই। তিনি বলেছেন, বিএনপি গভীর খাদের কিনারে। আমি বলতে চাই, আপনারা কী বিশাল ফুল বাগানের কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন নাকি। মানে ধাক্কা খেয়ে পড়লে পরে ওই কিনার থেকে হাসনা হেনা, চামেলী, গোলাপ, বেলী, চন্দ্র মল্লিকার মধ্যে পড়ে যাবেন। আপনারা এমন একটি কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন, শুধু ছোট্ট একটা ধাক্কা খেলেই সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনের মধ্যে পড়ে যাবেন- এটা মনে রাখবেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। এখন চোরাবালির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। ডাল ভেঙে যখন পা-হাতটা ছুটে যাবে তখন একেবারে অতলে চলে যাবেন।