পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ইসলামপন্থীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদ।
সোমবার পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পিটিভির খবরে আইনমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা জানানো হয়েছে।
রোববার রাতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকারের সমঝোতার অংশ হিসেবে তিনি পদত্যাগ করেন বলে জানিয়েছে ডন অনলাইন
পিটিভির ভাষ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রকে সংকট থেকে বের করতে আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদ প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
পদত্যাগী আইনমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে সরকারি সূত্রগুলো জানায়, আমি ব্যক্তিগতভাবে এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এদিকে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার অংশ হিসেবে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবেন বিক্ষোভকারীরা।
সোমবার সকালে ফায়জাবাদে বিক্ষোভকারীদের জিনিসপত্র গুটিয়ে ফেলতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে পুলিশকেও অবরোধে অপসারণ করতে দেখা গেছে। তবে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার আগে সড়ক খুলে দেবেন না তারা।
উল্লেখ্য, হযরত মুহাম্মদ (সা.) শেষ নবী বা খতমে নবুয়ত মানার বিষয়ে পাকিস্তানের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী অঙ্গীকার করতে হয়। সম্প্রতি সংশোধিত ‘নির্বাচনী আইন-২০১৭’ থেকে এ বিষয়টি বাদ পড়ে।
এ নিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্টসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে খতমে নবুয়তের বিষয়ে অঙ্গীকারের বিষয়টি ভুলক্রমে বাদ পড়েছে জানিয়ে এটি পুনর্বহাল করে পার্লামেন্ট।
কিন্তু আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদকে এই ভুলের জন্য দায়ী করে তার পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের ফয়জাবাদের প্রধান সড়ক অবরোধ করে তিন সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তেহরিকে খতমে নবুয়ত, তেহরিকে লাব্বাইক ইয়া রাসুলুল্লাহ এবং সুন্নি তেহরিক পাকিস্তান।
শনিবার সকালে হঠাৎ করেই বিক্ষোভকারীদের জোর করে অপসারণের চেষ্টা করে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী। এ সময় উভয়পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৬ জন নিহত এবং প্রায় ২৫০ জন আহত হয়েছেন।
এর পর রোববারও ইসলামাবাদের রাস্তায় দফায় দফায় অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েনের কথা বলে পাকিস্তান সরকার। তবে আরব আমিরাত সফররত সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া শক্তি প্রয়োগ না করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান।
পরে সেনাদের শুধু বিচার বিভাগের প্রধান কার্যালয়, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, দূতাবাসসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।
বিশেষ করে রোববার রাস্তায় সেনাসদস্যদের উপস্থিতি খুব একটা ছিল না। ছিল না কোনো সাঁজোয়া যান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পরও রাজপথে সেনাদের নীরব পদক্ষেপের কারণে রহস্য দানা বাধে।
এদিকে আরব আমিরাত থেকে ফিরে দেশটির সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া, প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসির সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান নাভিদ মুখতারও উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে সেনা ব্যবহারের বিরুদ্ধে সম্মত হন নেতারা। এর পর বিক্ষোভকারী দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বসে আইনমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে সমঝোতা হয়।